ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - ভাস্কর্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ

ভাস্কর্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ

মেহেদী হাসান বাবু ফরাজীঃ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম শুধু বাংলাদেশের জন্য নাজিল হয় নাই! ইসলাম নাজিল হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।আবেগে ও মনগড়া কিছু করা থেকে বিরোত থাকা উচিৎ! প্রত্যেকটি দেশ ভাস্কর্য কিংবা সৃষ্টিশীল স্থাপত্যকর্মের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ অঞ্চলের ইতিহাস,ঐতিহ্য ইত্যাদি তুলে ধরে ।

ভাস্কর্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ। এটি দেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পরিচায়ক। যেখানে তুলে ধরা হয় হাজার বছরের ইতিহাস। মুসলিম বিশ্বেও রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। যেসব ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের বীরত্বগাথা, মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজ সংস্কৃতির নানা দিক।ভাস্কর্য আছে সৌদি আরব এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে মিশর , তুরস্ক, ইরান , পাকিস্তান, ইরাক, ওমান , কাতার সহ সবগুলো মুসলিম দেশেই অসংখ্য নয়ানাভিরাম ভাস্কর্য রয়েছে। সৌদি আরব, ইরান এবং ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক মুসলিম দেশে এতসব ভাস্কর্য নিরাপদে টিকে থাকতে পারলেও বাংলাদেশে কেন ভাস্কর্য নিয়ে বিশেষ মহলের এত গা-জ্বালা? এটা কি এ কারণে যে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ ভাস্কর্যই ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির জনকের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের স্মারক! এ কথা সবাই জানে, এ দেশের প্রধান মৌলবাদী গোষ্ঠীটি এসব আন্দোলন-সংগ্রামের ঘোর বিরোধী ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধকে ওরা মেনে নেয়নি আজও। হয়তো এখনো বাংলাদেশকে পাকিস্থান বানানোর স্বপ্ন দেখে ওরা! সেটা যদি নাও পারে, অন্তত একটি ‘বাংলাস্থান’ বানাতে ওরা মরিয়া! মিশর কিংবা সৌদি আরবের ভাস্কর্য নিয়ে সেখানকার কোন মানুষ কোন আপত্তি করে না, মিছিল মিটিং করে ভাঙ্গাভাঙ্গি করতে যায় না । সৌন্দর্যবোধের সাথে গ্রহন করে । পৃথিবীর সবকটি দেশের মানুষেরই এইসব বিষয়ে সৌন্দর্যবোধ প্রখর। এই সকল মুসলিম দেশের মুসলমানরা জান্নাতে যেতে চায় না হয় তো! শুধু আমাদের দেশের কিছু আলেমগণ এই বিষয়গুলো অপব্যাখা দিয়ে অশান্তি তৈরি করতে চান ।তারা কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়েই চলছেন! পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট বলা আছে: মূর্তিপূজা শয়তানের কাজ (সূরা মায়েদা ৯০) এবং “এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ?” (সূরা আম্বিয়া ৫২)।

অর্থাৎ কুরঅানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে। কারণ, মূর্তি স্রষ্টার অংশীদার অর্থাৎ শিরক হয়ে দাঁড়ায়। এটাই মানুষকে মুশরিক বানায়। তাহলে যে ভাস্কর্যে আরাধনা ইবাদত করা হয় না, যে ভাস্কর্য সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুসজ্জিত করে সে ব্যাপারে কুরঅান কী বলে? এখানে আমরা অবাক হয়ে দেখব কুরঅান সুস্পষ্ট ভাষায় ভাস্কর্যের অনুমতি দেয়। উদ্ধৃতি: “তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩)

নবীজি (সা.) ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কুরঅানের ওই আয়াতের বিরুদ্ধে যেত, সেটা সম্ভব নয়। আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নয়।

