ব্রেকিং নিউজ
Home - অনির্বাচিত - লারকানা ষড়যন্ত্র

লারকানা ষড়যন্ত্র


১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের অবশিষ্ট ২ টি আসনের মধ্যে ময়মনসিংহের নান্দাইল আসনে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজা এিদীব রায় জয়লাভ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে ৮৩ টি আসন লাভ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন একটি দলের পক্ষে এত বেশী আসন লাভ করার নজির ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টাে ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ভুট্টাে ২০ ডিসেম্বর লাহোরে ঘোষণা করেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে না এবং তাঁর দলের সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হবে না কিংবা কেন্দ্রে কোন সরকার পরিচালিত হবেনা।তিনি আরো বলেন যে, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে এবং পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই সরকার গঠনে উভয় দলের অংশ থাকা উচিৎ।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টাের এ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,আওয়ামী লীগ সংবিধান প্রনয়নে এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে একাই যোগ্য। কেউ সাহায্য করলে ভালো, সাহায্য না করলেও আওয়ামী লীগ এককভাবে সেটা করবে।এরপর পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির পাকিস্তান টাইমস পএিকায় একটা নিবন্ধ লিখেন। নিবন্ধে তিনি চারটা প্রশ্ন তুলেন।১/ আওয়ামী লীগের ছয় দফা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডারের পরিপন্থী কি না? ২/ কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে আওয়ামী লীগের মেজরিটি আঞ্চলিক মেজরিটি কি না? ৩/ গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রনয়ণ করতে হলে শুধুমাএ পূর্ব পাকিস্তানের মেজরিটিতে তা করা যাবে কি না, না পা্ঁচটা প্রদেশ থেকেই মেজরিটির সমর্থন থাকতে হবে? ৪/ মাএ দুটো বিষয় নিয়ে কোন ফেডারেশন চলতে পারে কি? আওয়ামী লীগ যখন নিজেরাই কেন্দ্রীয় সরকার চালাতে যাছেন তখন তাঁরা এত দুর্বল কেন্দ্র চাচ্ছেন কেন?
পশ্চিম পাকিস্তানের দুরভিসন্দ্বি বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারী শপথ দিবস ঘোষণা করেন। এদিন বিকেলে তিনি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগের ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ২৬৮ জন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে আওয়ামী লীগের ৬ দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা বাস্তবায়নের শপথ পাঠ করান।সংসদীয় ইতিহাসে এ ধরনের শপথ বিরল ঘটনা। শপথ শেষে বঙ্গবন্ধু বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আমরা যে সংবিধান প্রনয়ণ করব তা পাকিস্তানের জনগণ গ্রহণ করবে। সংবিধান প্রনয়ণে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করলে চরম সংগ্রাম শুরু হবে।
৪ জানুয়ারী ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্রচন্ড চাপ দিলেন যে, ৩ জানুয়ারী তিনি যা বলেছেন, তার চেয়ে অধিক কিছু বলার জন্যে। বঙ্গবন্ধু ছাত্র নেতাদের বললেন,প্রয়োজন হলে তিনি ডাকবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র নেতাদের অপেক্ষা করতে বলেন।
লারকানা ষড়যন্ত্রঃ
১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসন লাভ করে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে ৮৩ টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসনের মধ্যে ময়মনসিংহের নান্দাইল আসনে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজা এিদীব রায় জয়লাভ করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন একটি দলের পক্ষে এত বেশী আসন লাভ করার নজির ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টাে ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ভুট্টাে ২০ ডিসেম্বর লাহোরে ঘোষণা করেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে না এবং তাঁর দলের সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হবে না কিংবা কেন্দ্রে কোন সরকার পরিচালিত হবেনা।তিনি আরো বলেন যে, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে এবং পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই সরকার গঠনে উভয় দলের অংশ থাকা উচিৎ।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টাের এ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,আওয়ামী লীগ সংবিধান প্রনয়নে এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে একাই যোগ্য। কেউ সাহায্য করলে ভালো, সাহায্য না করলেও আওয়ামী লীগ এককভাবে সেটা করবে।এরপর পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির পাকিস্তান টাইমস পএিকায় একটা নিবন্ধ লিখেন। নিবন্ধে তিনি চারটা প্রশ্ন তুলেন।১/ আওয়ামী লীগের ছয় দফা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডারের পরিপন্থী কি না? ২/ কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে আওয়ামী লীগের মেজরিটি আঞ্চলিক মেজরিটি কি না? ৩/ গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রনয়ণ করতে হলে শুধুমাএ পূর্ব পাকিস্তানের মেজরিটিতে তা করা যাবে কি না, না পা্ঁচটা প্রদেশ থেকেই মেজরিটির সমর্থন থাকতে হবে? ৪/ মাএ দুটো বিষয় নিয়ে কোন ফেডারেশন চলতে পারে কি? আওয়ামী লীগ যখন নিজেরাই কেন্দ্রীয় সরকার চালাতে যাছেন তখন তাঁরা এত দুর্বল কেন্দ্র চাচ্ছেন কেন?
