ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীর নূন্যতম কোন মর্যাদা ছিল না। নারীকে অস্হাবর সম্পত্তি মনে করে যদৃচ্ছা ব্যবহার করত। নারী ছিল পুরুষের দাসী এবং বিলাসিতার সামগ্রী। তাদের মতে,পুরুষকে সন্তুষ্ট ও তাবেদারী করার জন্যেই নারীর সৃষ্টি। নারী মানেই পরাধীনতা এবং পরনির্ভরতার করুন ইতিহাস। ইতিহাস পর্যালোচনা করলো দেখা যায় যে, ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মে নারীর যথাযথ মর্যাদা স্বীকৃত হয়নি। ইসলামে নারী আর পুরুষের মধ্যে মর্যাদার কোন পার্থক্য নেই। পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন,” হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই তাঁর সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর এ দুজন থেকেই তিনি অগনিত নর ও নারী সৃষ্টি করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ” সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,” নারীদের ওপর পুরুষের যেরুপ অধিকার আছে,ঠিক অনুরুপ সমান অধিকার রয়েছে পুরুষের ওপর নারীদের।”
সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন, ” সারা পৃথিবীই সম্পদ আর নারী হচ্ছে তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ।”ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মে নারী বঞ্চিত ও উপেক্ষিত হলেও ইসলাম নারীদের শুধু মর্যাদা ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয় নি,বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীকে অধিক মর্যাদা দান করেছে।সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, ” এক ব্যক্তি রাসুল সঃ কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল সঃ! আমার পক্ষ থেকে সর্বাধিক সৌজন্যমূলক আচরণ পাওয়ার অধিকারী কে? তিনি বলেন,তোমার মাতা। আবার সে জিজ্ঞেস করেন, তারপর কে? রাসুল সঃ বলেন,তোমার মাতা। সে আবারও জিজ্ঞেস করেন, অতপর কে? রাসুল সঃ বলেন, তোমার মাতা। সে আবার জিজ্ঞেস করেন, অতপর কে? রাসুল সঃ বলেন, তোমার পিতা। ” উপরিউক্ত হাদীসের আলোকে প্রমানিত হয় যে,পুরুষের তুলনায় নারীর মর্যাদা তিনগুন বেশী।ইসলামে নারী সংসার,সমাজ ও সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
“এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক নর।”
নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ ছিলেন সোচ্চার। শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি নারীকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেন যে,” একজন পুরুষ শিক্ষিত হওয়া মানে একজন শিক্ষিত হওয়া আর একজন নারী শিক্ষিত হওয়া মানে একটি জাতি শিক্ষিত হওয়া। তিনি ছিলেন নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির অগ্রদূত। ইসলামে নারীকে খাটো করে পুরুষকে প্রধান্য দেয়নি, বরং নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। নারীর মর্যাদাকে চার ভাগে আলোচনা করা যায়, যেমন-মাতারুপে, কন্যারুপে, সহধর্মিণীরুপে এবং সমাজের সদস্যরুপে।
১.মাতারুপে নারীঃ ইসলামে মাতা হিসেবে নারীকে যে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করেছে তা অন্য কোন ধর্মে করে নি। মাতা-পিতার প্রতি সাধারণভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করার পর পবিএ কুরআন ও হাদীস শরীফে মাতার প্রতি বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। কারণ,মাতা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা,প্রসব করা এবং স্তন্য দান করা একাকী গ্রহণ করেন। এ তিন পর্যায়ের ক্লেশ ও যাতনায় পিতার কোন অংশ নেই। সারা পৃথিবীর সব মানুষই নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছেন।