ঘূর্ণিঝড় সিডরে পুতুল বেগমের (৪০) ঘরবাড়ি ভেসে যায়। ঝড়ের রাতে ভয় পেয়ে স্বামী নাসির ফকির আত্মহত্যা করেন। চার সন্তান নিয়ে তিনি খোলা আকাশের নিচে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া তাঁবুতে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এমন সময় পুতুল বেগমের পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো। প্রথম আলোর দেওয়া ঘরে এখন পুতুল বসবাস করছেন। পুতুলের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন ও পুতুলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, খেজুরবাড়িয়া গ্রামের বলেশ্বর নদ-তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ভূমিহীন রিকশাচালক নাসির ফকির পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় সিডর যখন আঘাত হানে, তখন চার সন্তানসহ নাসিরের পরিবার ঘরে ছিল। প্রচণ্ড বাতাস আর জলোচ্ছ্বাসে তাঁদের ঘর ভেসে যায়। চার সন্তানকে স্বামী-স্ত্রী মিলে আগলে রেখে কোনো রকমে বেঁচে যান। তবে ওই রাতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব দেখে নাসির ফকির ভয় পেয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর নাসির ফকির ‘আগুন আইছে’ বলে সারাক্ষণ চিৎকার করতেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তিনি কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। হঠাৎ একদিন ছাড়া পেয়ে নাসির ফকির গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ খবর কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়। পরে বিদেশি গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। ওই সময় বাস্তুহারা ভূমিহীন পরিবারটিকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দেড় কাঠা জমি কিনে টিনের ঘর তুলে দেওয়া হয়।
গতকাল শনিবার বলেশ্বর নদ-তীরবর্তী খেজুরবাড়িয়া গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম আলোর দেওয়া ঘরে বসবাস করছেন পুতুল বেগম। তিন ছেলেকে নিয়ে তিনি এই ঘরে বসবাস করছেন। এ সময় বড় ছেলে আবদুল জলিল বাড়িতে ছিলেন না। জলিল পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর আয়ে সংসার চলে।
পুতুল বেগম বললেন, ‘প্রথম আলো আমার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। চার শিশুসন্তানকে আশ্রয় দিয়েছে।’