দেবদাস মজুমদার >
আজ ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্র পুনারুদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় এই দিন । ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সন্তান নূর হোসেন। রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার) পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। নুর হোসেন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নানা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে শহীদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা। নুর হোসেনের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জনগণের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। সাবেক সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাজপথে হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন নূর হোসেন। মিছিলের সামনে থাকা নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান। সেই মিছিলের উপর গুলিবর্ষণে জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টে গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনের রাজপথে শহীদ হন। সেদিন গুলিতে আরো শহীদ হন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো ও যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল। রক্তাক্ত হয় ঢাকার রাজপথ।
নূর হোসেনকে হত্যার পর স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলনের দাবানল স্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ -এর ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে। আর তাঁর বীরোচিত জীবনদানের জন্য নূর হোসেন সেই সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন, নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা সেই শ্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক।
১৯৬১ সালে ঢাকার নারিন্দায় নূর হোসেনের জন্ম। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মুজিবুর রহমান, মা মরিয়ম বিবি।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর পরিবার ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে বসবাস শুরু করেন।
শহীদ নূর হোসেনর পৈত্রিক নিবাস মঠবাড়িয়ার কতিপয় তরুন মিলে গড়ে তুলেছেন জাগো লক্ষ নূর হোসেন নামে একটি সামাজিক সংগঠন। ওই সংগঠনের আহ্বায়ক রাসেল সবুজ বলেন, শহীদ নূর হোসেন মঠবাড়িয়ার জনমানুষের এক অহংকারের নাম। শহীদ নূর হোসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্মরণীয় । তিনি আমাদের মঠবাড়িয়ার গর্বিত সন্তান। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যি মঠবাড়িয়ার মানুষ, বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই নূর হোসেন আজো অচেনা। মঠবাড়িয়ার মানুষ হিসেবে শহীদ নূর হোসেনের অবদানের স্বীকৃতি ও স্মৃতি রক্ষার লেক্ষে জাগো লক্ষ নূর হোসেন সংগঠনটি গড় তোলা হয়েছে। আমরা মনে করি “রাজনীতি যার যার, নূর হোসেন সবার” ।
তাই সংগঠনটি মেঠবাড়িয়ায় নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় ৭ দফা দাবি জানাচ্ছে
১) মঠবাড়িয়া থেকে সাপলেজা পর্যন্ত সড়কটি “শহীদ নূর হোসেন সড়ক” নামে নামকরন করা হোক।
২) মঠবাড়িয়া শহরের দৃশ্যমান স্থানে শহীদ নূর হোসেনের একটি ম্যূরাল নির্মান করা হোক।
৩) মঠবাড়িয়ায় শহীদ নূর হোসেনের নামে একটি আধুনিক ডিজিটাল পাঠাগার গড়ে তোলা হোক।
জাগো লক্ষ নূর হোসেন সংগঠন সূত্রে জানাগেছে , বেশ কিছু দিন আগে শহীদ নূর হোসেন এর বড় ভাই প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক জনাব আলী হোসেন এর বাসভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে নূর হোসেনের পরিবারের সদস্য এবং মঠবাড়িয়ার বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে নূর হোসেন এর মা শহীদ জননী মরিয়ম বিবিকে মঠবাড়িয়াতে সংবর্ধনা দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাবেক প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন মোল্লাকে আহবায়ক এবং মো: রাসেল সবুজ কে সদস্যসচিব করে “শহীদ জননী মরিয়ম বিবি সংবর্ধনা কমিটি” গঠন করা হয়। মঠবাড়িয়ার সচেতন সকলের সাথে আলোচনা করে খুব শিঘ্রই সংগঠনটি এ ব্যপারে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
ছবি : সংগৃহিত