দেবদাস মজুমদার >>
আজ বুধবার(২৬ জুলাই) আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস । ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের জীববৈচত্র্য সুরক্ষা ও এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সুরক্ষার আহ্বানে এ বছর পরিবেশ গুরুত্ব দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইকুয়েডরে ম্যানগ্রোভ বন কেটে চিংড়ি চাষ করার প্রতিবাদে ১৯৯৮ সালের ২৬ জুলাই আয়োজিত সমাবেশে একজন অংশগ্রহণকারীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে তার স্মরণে এই দিনটিতে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ভরা । তবে সুন্দরবন নানা বিপর্যয়ের সম্মূখিন। সুন্দরবনে নোনার মাত্রা বেড়েছে। নদীগর্ভে পলিও জমছে আগের চেয়ে বেশি। ফলে নদীগুলোর গভীরতা কমছে।বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয় সুন্দরবনের উদ্ভিদ। কার্বন ডাই-অক্সাইডকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে নোনাজলের এ উদ্ভিদরাজি বেড়ে ওঠে। অথচ বাড়তি নোনা উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
ম্যানগ্রোভ এক বিশেষ ধরণের উদ্ভিদ যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা পানিতে জন্মায়। এগুলো হচ্ছে শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদ। জোয়ারের সময় শ্বাসমূলের সাহায্যে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ শ্বসন কাজ চালায়। উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, একশটিরও বেশি গাছ ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রে জন্মায়। যেমন- সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, কেওড়া এগুলো ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ।
এই ম্যানগ্রোভ গাছগুলোর শ্বাসমূল থাকে। এদের মূল থেকে একটা ডালের মতো চিকন অংশ মাটি ভেদ করে উঠে আসে। জোয়ারের সময় যখন মাটির উপরে পানি জমে যায়, তখনো এই শ্বাসমূলগুলো পানির উপরে ভেসে থাকে। এই শ্বাসমূলগুলোর মাথায় এক ধরনের শ্বাসছিদ্র থাকে, যাদের বলে নিউমাটাপো। এর সাহায্যেই ম্যানগ্রোভ গাছেরা শ্বাস নেয়।
পৃথিবীতে ১০২টি দেশে ম্যানগ্রোভের অস্তিত্ব থাকলেও কেবলমাত্র ১০টি দেশে ৫০০০ বর্গ কি.মি. এর বেশি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে। পৃথিবীর সমগ্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ৪৩% ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং নাইজার এ অবস্থিত এবং এদের প্রত্যেকটি দেশে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ২৫% হতে ৬০% ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হতে অতিরিক্ত কাঠ ও মাছ আহরণের ফলে এবং উপকূলীয় ভূমিকে বিকল্প ব্যবহার যোগ্য ভূমি হিসেবে ব্যবহারের ফলে এ বনাঞ্চল হুমকির সম্মুখীন। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো অনেক প্রজাতিই এ বনকে তাদের জীবনচক্রের কোনো না কোনো সময় ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন (সুন্দরবন) পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত। সুন্দরবন বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ বনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মেলে। এখানকার উল্লেখ্যযোগ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- সুন্দরী, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, বাইন, কাঁকড়া, হারগোজা, হেতাল প্রভৃতি।
জীববৈচিত্র্যের এমন প্রাচুর্যতার জন্য সুন্দরবন ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। আর এজন্য সুন্দরবনের সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় সুন্দরবন দিবস।
একদিকে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সুন্দরবন। অন্যদিকে বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে নোনাজলের এই উদ্ভিদরাজি বেড়ে ওঠে। প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে কমিয়ে দেয় পরিবেশের দূষণ।
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন নানা রকম প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। বাড়ছে তেলদূষণ, শব্দদূষণসহ আর নোনা আধিক্য সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে।
মানুষ কৃষিকাজ ও খাদ্যের জন্য প্রায় ৭ হাজার উদ্ভিদ ও কয়েক হাজার প্রাণীর উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। মানুষের জীবন ধারণের জন্য জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনের কোনো শেষ নেই।
তাই জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য আমাদের সুন্দরবন সুরক্ষায় রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র > মুক্ত বিশ্ব কোষ
ছবি > সংগৃহিত