তারা নারীর কোলেই লালিত – পালিত হয়েছেন। মানব জাতি নারীর কাছে ঋনী। পবিত্র কুরআনের সুরা লোকমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ” আমি মানুষকে তার পিতা- মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে,তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেন এবং দুই বছর তাকে স্তন্য দান করে থাকেন।”বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন, ” মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। “অতএব, বুঝা গেল যে,মাতাকে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন এবং খেদমত করলে সন্তান বেহেশত লাভ করতে পারবে। মাতাকে সম্মান,শ্রদ্ধা, ভক্তি ও খেদমত না করলে বা কোনরুপ খারাপ আচরণ করলে,সন্তান যত ইবাদত -বন্দেগী আর মহৎ কাজ করুক না কেন,তার পক্ষে বেহেশত লাভ করা সম্ভব হবে না।
২.নারী কন্যারুপেঃ ইসলামের পূর্বে কন্যা সন্তানের জন্মকে চরম অপমানজনক মনে করে তাকে জীবন্ত কবর দিত।পবিত্র কুরআনের সুরা নাহল এর ৫৮-৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ” ইসলামের পূর্বে সমাজে কাউকে যখন তার কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদ দেয়া হত,তখন অপমানে তার মুখ কাল হয়ে যেত।এ সংবাদে লজ্জায় সমাজের মানুষের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে চলত।আর মনে মনে চিন্তা করত যে,এ অপমান সহ্য করে কন্যাকে বাঁচিয়ে রাখবে, না তাকে মাটির নীচে পুঁতে রাখবে। কতই না খারাপ সিদ্ধান্ত তারাগ্রহণ করত।” কন্যা সন্তান হত্যার প্রতিবাদে মহান আল্লাহ তাআলা পবিএ কুরআনের সুরা বনী ইসরাঈলের ৩১ নং আয়াতে বলেন, ” তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে কন্যা সন্তানদের হত্যা করবে না,তাদের এবং তোমাদের পানাহার আমিই দিয়ে থাকি,জেনে রাখ, সন্তান হত্যা নিসন্দেহে একটি জঘন্য অপরাধ। ”
মানবতা বিরোধী এ জঘন্যতম কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কন্যা সন্তানকে পুএ সন্তানের মতই বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছেন। শুধু তাই নয়,কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দিলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পিতাকে কঠোরভাবে জিজ্ঞেস করবেন,” কোন অপরাধে তাকে হত্যা করেছিলে?”( সুরা তাকভীর)।
রাসুল সঃ বলেছেন যে, ব্যক্তির কন্যাসন্তান হবে, সে যদি তাকে জীবিত কবর না দেয়,তার প্রতি তাচ্ছিল্যমূলক আচরণ না করে এবং নিজের পুএসন্তানকে কন্যাসন্তানের ওপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন।” ( মুসলিম শরীফ) । তিনি আরও বলেছেন, কন্যাসন্তানদেরকে ঘৃনা করবে না,কারণ, আমি স্বয়ং কন্যাদের পিতা।তিনি আরও বলেন, পিতা জীবিত থাকতে পুএ বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তার লালন-পালন করা যেমন পিতার কর্তব্য, তেমনি মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তার জন্যও পিতার অনুরুপ কর্তব্য রয়েছে। পুএ বয়ঃপ্রাপ্ত হলে পিতা তাকে উপার্জন করার জন্যে বাধ্য করতে পারে,কিন্তু কন্যাসন্তানকে তা করতে পারেন না। রাসুল সঃ আরও বলেছেন যে, ” আল্লাহ যদি কন্যাসন্তানদের মাধ্যমে কাউকে কোন রকম পরীক্ষায় ফেলেন আর সে যদি তাদের প্রতি সদয় আচরণ করে,তাহলে ঐসব কন্যাসন্তান তার জন্যে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার কারণ হবে।” ( বুখারী শরীফ)।
