ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - রাজাপুরে কলা চুরির অপবাদে শিশু নির্যাতনকারীরা ৭ দিনেও অধরা

রাজাপুরে কলা চুরির অপবাদে শিশু নির্যাতনকারীরা ৭ দিনেও অধরা

ঝালকাঠি থেকে মোঃ আল-আমিন : ঝালকাঠির রাজাপুরের চর উত্তমপুর গ্রামের শিশু আইয়ুব হোসেনকে (১০) কলা চুরির অভিযোগে রবিবার সন্ধ্যায় খেলার মাঠ থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে প্রতিবেশী দুই ভাই রুস্তম সিকদার ও জলিল সিকদার। রোববার বিকেলের এঘটনা সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আহত শিশু আইয়ুবকে দেখতে যায় সিনিয়রসহকারী পুলিশ সুপার। ওই পুলিশ কর্মকর্তার আইনী সহায়তার আশ্বাসে রাজাপুর থানায় মামলা করে আহত শিশুর পিতা উত্তমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম হাওলাদার। শিশু নির্যাতন ঘটনার পর থেকেই নির্যাতনকারীরা আত্মগোপনে রয়েছে। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও আসামীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারছেনা পুলিশ।

রোববার বিকেলে কলা চুরির অপবাদ দিয়ে পিচঢালা রাস্তার সঙ্গে মাথা আঁচড়ে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে শিশুকে তারা তাকে আহত করে। এসময় ‘আমি চুরি করি নাই। আমারে মারেন ক্যান ? আপনাগো পাও ধরছি। আর মাইরেন না। আমি মইর‌্যা যামু।’ এমন আকুতি করেও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ওই শিশুটি। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী রাতে তাকে উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সে পাশের উপজেলা কাঁঠালিয়ার পূর্ব শিক্ষা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। প্রশাসনের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ওই শিশুর বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে রবিবার বিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে দুপুরে বাড়িতে আসে। খাবার খেয়ে সে বাড়ির পাশের একটি মাঠে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে যায়। এ সময় প্রতিবেশী কলাচাষি রুস্তম ও জলিল সেখানে উপস্থিত হন। তাঁদের বাগানের কলা চুরি হয়ে গেছে বলে আইয়ুবকে ধরে আনেন। এ সময় তাঁরা আইয়ুবকে চুরির অপবাদ দিয়ে পিচঢালা রাস্তার ওপর মাথা আঁচড়ে ও লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে টেনেহিঁচড়ে কলাবাগানের পাশে আনেন। এরপর বাগানের পাশের গাছের সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করা হয়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ‘কলা চুরির শাস্তি দেওয়া হচ্ছে’ বলে রুস্তম ও জলিল কেটে পড়েন। শিশুটির বাবা আরো বলেন, ‘কে বা কারা কলাবাগানের কলা চুরি করে নিয়া গ্যাছে। কিন্তু তারা না বুঝেই সেই অপবাদ দিয়ে আমার পুত্ররে মারধর করছে। ওর মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগছে। তাই রাইত থেকে মাথাব্যথা বলে কানছে। আমি বিষয়টি রাজাপুর থানা পুলিশকে জানাইছি। আমার পোলারে যারা মারছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

চর উত্তমপুর গ্রামের কল্পনা বেগম বলেন, ‘আইয়ুবকে ধরে নিয়ে যেতে দেখে আমি পিছনে পিছনে যাই। দেহি, ওরে রুস্তম ও তার ভাই জলিল মারতেছে। আমার লগে আরো কয়েকজন সেখানে গ্যালে তারা বলে, কলা চুরির শাস্তি দিছি।’

হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতর শিশু আইয়ুব হোসেন বলে, ‘আমি কিছু বুঝতে পারি নাই। তুই আমাগো কলা চুরি করছো, এই কথা বইল্যাই খেলার মাঠ দিয়া জামার কলার ধইরা নিয়া আমারে লাডি দিয়া পিডায় তারা। মাথা নিচের দিয়া রাস্তার লগে চাইপ্পা ধরে। ব্যথায় আমি ওনাগো পাও ধরছি। আমারে মাইরেন না, কইয়্যা কানছি। হেইয়ার পরও পিডাইছে। আমি মইর‌্যা যামু কইছি পর ছাড়ছে। যন্ত্রণায় হারা রাইত ঘুমাইতে পারি নাই।’

অভিযুক্ত কলাচাষি রুস্তম সিকদার বলেন, ‘কালামের ছেলে (আইয়ুব) প্রায়ই আমার বাগানের কলা চুরি করে। আমরা বিষয়টি জানতে পারার পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কোনো মারধর করিনি।’

রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘ওই শিশুটির হাতে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটি ভয় পেয়েছে। তাই আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে।’

এ বিষয়ে রাজাপুর থানার ওসি মুনীর উল গীয়াস বলেন, ‘ ঘটনার পর থেকেই নির্যাতনকারীরা আত্মগোপন করে। মামলা দায়ের করা হলেও আসামীরা আত্মগোপন করায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

x

Check Also

এফ-কমার্স ভিত্তিক মঠবাড়িয়া ই-বাজারের সাফল্যগাথা

মঠবাড়িয়া ই-বাজার, একটি এফ কমার্স বা অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম। আর অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসার নতুন ধারণাকেই ...