পশ্চিম পাকিস্তানের দুরভিসন্দ্বি বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারী শপথ দিবস ঘোষণা করেন। এদিন বিকেলে তিনি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগের ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ২৬৮ জন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে আওয়ামী লীগের ৬ দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা বাস্তবায়নের শপথ পাঠ করান।সংসদীয় ইতিহাসে এ ধরনের শপথ বিরল ঘটনা। শপথ শেষে বঙ্গবন্ধু বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আমরা যে সংবিধান প্রনয়ণ করব তা পাকিস্তানের জনগণ গ্রহণ করবে। সংবিধান প্রনয়ণে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করলে চরম সংগ্রাম শুরু হবে।
৪ জানুয়ারী ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্রচন্ড চাপ দিলেন যে, ৩ জানুয়ারী তিনি যা বলেছেন, তার চেয়ে অধিক কিছু বলার জন্যে। বঙ্গবন্ধু ছাত্র নেতাদের বললেন,প্রয়োজন হলে তিনি ডাকবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র নেতাদের অপেক্ষা করতে বলেন।
চলমান
১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারী পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ১১ জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও জাতীয় সমস্যা নিয়ে দুই দিন বৈঠক করেন।জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকতে চাইলেন,কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু ১৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবান করতে অনুরোধে করেন।কিন্তু তিনি চুপ থাকেন।১৪ জানুয়ারী ঢাকা ত্যাগকালে তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধান মন্ত্রী ঘোষণা করে তাঁকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর ফাঁকা বুলিতে বিমোহিত হননি। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর নিকট থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর নিকট। ১৭ জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্হ কর্মকর্তাদের নিয়ে হাজির হন লারকানায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাড়িতে। ভুট্টো সেনাকর্মকর্তাদেরকে আশ্বাস দেন যে,আমি তোমাদের সাথে আছি। তোমরা আওয়ামী লীগকে ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তান শাসন করার সুযোগ দিও না। আলাপ-আলোচনার পর লারকানায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আওয়ামী লীগের হাতে কোনমতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না। শুরু হয় ষড়যন্ত্র।
৮ ফেব্রুয়ারী জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক কর্মী সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে, ক্ষমতার তিনটি স্তম্ভ – আওয়ামী লীগ, পিপলস পার্টি ও সেনাবাহিনী। আওয়ামী লীগের পক্ষে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়। মুখোমুখি হলে সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিবে। ভুট্টোর এ ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধু। অনেক টালবাহানার পর প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৩ ফেব্রুয়ারী ঘোঘণা করেন যে, ৩ মার্চ রোজ বুধবার বেলা ৯ ঘটিকায় ঢাকায় প্রাদেশিক আইন পরিষদ ভবনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারী জুলফিকার আলী ভুট্টো পেশোয়ারে ঘোষণা করেন যে, ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে তা্ঁর দল যোগদান করবে না এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অন্যান্য দলের সদস্যগণ যোগদান করতে পারবে না।জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ বেলা দেড় ঘটিকায় জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্হগিত ঘোষণা করেন। এটাই ইতিহাসে লারকানা ষড়যন্ত্র।

লেখকঃ
নূর হোসাইন মোল্লা
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষ,
গুলিশাখালী জিকে ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

Leave a Reply

x

Check Also

ভাণ্ডারিয়ায় ধর্ষণের নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পৈচাশিক নিযার্তন ও ধর্ষণ, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণ, শামীমাবাদে ...