৩.সহধর্মিণীরুপে নারীঃ ইসলামের পূর্বে স্বামীর নিকট নারীর কোন মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। স্ত্রী চরম অমর্যাদা, অপমান ও অস্মানের পাএী ছিল। অস্হাবর সম্পত্তির মত স্ত্রীকে যদৃচ্ছা ব্যবহার করত। স্ত্রী ছিল বড়ই অসহায়। স্বামীর সম্পদে তার কোন অধিকার ছিল না।স্বামীর মৃত্যুর পর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে স্ত্রী কোন অংশ পেত না।বিধবাদের এ অসহায় অবস্হা দূর করার জন্যে আল্লাহ তাআলা পবিএ কুরআনের সুরা নিসার ১২নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা যদি কোন সন্তান না রেখে মৃত্যু বরণ কর,তাহলে স্ত্রীরা তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশের মালিক হবে। আর তোমাদের সন্তান থাকলে স্ত্রীরা পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ। “স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন যে, “তোমরা স্ত্রীদেরকে অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করে নিজেদের উত্তরাধিকারের সম্পদে পরিণত করবে না।এটা তোমাদের জন্যে আদৌ হালাল হবে না।”
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন যে, ” তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। ( তিরমিযী শরীফ) । তিনি আরও বলেছেন যে, ” সারা পৃথিবীই সম্পদ। তবে পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নেককার স্ত্রী। “আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে যে, ” একদা এক সাহাবী রাসুল সঃ কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমাদের ওপর আমাদের সহধর্মিণীদের কি অধিকার আছে? রাসুল সঃ বলেন, তুমি যা খাবে, তোমাদের সহধর্মিণীদেরকে তা খেতে দিবে, তোমার সাধ্যানুযায়ী তাদের মর্যাদা অনুযায়ী পরিধেয় বস্ত্র পরিধান করতে দিবে, তাদের মুখমন্ডলে আঘাত করবে না, তাদেরকে গালিগালাজ করবে না এবং তাদেরকে নিজ গৃহ ছাড়া অন্য কোথাও বিচ্ছিন্ন রাখবে না। ” ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ অভিশপ্ত নারীকে কল্যাণময়ী,মহিমাময়ী এবং পূর্ণময়ী সহধর্মিণীর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেন,”নারীর প্রতি পুরুষের যেমন অধিকার আছে, তেমনি রয়েছে পুরুষের প্রতি নারীর অধিকার। ” নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিখ্যাত খৃষ্টান পন্ডিত পিয়েরে ক্রাবাইট বলেন,” Muhammad S was probably the greatest Champion of women’s rights,the world has ever seen.”
নারীর এ মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান লুন্ঠিত হয়েছে যখন নারী ঘর থেকে বাইরে পা রেখেছে। এর আগে নারী ঘর- গৃহস্হালী ও সন্তান লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বর্তমানে নারী ঘর- গৃহস্হালী ও সন্তান লালন-পালন বাদ দিয়ে অফিস,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপনী,নাট্যমঞ্চ ইত্যাদিতে প্রবেশ করেছে। ফলে পুরুষেরা কেবল বাইরের কাজ করে। আবসর পেলে নারীকে ঘর ও বাইর উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয়।প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেছেন যে, ” নারীদের পতনের যুগ সূচিত হয়েছে যখন নারীরা ঘরের চার দেয়াল ডিঙিয়ে বাইরে পা রেখেছে। ” মুসলিম মহিলাদের প্রতি আমার সবিনয়ে অনুরোধ, আপনারা ইসলামের অনুশাসন মেনে চলুন আর সুখী – সমৃদ্ধ জীবন গঠন করুন। আল্লাহ হাফিজ।