পরিষেশে এটুকুই বলবো ভাস্কর্য কে আমি সৌন্দর্যের প্রতিক হিসাবে দেখতে চাই কিন্তু ভাস্কর্য পূজারী হিসাবে নয়।ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য পূজা করা হারাম হারাম এবং হারাম। অামরা মুসলমানরা ভাস্কর্য পূজা করি না। অামরা এক অাল্লাহ্ কে সেজদা করি।
কোন মুসলমান মূর্তি পূজা করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সরল পথে নিয়ে আসে। অন্তরে চিরস্থায়ী প্রশান্তি স্থাপন করে।

ইসলাম কখনোই একটি স্যাডিস্ট, যুদ্ধবাজ, কঠোর কিংবা কথায় কথায় শাস্তির হুলিয়া জারি করা ধর্ম নয়। বরং ইসলাম মানুষকে।শুধু খেয়াল রাখবেন, আপনাদের শ্রদ্ধা জানানো ও চেতনা বাস্তবায়ন আল্লাহ এবং তার রাসূল (স:) এর বলে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম না করে। আপনাদের কোনো কর্মকাণ্ড যেন শিরকে পরিণত না হয়।ব্যস, শুধু এতটুকু সাবধান থাকুন।আর যারাই আপনাকে দেযোখের ভয় দেখিয়ে দুনিয়ার জীবনকেই একটি সাক্ষাত জাহান্নামে পরিণত করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে-তাদের বলুন, আল্লাহ মহান, পরম করুণাময়। তিনি মানুষকে আযাব দিয়ে আনন্দিত হন না। বরং তার বান্দাদেরকে আযাব দিতে তিনিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান। আর এই কাঠমোল্লা ও ধর্ম ব্যবসায়ীরদের বলার কিছু নেই তারা স্বাধীনতা থেকেই তারা অপব্যাখ্যা দিয়ে চলছে!

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ এর মধ্যে একজনও হুজুর নাই, ৬৮জন বীরউত্তমের মধ্যে একজনও মাওলানা নাই, ১৭৫ জন বীর বিক্রমের মধ্যে একজন মুফতি নাই, ৪২৬ জন বীর প্রতীকের মধ্যে একজনও আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সম্পন্ন মুফাচ্ছের নাই, তবে দুইজন নারী রয়েছে। দেশ কে স্বাধীন করতে কত ধরণের মুক্তি বাহিনী গঠিত হয়েছে কিন্তু একজন হুজুরের নেতৃত্ব ৫-১০ জন মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে কোন প্রতিরোধ যুদ্ধের নজির পাওয়া যায়নি। নজির পাওয়া গেছে পাকিস্তানি কর্তৃক বাংলার মা বোনদের ধর্ষণে সহযোগিতায়। অথচ ১১ বছরের শহীদুল যুদ্ধ করেছে, উপজাতিরা যুদ্ধ করেছে, তারামন বিবিরা যুদ্ধ করেছে, বিদেশিরা যুদ্ধ করেছে। তখন কেউ দাবি করেনি ৯০% মুসলমানদের দেশ। এখন দেশ প্রেম চুইয়া পড়ে।আজ আমাদের ওলামাগণ মাইকে চিল্লাইয়া দেশপ্রেমের বুলি উড়াচ্ছেন। অথচ তারা সুদ ঘুষ দুর্নীতি নিয়া মাঠে সোচ্চার দেখা যায় না! তালেবান কর্তৃক মসজিদে/ স্কুলে আত্মঘাতী হামলায় নিরীহ মুসলিম/শিশু হত্যাকে সমর্থন করে, আমাদের শিশুরা যখন বলৎকার হয় তখন চিল্লায় না!

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনাটির প্রতিবাদে সরকারের ৬৪জেলায় জাতির পিতার নান্দনিক ৬৪টি ভাস্কর্য স্থাপন করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটি কোনও ধর্মী ইসুৎ নয়! এটি ধর্মব্যবসায়ীদের ধর্মান্ধদের নিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...