ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - কাউখালীর পাল পাড়ায় বৈশাখী ব্যস্ততা

কাউখালীর পাল পাড়ায় বৈশাখী ব্যস্ততা

বিশেষ সংবাদদাতা, পিরোজপুর > বাংলা বর্ষবরন আর বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে পিরোজপুরের কাউখালীর মৃৎশিল্প পল্লীর কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কালের আবর্তে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া কাউখালী উত্তরবাজার ও নদী তীরবর্তী সোনাকুরের ওই পল্লী দুটির বাসিন্দারা প্রচন্ড খড়ার মাঝে যেন এক ফোঁটা বৃষ্টির পরশ পেয়েছে। সিরামিক, মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগীতায় হেরে যাওয়া দেড়শতাধিক পরিবারের মাঝে মাত্র ৮ থেকে ১০ পরিবার টিকে রয়েছে পূর্ব পুরুষের এ পেশায়। বছরের অন্যান্য কর্মময় দিনের তুলনায় এখন দিন রাত মহা ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
বছরের বারটি মাস অতিক্রম করে একটি নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্য কতইনা আয়োজন চলে চৈত্রের শেষ প্রান্তে। বর্ষ বরনের আয়োজন সকল বাঙালীকে উদ্বেলিত করে। বাংলার কুলোবধুরা পুরানো বাসন কোসন বদলানো, ধোয়ামোছা, ঘর গোছানো, পরিপাটি করা মুসলমানদের ঘরে বা মসজিদে মিলাদ আর হিন্দুদের ঘরে বা মন্দিরে পুজো কত কি না চলে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। কেবল পহেলা বৈশাখই নয় পুরো মাস জুড়েই বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব চলে। এ উৎসবকে ঘিরে গোটা দেশের মানুষ হয়ে ওঠে প্র্র্রানচঞ্চল। একসময় গ্রামে গ্রামে বসত মেলা। একসময় ওই মেলায় শোনা যেত বাশের বাশির সুমধুর সুর, বেলুনের বাশির সুর, ছোট শিশুদের ঢোল বাজানোর শব্দ। বাড়ী ফিরত একটি দু’টিমাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া বাঘ ভালুকসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল নিয়ে। ওই মেলা থেকে কেনা হত বছরের প্রয়োজনীয় গেরস্থলী কাজের তৈজসপত্র। আধুনিক সভ্যতার চোখ ধাঁধানো নাচ গান, মাইক বা সাউন্ড বক্সের কান ফাটানো শব্দে সব যেন হারিয়ে গেছে। সংখ্যায় কম হলেও আজো বিভিন্ন স্থানে বসছে গ্রাম্য মেলা। তথাকথিত আধুনিকতার সঙ্গে প্রতিযোগীতায় সব হারিয়ে গেলেও শেষ টুকু ধরে রেখেছে কাউখালীর মৃত প্রায় মৃৎশিল্প পল্লীর শিল্পীরা। বৈশাখের দিনগুলোর জন্য বড় আশা নিয়ে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকা ওই পল্লীবাসীদের এখন দমফুরাবার সময় নেই।
সরেজমিনে উপজেলার উত্তর বাজার ও সোনাকুরের মৃৎশিল্প পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, আট বছরের শিশু সুমন পাল থেকে শুরু করে বয়স্কা রাধারানী পাল আর সত্তোরোর্ধ সুধির পাল, শুশিল পাল সকলেই কাজে মহাব্যস্ত। চাকা ঘুরিয়ে খেলনা তৈরিতে ব্যাস্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধি অনিল পাল।একটু পরেই একটি কাঠের তক্তার ওপর তৈরি খেলনা নিয়ে শুকানোর জেন্য বেরুতেই অবাক। কারো সাহায্য ছাড়াই অনেক পুতুলের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে তক্তাটি নামিয়ে আবার চলে গেলেন। কথা বলার কোনও সুযোগ নেই তবুও কাজের ফাঁকে কথা হয় তাদের সাথে। রংয়ের কাজে ব্যস্ত রবিন পাল জানান, বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে তারা একেকটি পরিবার প্রায় ৪-৫ হাজার খেলনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। বৈশাখী মেলার এখনো কয়েকদিন বাকি থাকার কারনে অনেক খেলনা এখনো সম্পূর্ণ শুকায়নি তাই অর্ধেক খেলনায় রং করা হয়ে গেছে। খেলনা সামগ্রী এক একটি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হবে তবে খেলনা বিশেষে বাহারি ও বড় আকৃতির অনেক খেলনা ৮০ থেকে ১শ টাকায়ও বিক্রি হবে বলে কুমাররা আশা করছেন। বছরের অন্য সময় তেমন একটা কাজ থাকেনা। মৌসুমি আয়দিয়েই তাদের বছর কাটে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...