১.মাতারুপে নারীঃ ইসলামে মাতা হিসেবে নারীকে যে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করেছে তা অন্য কোন ধর্মে করে নি। মাতা-পিতার প্রতি সাধারণভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করার পর পবিএ কুরআন ও হাদীস শরীফে মাতার প্রতি বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। কারণ,মাতা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা,প্রসব করা এবং স্তন্য দান করা একাকী গ্রহণ করেন। এ তিন পর্যায়ের ক্লেশ ও যাতনায় পিতার কোন অংশ নেই। সারা পৃথিবীর সব মানুষই নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছেন।তারা নারীর কোলেই লালিত – পালিত হয়েছেন। মানব জাতি নারীর কাছে ঋনী। পবিত্র কুরআনের সুরা লোকমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ” আমি মানুষকে তার পিতা- মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে,তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেন এবং দুই বছর তাকে স্তন্য দান করে থাকেন।”বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন, ” মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। “অতএব, বুঝা গেল যে,মাতাকে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন এবং খেদমত করলে সন্তান বেহেশত লাভ করতে পারবে। মাতাকে সম্মান,শ্রদ্ধা, ভক্তি ও খেদমত না করলে বা কোনরুপ খারাপ আচরণ করলে,সন্তান যত ইবাদত -বন্দেগী আর মহৎ কাজ করুক না কেন,তার পক্ষে বেহেশত লাভ করা সম্ভব হবে না।
২.নারী কন্যারুপেঃ ইসলামের পূর্বে কন্যা সন্তানের জন্মকে চরম অপমানজনক মনে করে তাকে জীবন্ত কবর দিত।পবিত্র কুরআনের সুরা নাহল এর ৫৮-৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ” ইসলামের পূর্বে সমাজে কাউকে যখন তার কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদ দেয়া হত,তখন অপমানে তার মুখ কাল হয়ে যেত।এ সংবাদে লজ্জায় সমাজের মানুষের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে চলত।আর মনে মনে চিন্তা করত যে,এ অপমান সহ্য করে কন্যাকে বাঁচিয়ে রাখবে, না তাকে মাটির নীচে পুঁতে রাখবে। কতই না খারাপ সিদ্ধান্ত তারাগ্রহণ করত।” কন্যা সন্তান হত্যার প্রতিবাদে মহান আল্লাহ তাআলা পবিএ কুরআনের সুরা বনী ইসরাঈলের ৩১ নং আয়াতে বলেন, ” তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে কন্যা সন্তানদের হত্যা করবে না,তাদের এবং তোমাদের পানাহার আমিই দিয়ে থাকি,জেনে রাখ, সন্তান হত্যা নিসন্দেহে একটি জঘন্য অপরাধ। ”
মানবতা বিরোধী এ জঘন্যতম কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কন্যা সন্তানকে পুএ সন্তানের মতই বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছেন। শুধু তাই নয়,কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দিলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পিতাকে কঠোরভাবে জিজ্ঞেস করবেন,” কোন অপরাধে তাকে হত্যা করেছিলে?”( সুরা তাকভীর)।
রাসুল সঃ বলেছেন যে, ব্যক্তির কন্যাসন্তান হবে, সে যদি তাকে জীবিত কবর না দেয়,তার প্রতি তাচ্ছিল্যমূলক আচরণ না করে এবং নিজের পুএসন্তানকে কন্যাসন্তানের ওপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন।” ( মুসলিম শরীফ) । তিনি আরও বলেছেন, কন্যাসন্তানদেরকে ঘৃনা করবে না,কারণ, আমি স্বয়ং কন্যাদের পিতা।তিনি আরও বলেন, পিতা জীবিত থাকতে পুএ বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তার লালন-পালন করা যেমন পিতার কর্তব্য, তেমনি মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তার জন্যও পিতার অনুরুপ কর্তব্য রয়েছে। পুএ বয়ঃপ্রাপ্ত হলে পিতা তাকে উপার্জন করার জন্যে বাধ্য করতে পারে,কিন্তু কন্যাসন্তানকে তা করতে পারেন না। রাসুল সঃ আরও বলেছেন যে, ” আল্লাহ যদি কন্যাসন্তানদের মাধ্যমে কাউকে কোন রকম পরীক্ষায় ফেলেন আর সে যদি তাদের প্রতি সদয় আচরণ করে,তাহলে ঐসব কন্যাসন্তান তার জন্যে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার কারণ হবে।” ( বুখারী শরীফ)।
