ব্রেকিং নিউজ
Home - সারাবিশ্ব - মিনা ট্রাজেডি: নিহতের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে, দায়ী রাজপুত্রের গাড়িবহর

মিনা ট্রাজেডি: নিহতের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে, দায়ী রাজপুত্রের গাড়িবহর

পবিত্র মক্কার মিনায় ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন ১৫০০ জনেরও বেশি এবং আহত হয়েছেন ১৫০০ জনেরও বেশি। সৌদি বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে ইরানের আলমানার টেলিভিশনের ওয়েব সাইট এই খবর দিয়েছে।
সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী মিনার বিপর্যয়ে ৭১৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছে আরও বেশি। এর আগে অবশ্য ইরানের হজ সংস্থা নিহতের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৩১ জন ইরানি। আহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় হজের শেষ প্রধান আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মারার সময় প্রচণ্ড ভিড়ে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। সড়ক নম্বর ২০৪ ও ২২৩ দিয়ে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী আসতে থাকলে এই মহা-বিপর্যয় ঘটে বলে দুর্যোগ বিষয়ক সৌদি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। সৌদি যুবরাজ নায়েফ এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কোনো কোনো সূত্র বলেছে, সৌদি রাজার ছেলের গাড়ি বহর মিনা শহরের কেন্দ্রস্থলে আসায় তীব্র ভিড় দেখা দেয়া এবং মূলত এ কারণেই পদপিষ্ট হয়ে হজযাত্রীদের মৃত্যু ঘটেছে। লেবাননের আরবি দৈনিক আদদিয়ার লিখেছে, শাহজাদা মুহাম্মাদ বিন সালমানের গাড়ি বহরই প্রাণঘাতী এই বিপর্যয় সৃষ্টির মূল কারণ। তার বিপুল গাড়ি বহর ও নিরাপত্তা প্রহরা মিনার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। শাহজাদার সঙ্গে ছিল ২০০ সেনা ও ১৫০ পুলিশ কর্মকর্তা।
সৌদি সরকার এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য হজের সময় মিনায় সালমানের সফর বা তার উপস্থিতি সংক্রান্ত খবর প্রচার নিষিদ্ধ করেছে বলে লেবাননি দৈনিকটি উল্লেখ করেছে। কিন্তু সৌদি আরবের সরকারি কর্মকর্তারা সালমানের উপস্থিতির কারণে মিনা ট্র্যাজেডি ঘটার খবরকে ‘সঠিক নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই বিপর্যয়ের জন্য হজযাত্রীরাই দায়ী বলে দাবি করেছেন। তাদের একজন বলেছেন, হজযাত্রীরা দিক-নির্দেশনা মেনে চললে এ দুর্ঘটনা হয়ত এড়ানো যেত।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তারা বলেছেন, হজযাত্রীরা যেসব সড়ক দিয়ে এসে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মেরে ওই এলাকা থেকে চলে যান সেইসব সড়ক দিয়ে হঠাৎ সেইসব সড়কের মধ্যে দু’টি সড়ক বন্ধ থাকায় ভিড় এড়াতে বা পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন হজযাত্রীরা। এ ছাড়াও পাথর মারতে আসা হজযাত্রীদের একমুখী চলাচলের একটি সড়ককে হঠাৎ দ্বিমুখী করা হয় বলে অভিযোগ শোনা গেছে। ইরান এই দ‍ুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে এবং দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। সৌদি সরকারের হজ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে প্রায়ই হজের সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।
মাত্র প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মসজিদুল হারামে একটি ক্রেন ভেঙ্গে পড়ার ঘটনায় প্রায় ১২০ জন হজযাত্রী নিহত হয়েছে। মিনায় পদপিষ্ট হয়ে হজযাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ২০০৬ সালেও। এ অবস্থায় পবিত্র হজের মত একটি আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব-সমাবেশ আন্তর্জাতিক তথা বহুজাতিক ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা এফএনএ মিনায় পদদলিত হয়ে হাজিদের নির্মম মৃত্যুর জন্য সৌদি যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বহরকে দায়ি করেছে । তবে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে হাজিদের দু’টি দল ছোট একটি স্থানে হঠাৎ জড়ো হওয়ায় এ ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থাটি বলছে, যুবরাজের বিশাল নিরাপত্তা বহরে সেনা ও পুলিশসহ সাড়ে ৩শ’র বেশি নিরাপত্তাকর্মী ছিলো। যারা শয়তানের দিকে পাথর মারতে যাওয়া হাজিদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা করে যুবরাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের ধাক্কাধাক্কিতেই হাজিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, যুবরাজের সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য পাথর ছুঁড়তে যাওয়ার ৫টি পথের মধ্যে দুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে অন্য পথগুলোতে ভিড় বেড়ে যায়। দুর্ঘটনার দায় সৌদি যুবরাজের বলেই সৌদি শাসক নিজেকে এই ইস্যু থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি করে এফএনএ। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭শ’ ১৭ জন বলা হলেও এফএনএ বলছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১৩শ’র বেশি।
ইরানের হজ সংস্থা ওহাদিও দাবি করেছে, পাথর ছোঁড়ার স্থানটিতে যাওয়ার ৫টি রাস্তার মধ্যে ২টি বন্ধ ছিলো আর সে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিযোগ করে বলেছেন, হাজিরা সময়সূচি মেনে চলেননি বলেই পদদলিতের ঘটনা ঘটেছে। সৌদি সরকার হাজিদের ওপর দায় চাপালেও এর বিরোধিতা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার জন্য সৌদি সরকারের অব্যবস্থাপনা ও ভুল পদক্ষেপই দায়ী। আর তাই, সৌদি সরকারকে দুর্ঘটনার দায় অবশ্যই নিতে হবে।
খামেনির মতোই সৌদি বাদশাহ সালমান আল সৌদও সরকারের অব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ টেনেছেন। বাদশাহ্’র মতে, হজ আয়োজন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো উন্নতি করা প্রয়োজন। দুর্ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সৌদি হজ কমিটির চেয়ারম্যান প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। তদন্তের রিপোর্ট পেশ করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বাদশাহ সালমান।

Leave a Reply

x

Check Also

২১ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি ৮ ফাল্গুন লেখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আজকের মঠবাড়িয়া ডেস্ক <> বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি নথিপত্র, আমন্ত্রণপত্রসহ সব ক্ষেত্রে ২১ ফেব্রুয়ারি লেখার ...