পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরে নির্বাচনী সহিংসতার জেরে ধারালো অস্ত্রের উপর্যপুরি আঘাতে গুরুতর আহত লালন ফকির নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জনান নিহত লালনের বাবা হান্নান ফকির। লালন ফকির (২৮) পিরোজপুর পৌর শহরের ০৯ নং ওয়ার্ডের ডুমুরিতালা এলাকার হান্নান ফকির এর পুত্র। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত রাতে তিনজনকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছেন। আটকের মধ্যে একজন কথিত মুল হত্যাকারী বাবু শেখ ওরফে মদ বাবু বলে জানা গেছে।
নিহত লালনের বাবা হান্নান ফকির জানান, গত শনিবার রাত আটটার দিকে সদর উপজেলার শারিকতলা ইউনিয়নের কুমিরমরা ফেরিঘাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে একই এলাকার বাবু শেখ এর নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল লালনকে ধাওয়া করে। লালন সেখানে থেকে দৌড়ে পালানোর সময় হামলাকারীরা তাকে আটক করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যপরি কুপিয়ে তার হাত ও পা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর তাকে মৃত ভেবে পাশের একটি ডোবায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে রোববার তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লালনের দুই পা ও দুই হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন সহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ত্রিশটির বেশি কোপের আঘাত রয়েছে। চিকিৎসারত অবস্থায় ঢাকায় মৃত্যু হয় লালনের। এঘটনাকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর শহরে জেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সোমবার রাতেই বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছে।
শহরে বিরাজ করছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পিরোজপুর শহরে জেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লালন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছে। পথ সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খান মোঃ আলাউদ্দিন, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মন্টু, পৌর আওযামীলীগের সভাপতি কাউন্সিলর সাদুল্লাহ লিটন, জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক সুমন শিকদার, ছাত্রলীগ নেতা বারী তালুকদার জয়েন প্রমুখ। সভায় আলটিমেটাম দিয়ে বক্তারা বলেন, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে লালন হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রীর একান্ত ঘনিষ্টজন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা বায়েজিদ সহ সংশ্লিস্ট সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। অন্যথায় আগামী ৪৮ ঘন্টার পর বড়ধরনের কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত দুইদিন পিরোজপুর-১ আসনের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাংঙ্গা ইউনিয়নে স্বতন্ত্রপ্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের সমর্থনের কর্মী সমাবেশে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর কর্মী সমর্থকরা নৌকা মার্কার স্লোগান দিয়ে হামলা করে। সেখানে আউয়াল সমর্থক একাধিক আওয়ামীলীগ কর্মী আহত হয়। রবিবার সন্ধ্যায় নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠীতেও মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর কর্মী সমর্থকরা নৌকা মার্কার স্লোগান দিয়ে হামলা করে সতন্ত্র প্রার্থী এম এ আউয়ালের কর্মীদের ওপর।
এদিকে, বিক্ষোভ মিছিলসহ জেলা শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লালন হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাবু শেখ সহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ দের পুলিশ। দায়ীদের সকলকেই গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। তবে তিন জানান, এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে এটি হত্যা মামলা হিসাবে নেওয়া হবে।