৩.সহধর্মিণীরুপে নারীঃ ইসলামের পূর্বে স্বামীর নিকট নারীর কোন মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। স্ত্রী চরম অমর্যাদা, অপমান ও অস্মানের পাএী ছিল। অস্হাবর সম্পত্তির মত স্ত্রীকে যদৃচ্ছা ব্যবহার করত। স্ত্রী ছিল বড়ই অসহায়। স্বামীর সম্পদে তার কোন অধিকার ছিল না।স্বামীর মৃত্যুর পর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে স্ত্রী কোন অংশ পেত না।বিধবাদের এ অসহায় অবস্হা দূর করার জন্যে আল্লাহ তাআলা পবিএ কুরআনের সুরা নিসার ১২নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা যদি কোন সন্তান না রেখে মৃত্যু বরণ কর,তাহলে স্ত্রীরা তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশের মালিক হবে। আর তোমাদের সন্তান থাকলে স্ত্রীরা পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ। “স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন যে, “তোমরা স্ত্রীদেরকে অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করে নিজেদের উত্তরাধিকারের সম্পদে পরিণত করবে না।এটা তোমাদের জন্যে আদৌ হালাল হবে না।”
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন যে, ” তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। ( তিরমিযী শরীফ) । তিনি আরও বলেছেন যে, ” সারা পৃথিবীই সম্পদ। তবে পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নেককার স্ত্রী। “আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে যে, ” একদা এক সাহাবী রাসুল সঃ কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমাদের ওপর আমাদের সহধর্মিণীদের কি অধিকার আছে? রাসুল সঃ বলেন, তুমি যা খাবে, তোমাদের সহধর্মিণীদেরকে তা খেতে দিবে, তোমার সাধ্যানুযায়ী তাদের মর্যাদা অনুযায়ী পরিধেয় বস্ত্র পরিধান করতে দিবে, তাদের মুখমন্ডলে আঘাত করবে না, তাদেরকে গালিগালাজ করবে না এবং তাদেরকে নিজ গৃহ ছাড়া অন্য কোথাও বিচ্ছিন্ন রাখবে না। ” ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ অভিশপ্ত নারীকে কল্যাণময়ী,মহিমাময়ী এবং পূর্ণময়ী সহধর্মিণীর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেন,”নারীর প্রতি পুরুষের যেমন অধিকার আছে, তেমনি রয়েছে পুরুষের প্রতি নারীর অধিকার। ” নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিখ্যাত খৃষ্টান পন্ডিত পিয়েরে ক্রাবাইট বলেন,” Muhammad S was probably the greatest Champion of women’s rights,the world has ever seen.”
নারীর এ মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান লুন্ঠিত হয়েছে যখন নারী ঘর থেকে বাইরে পা রেখেছে। এর আগে নারী ঘর- গৃহস্হালী ও সন্তান লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বর্তমানে নারী ঘর- গৃহস্হালী ও সন্তান লালন-পালন বাদ দিয়ে অফিস,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপনী,নাট্যমঞ্চ ইত্যাদিতে প্রবেশ করেছে। ফলে পুরুষেরা কেবল বাইরের কাজ করে। আবসর পেলে নারীকে ঘর ও বাইর উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয়।অতিরিক্ত দৈহিক শ্রমে নারী ক্লান্ত এবং হতশ্রী। বিসর্জিত হয় নারীত্ব এবং মর্যাদা। সন্তানের গর্বিত মাতা হয়ে সংসার ধর্ম পালনের স্বাভাবিক আনন্দ থেকে নারী বঞ্চিত। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেছেন যে, ” নারীদের পতনের যুগ সূচিত হয়েছে যখন নারীরা ঘরের চার দেয়াল ডিঙিয়ে বাইরে পা রেখেছে। ” মুসলিম মহিলাদের প্রতি আমার সবিনয়ে অনুরোধ, আপনারা ইসলামের অনুশাসন মেনে চলুন আর সুখী – সমৃদ্ধ জীবন গঠন করুন। আল্লাহ হাফিজ।