ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - মঠবাড়িয়ায় গুলিতে পাঁচজন নিহত এক মাসেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই

মঠবাড়িয়ায় গুলিতে পাঁচজন নিহত এক মাসেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই

আজকের মঠবাড়িয়া ডেক্স: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাফা ডিগ্রি কলেজ ভোট কেন্দ্রে হামলা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে পাঁচ ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনার এক মাস পূর্ণ হলো আজ। গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ধানিসাফা ইউনিয়নের এ কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে রাতে গুলিতে হতাহতের ঘটনায় ১৩শ’ অজ্ঞাত লোকের বিরুদ্ধে তখন যে মামলা হয়েছে স্থানীয় সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে তার তদন্তে অগ্রগতি নেই। গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামিও। পাশাপাশি এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, পুলিশের ডিআইজি ও এসপি’র গঠিত পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে থাকলেও তার পরবর্তী কার্যকারিতা কি হবে তাও স্পষ্ট নয়। উপরন্তু জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানিক হার রহমানকে প্রতিবেদন দাখিলের পরে অন্যত্র বদলী এবং স্ট্যান্ডরিলিজ করায় এ কমিটির ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এমনকি এ কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেননি কমিটির অন্যতম সদস্য মঠবাড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ফরিদউদ্দিন।

ভোট কেন্দ্রে হামলা, কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটকে আক্রমণ, ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মঠবাড়িয়া থানার পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নাসির উদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ইত্তেফাককে জানান, মামলার বাদী ও সাক্ষীগণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অস্থানীয় হওয়ায় আসামিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। মামলায় স্থানীয় কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই, কেউ আগ্রহী হয়ে সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসছেন না। যে কারণে তদন্ত কাজে অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে স্থানীয়ভাবে সোর্স সংগ্রহ করে আসামিদের নাম-পরিচয় চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহতদের খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা চলছে, গুলিতে নিহত পাঁচজন যেমন ঘটনাস্থলে ছিল তেমনি গুলিবিদ্ধ আহতদের খুঁজে পাওয়া গেলে আসামি শনাক্ত করা সহজ হবে। আহতরা এলাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধারণা করছেন। তিনি আরও বলেন, যারা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন বা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ পুলিশের হাতে এখনও না আসায় মামলার তদন্ত কাজে গত এক মাসেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি।

এদিকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের করা তিনটি প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার কথা হয় পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ ওয়ালিদ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, জেলা পুলিশের করা তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য ঘটনার পরপরই প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার যে বর্ণনা এসেছে সে সম্পর্কে পুলিশ সুপার বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য ফুটে উঠেছে। মঠবাড়িয়া থানায় দায়েরকৃত ওই ঘটনা সংক্রান্ত মামলার তদন্তে এ প্রতিবেদন অনুসরণ করা হবে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত স্বাভাবিক গতিতে চলবে। জেলা প্রশাসক মোঃ খায়রুল আলম সেখ ইত্তেফাককে বলেন, জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যথাসময়ে পেয়ে আমরা তা বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। কমিটির সদস্য মঠবাড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত কাজে অংশ নিলেও প্রতিবেদন দাখিলের সময় দেশের বাইরে ছিলেন বলে তিনি স্বাক্ষর করেননি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে তার মতামত প্রয়োজনে গ্রহণ করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বদলিকে জেলা প্রশাসক রুটিন বদলি বলে আখ্যায়িত করেন, বলেন- প্রায় সাত বছর এই জেলায় কর্মরত থাকার কারণে তিনি বদলি হয়েছেন।

অসহায় পরিবারগুলোর কী হবে?

গতকাল বৃহস্পতিবার মঠবাড়িয়ার নিহত পাঁচজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনও শোকে মুহ্যমান নিহতদের স্বজনরা। এত বড় ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাদের স্বজনরা।

উদয়তারা বুড়িচর গ্রামের সোলায়মান তালুকদারের (২৩) চাকরি হয়েছিল বেসিক ব্যাংকে। গত ২০ এপ্রিলের মধ্যে স্টাফ পদে চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল। তার মা রাহিমা বেগম ও ব্যবসায়ী বাবা আনোয়ার তালুকদার এখনও প্রাণপ্রিয় সন্তানকে হারানোর কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। বুড়িরচর গ্রামের দিনমজুর নিহত বেল্লাল মোল্লার (৩৫) ছোট দুই ছেলে। বাবাকে হারিয়ে তারা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। একই গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী সোহেল মাতুব্বর (৩০) সস্ত্রীক ঢাকা থেকে এসে নির্বাচনী সহিংসতার শিকার হয়ে মারা যান। তার পরিবারের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। একই অবস্থা ভাণ্ডারিয়ার হরিণপালা গ্রামের নিহত অটোচালক কামরুল মৃধার (২৩)। বিধবা স্ত্রী বৃষ্টি বেগম অন্তঃসত্ত্বা। বৃদ্ধ বাবা সাবেক স-মিল শ্রমিক সাইদুল মৃধা একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাঁচার তাগিদে আবার পুরোনো পেশায় ফিরে গেছেন। একই গ্রামের নিহত শ্রমিক শাহদাতের (৪৫) পরিবারের অবস্থাও অনুরূপ।
(সূত্র: ইত্তেফাক)

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...