নূর হোসাইন মোল্লাঃ এক সময়ে শিক্ষক ছিলেন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি।এলাকার সবাই তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন।এ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কারণ ছিল শিক্ষকের একাগ্রতা, আন্তরিকতা,সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা। বর্তমানে শিক্ষককে কেউই তেমন সম্মান ও শ্রদ্ধা করে না। কারণ, শিক্ষক শ্রেনী কক্ষে পাঠদানে অবহেলা,জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তাদানে অনীহা,শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অবহেলা করা,কোচিং বাণিজ্য, অসাধুতা এবং নানাবিধ অপ্রতিষ্ঠানিক কার্যকলাপ ও দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় সম্পৃক্ততা। ইদানীং যৌন হয়রানির মত অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজ শিক্ষকের নিকট থেকে যে পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রত্যাশা করে তা হচ্ছেঃ
১। শিক্ষক হবেন জ্ঞান তাপস,বিজ্ঞান মননশীল ও চরিত্রবান।
২। শিক্ষক হবেন সহজ- সরল,অকপট,নিরাভিমান,সত্যের সন্ধানী ও মধুর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।
৩। শিক্ষার মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
৪। পাঠদান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনমত শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা।
৫। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা।
৬। যথাযথভাবে পাঠদান করা এবং শিক্ষার্থীদের সাধারণ অপরাধে শাস্তি পরিহার করা।
৭। শিক্ষাদানের জন্যে আত্মপ্রস্তুতি বা পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
৮। সোহাগ ও শাসনের জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা।
৯। শিক্ষার্থীদেরকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করা।
১০। শিক্ষার্থীদের আত্মসম্মান সৃষ্টিতে সহায়তা করা।
১১। অভিভাবকদের সাথে সংযোগ সাধন করা।
১২। শ্রেণীকক্ষে যা পড়াবেন এবং যতটুকু পড়াবেন তা সহজভাবে পড়াবেন যাতে সবাই বুঝতে সক্ষম হয়।
১৩। আনন্দের মাধ্যমে পাঠদান করে শিক্ষার্থীদেরকে সজীব,প্রাণবন্ত ও মনোযোগী করা।
১৪। শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ,দৃষ্টিভঙ্গী ও নৈতিকতা উন্নয়নে সহায়তা করা।
১৫। শিক্ষককে আত্মসমীক্ষা করতে হবে।
১৬। বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করবেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে নিজের সন্তান হিসেবে দেখবেন।
১৭। শিক্ষককে অধ্যবসায়ী, সামাজিক ও কর্তব্যনিষ্ঠা হতে হবে।
১৮। শিক্ষক ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে উহা মেনে চলতে উৎসাহিত করবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকগণ যথাসম্ভব শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বই পড়তে উৎসাহিত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে অবস্হান এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে নির্দেশ প্রদান করবেন।
এগুলো অনুসরণ ও অনুকরণ করলে সবাই সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।মনে রাখতে হবে, প্রজ্ঞাবান, জ্ঞান ও দক্ষতায় সুনিপুণ তথা সুশিক্ষক জাতীয় সম্পদ। জাতির বুনিয়াদ গঠন এবং জাতীয় আদর্শ ও ঐতিহ্যের ধারা সংরক্ষণে শিক্ষকের ভূমিকা অন্য যে কোন পেশাজীবীর চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।