মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কবুতরখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ইদ্রীস সিকদার (৫০) এবার আমন মৌসুমে দুই একর জমিতে চিনিগুড়া জাতের ধানের আবাদ করেন। ধানের ক্ষেতের ভেতর খেসারি ডালের আবাদও করেছেন। ধানের শীষে ফুল ও ধানের মোচা বের হয়েছে। কৃষক ইদ্রীস এবার আশাতিত ফলন পাবেন এমন আশায় নিয়মিত মাঠের পরিচর্যা কওে আসছিলেন। হঠাৎ শুক্রবার দুপুরের ঘূর্ণিঝড়ে ও প্রবল বর্ষণে তার দুই একর জমির ধান লÐভÐ হয়ে নেতিয়ে পড়ে। সেই সাথে মাঠের জলাবদ্ধতায় খেসারি ডালের পুরো আবাদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ শনিবার বিপর্যস্ত ধানক্ষেতে নেমে বিপন্ন কৃষক টেরপান এবার জমির ফসল আর ঘরে তোলা সম্ভব হবেনা।
শুধু কৃষক ইদ্রীস নন ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এর প্রভাবে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১১ ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষকের আবাদকৃত আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার হোতখালী গ্রামের কৃষক মিলন কীর্তুনীয় বলেন, হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকের ধানক্ষেত নেতিয়ে পড়েছে । কৃষিজমির মাঠে কোথাও আধাপাকা ধান আবার কোথাও ধানের মোচায় ফুল ফুটেছিলো । এসব ধান এখন মাঠেই নষ্ট হবে। বেশীরভাগ ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা। কৃষকের ঘরে এবার আমানুরুপ ফসল উঠবে না। আগাম শীতকালীন সবজিও ক্ষণতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূক্তভোগি কৃষকরা জানান, মিধিলির প্রভাবে বৃস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দিনভর অবিরাম বৃষ্টিসহ ঝড়ো বয়ে যায়। কঁচা, বলেশ্বের, কালিগঙ্গাসহ নদ-নদী গুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধিসহ স্রোতের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়।
প্রবল ঝড়ো বাতাসে ধানসহ এবং সদ্য ধানের শিষ বের হওয়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালীন সবজি ক্ষেত পানিতে নুয়ে পড়ে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার বলেশ^র নদী তীরের সাপলেজা, তুষখালী, বেতমোর, আমড়াগাছিয়া ও বড় মাছুয়া ইউনিয়নের কৃষকরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন । এ বছর মঠবাড়িয়া উপজেলায় আমন মৌসুমে মোট ২২ হাজার ৩৮১ হেক্টর জমিতে আমন, ৪৬৪ হেক্টর জমিতে শাক-সবজী, ও ১াজার ৮২০ হেক্টর জমিতে খেসারী ডালের আবাদ হয়েছে। আমনের মধ্যে হাইব্রীড জাতের ৩৮ হেক্টর, উফশী জাতের ৭ হাজার৬৪৬ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের আমন ১৪ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ৪৮৯টি কৃষক পরিবারের মোট ২৭০ হেক্টর জমির আমন ধানের, ৫২৬টি কৃষক পরিবারের শাকসবজী ও ১৪৮৫টি পরিবারে খেসারী ডালের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করেছেন। তবে কৃষকরা জানিয়ে ক্ষণতির পরিমান আরও বেশী। বিশেষ করে যেসব ফসলের মোচায় কেবল ফুল ধরেছে সেব ধানের ক্ষেতের ফসল চিটার পরিমান বেশী হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জান বলেন, ঘূণিঝড় ও টানা দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে ধানের আবাদে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে আশানুরুপ ফলন না হওয়া আশংকা রয়েছে। কৃষকরা ক্ষতির সম্মূখীন। তিনি আরও বরেণ, সবজী ও খেসারীর মৌসুম কেবলমাত্র শুরু হয়েছে । তাই ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমিতে পুনরায় খেসারী ও সবজী বপন/রোপন করলে পূর্নাঙ্গ ফসল পাওয়া সম্ভব।