ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - লুট, ধর্ষন ও নৃশংস যেসব হত্যায় জড়িত ছিলেন নিজামী

লুট, ধর্ষন ও নৃশংস যেসব হত্যায় জড়িত ছিলেন নিজামী

আজকের মঠবাড়িয়া ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন ১৬টি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেছিলো।

এর মধ্যে রয়েছে ঘটনা

১. জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে নিজামী ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম হল ইন্সটিটিউটে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন। এ বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নিমূর্ল করতে তার সহযোগীদের আহবান জানান।

২. একাত্তর সালের ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক একাডেমী হলে নিজামী বক্তৃতা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ইসলামের শক্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে প্ররোচনা দেন।

৩. একাত্তরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে দেয়া এক বক্তৃতায় স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ভারতের দালাল উল্লেখ করে তাদের নির্মুলের আহ্বান জানান নিজামী।

৪. একাত্তরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডিহলে আয়োজিত এক সভায় স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে তার সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।

৫. একাত্তরের ১৪ এপ্রিল পাবনার সাথিয়া থানার বাউশগাড়ী গ্রামে ৪৫০জন নিরীহ নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যায় নিজামীর বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ। ওই দিন বাউশগাড়ী গ্রামে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর বাহিনী হত্যাকান্ডসহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।

৬. একাত্তরের ৮ মে সাথিয়ায় সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূজা ঘরের সামনে নিজামীর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, লুন্ঠন ও বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়।

৭. একাত্তরের ২৭ নভেম্বর পাবনার সাথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে আব্দুল আওয়ালের বাড়ী ঘেরাও করে ৩০ জনকে হত্যা, বাড়ীতে লুট, নারীদের ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

৮. ১৬ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী থানার আর পাড়া ও ভুতের গাড়ী গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীতে লুট, অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ হাফেজ ওমর আলীসহ ১৯ জনকে হত্যার অভিযোগ।

৯. পাবনা জেলা স্কুলের হেড মাওলানা শহীদ মাওলানা কছিম উদ্দিন আহমদসহ তার দুই সঙ্গিকে একাত্তরের ১০ জুন হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিজামী জড়িত।

১০. পাবনা শহরের নুরপুর ওয়াপদা পাওয়ার হাউজে একাত্তরের ৯ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাজেদ ও মোহাম্মদ আলীকে হত্যার অভিযোগ।

১১. ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাবনার বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রামের সোহরাব আলী প্রামানিককে হত্যার ঘটনা। এছাড়া প্রফুল্ল প্রামানিক, ষষ্টিপ্রামানিকসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭০ জন নর-নারীকে হত্যা, তাদের বাড়ী-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

১২. একাত্তরের আগস্ট মাসে সাথিয়া থানার সোনাতলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুন্ডের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা।

১৩. মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে পাক বাহিনীর ক্যাম্প, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মানবতাবিরোধী অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে নিজামীর জড়িত থাকার ঘটনা। তিনি নিখিল পাকিস্তানের ছাত্র সংঘের সভাপতি এবং আল-বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে এ ক্যাম্পে সব সময় গমন করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাতেন।

১৪. একাত্তরের ৩০ আগস্ট ঢাকার নাখাল পাড়ায় পুরাতন এমপি হোস্টেলে স্থাপিত পাক ক্যাম্পে বন্দি জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আযাদ এদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকীদের নিজামীর নির্দেশে হত্যা করা হয়।

১৫. পাবনার সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে নিজামী জড়িত থাকার ঘটনা।

১৬. মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে নিজামী জড়িত থাকার ঘটনায় অভিযোগ গঠিত হয়েছে।

হত্যা, গণহত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণে সহযোগিতার মতো মানবতাবিরোধী উল্লেখিত ১৬ অভিযোগে ২০১২ সালের ২৮মে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কার্যক্রম শেষে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে জাতির মেধাবী সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট চারটি অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীর ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। বিচারে নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনীত মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩,

৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর আনা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে গত ৬ জানুয়ারি রায় দেয় আপিল বিভাগ।

রায়ে বলা হয় নিজামীকে ১,৩ ও ৪ নং অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ রায় বহাল রাখা হয়। নিজামীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ জনাকীর্ণ আদালতে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতার বিষয়ে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ ওইদিন প্রকাশ করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

রায় প্রকাশের পর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়ের করার সূযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ি রিভিউ দায়ের করে আসামিপক্ষ। মৃত্যুদন্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত ২৯ মার্চ আবেদন দায়ের করে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আজ জনাকীর্ণ আদালতে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৬ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়। নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন।

বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী নিজামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। চট্রগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও নিজামীর মৃত্যুদন্ডের রায় হয়েছে। একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের আদেশে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...