Review Overview

প্রবাস জীবনে সৌদি আরবের বেশ কিছু শহর ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু তায়েফ শহরের প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ আমি অন্য কোন শহরের প্রতি এমনটি হয়নি!
তায়েফকে বলা হয়, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি। চমৎকার সাজানো-গোছানো শহর। শহড়জুড়ে রয়েছে নানা ভাস্কর্য।ইতিহাসের পাতায় তায়েফ নানা কারণে আলোচিত। এই তায়েফের বনি সাকিফ গোত্রে নবী করিম (সা.) দুধমাতা হজরত হালিমা সাদিয়ার ঘরে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। আবার নবুওয়ত প্রাপ্তির পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে তায়েফ এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণের পরিবতে নবীকে অত্যাচার ও নিগ্রহ করেছে। ইসলাম প্রচার করতে এসে হজরত রাসূলুল্লাহ তায়েফে প্রায় ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর ফিরে গেছেন তায়েফবাসীর নানা নির্যাতন সহ্য করে।বাদশা ফয়সাল ও বাদশা খালেদের আমলে শীতকালীন রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হতো। বাদশা খালেদের আমলে এখানে ইসলামি শীষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।রবিশস্য ও নানান ফল-ফলাদির জন্য তায়েফ বিখ্যাত। তায়েফে উৎপন্ন আঙ্গুর, কমলা, আনার ইত্যাদি অতি দামী ফলফলাদি মিষ্টি ও পুষ্টিতে ভরপুর। বিশেষ করে তায়েফের আঙ্গুর বিখ্যাত। এছাড়া তায়েফে উৎপাদিত সবজি সৌদি আরবের চাহিদার প্রায় ৩০ ভাগ পূরণ করে।তায়েফের প্রধান মসজিদকে ইবনে আব্বাস মসজিদ বলা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কবর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে। এ কবরস্থানে আরও অনেক সাহাবির কবর রয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি আছে। সেটা অবশ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে সেখানে প্রাচীন অনেক কিতাবের সংগ্রহ আছে।
সৌদি সরকার তাদের বিশাল দেশে আকাশ যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগে ধারণাতীত উন্নতি লাভ করেছে। ফলে তায়েফের সঙ্গে পবিত্র মক্কা জেদ্দা ও রিয়াদসহ একাধিক দিক দিয়ে উন্নত সড়ক যোগাযোগ রয়েছে।পাহাড়ের ওপর একটি শহর। অথচ দেখে বুঝবার উপায় নেই, মনে হবে সমতলে গড়ে উঠেছে শহরটি। দুই তিনদিনে শরীরে চমৎকার স্নিগ্ধ বাতাসের ঝাপটা মনে করিয়ে দেয় প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ-শ্যামল রূপ আর ঝিরঝির বাতাসের কথা। আকাশ কতোটা নীল হতে পারে, কিংবা আকাশের আসল রূপ কোনটা- তা আমার জানা নেই। খুব বেশি ভ্রমণেরও অভিজ্ঞতা নেই, তার পরও আমার মনে হলো- সত্যিকারের নীল ও সবুজ দেখতে হলে তায়েফের আকাশ ও জমিন দেখতে হবে চারদিক পাহাড়ে ঘেরা। যে নয়নহারা দৃশ্য বারবার দেখলেও আবার দেখার সাধ জাগবে!
মেহেদী হাসান বাবু ফরাজী
প্রকাশক, আজকের মঠবাড়িয়া।