ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - চলাচলে মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান করা উচিৎ

চলাচলে মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান করা উচিৎ

হিজাব কি? হিজাব অারবি শব্দ।এর অর্থ হচ্ছে পর্দা বা মুসলিম নারীদের মুখমন্ডল ও হাতের পাতা ছাড়া অাপাদমস্তক অাবৃত করে রাখা । প্রয়োজনে নারীদের জনসমক্ষে চলাচলের জন্যে চক্ষু ছাড়া শরীরকে বস্ত্র দ্বারা মার্জিতভাবে অাবৃত করা বা ঢেকে রাখাকেও হিজাব বলে। পবিএ কুরআনের সুরা আরাফ- এর ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ” হে মানব সন্তান , আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর আবৃত করার জন্যে পোষাক অবতীর্ণ করেছেন।ইহা তোমাদের শোভাবর্ধক। ” এ আয়াতের মর্মানুযায়ী শরীর আবৃত করা প্রত্যেক নারী ও পুরুষের জন্যে ফরজ করা হয়েছে। পুরুষের ন্যায় নারী সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।নারী ছাড়া সমাজ ও সভ্যতার কল্পনা করা যায়না।সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে যেমন একজন পুরুষের জন্ম হয়, অনুরুপ একজন নারীও সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।পুরুষের যেমন জ্ঞান-গরিমা ও বুদ্ধি-বিবেচনা অাছে, অনুরুপ নারীর মধ্যেও তা বিদ্যমান।ইসলামে নর-নারীর অধিকার সমান।ধর্মীয় সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক, অাইন-বিচার,বিবাহ-তালাক,পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে তাঁর ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছে। সুতরাং মুসলিম নারীকে তাঁর স্বাধীনতা ও অধিকার অাদায়ের নামে হিজাব বিহীন বা বেপর্দা অবস্থায় রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার ও অফিস অাদালতে অবাধ বিচরণ করা নিঃসন্দেহে ইসলাম বিরোধী কাজ।হিজাববিহীন চলাচলে যুবকদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় যা ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে। যারা নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার অাদায়ের জন্যে মায়া-কান্না করছেন তাদের নিকট প্রশ্ন,নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা অাপনারা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন? নারীরা কেন প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? কেন প্রতিদিন নারী ধর্ষিতা হচ্ছে? কেন প্রতিদিন নারী অপহরণ ও খুন হচ্ছে? কেন দিন দিন নারী নির্যাতনের হার ও নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এগুলো রোধ করার জন্যে সরকার বহু কঠোর অাইন প্রনয়ন করেছেন।কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে কি? এর কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে,নারী নির্যাতনের প্রকৃত উৎস চিহ্নিত না করেই বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।ইসলাম সব ধরণের অপরাধের উৎস ও কারণ চিহ্নিত করেছে এবং উহা রোধের জন্যে নির্দেশ দিয়েছে।বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতন এবং নারী ঘটিত অপরাধের মূল কারণ হচ্ছে হিজাব বিহীনতা।যতদিন নারীরা শরীয়ত সম্মত হিজাব ব্যবহার না করবে, ততদিন নারীরা নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবেনা।
পবিত্র কুরঅানের সূরা নূরের ৩০-৩১ নং অায়াতে মহান অাল্লাহ বলেন,”হে নবী, ঈমানদার পুরুষদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌন চরিত্রের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্যে অধিক পবিত্রতা রয়েছে।তারা যা করে অাল্লাহ সে বিষয় পুরোপুরি অবহিত।অার ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন চরিত্রের হেফাজত করে ও সাজ-সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে,তবে এমনিতেই প্রকাশ হয়ে পড়ে তা ব্যতীত।তারা যেন নিজ বুকের উপর চাদর বা ওড়না ফেলে রাখে”। সুরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ” হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও ঈমানদার লোকদের মহিলাগণকে বলে দিন,তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এটা অধিক নিয়ম ও রীতি, যেন তাদেরকে চিনতে পারা যায় ও তাদেরকে উত্যক্ত করা না হয়। ” সূরা অাহযাবের ৩৩নং অায়াতে অাল্লাহ বলেন,” হে নারীগণ! তোমরা পুরাতন জাহেলী যুগের মতো সাজগোজ করে বেরিও না। ” হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সঃ) বলেছেন, “অামার পর এমন কিছু নারীর অাবির্ভাব ঘটবে, যারা পোশাক পরিধান করেও অনাবৃত থাকবে অর্থাৎ তারা এমন পোষাক পরিধান করবে যা দ্বারা শরীরের সর্বাঙ্গ আবৃত করবে না, কিয়দংশ আবৃত করবে আর অনেকটা আনাবৃত থাকবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। হযরত ওমর রাঃ বলেছেন, নারীদেরকে এমন আটসাট পোষাক পরিধান করতে দিও না যাতে শরীরের গঠন পরিস্ফুট হয়ে পড়ে। অাজ মুসলিম মহিলাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে,তারা আটসাট পোষাক পরিধান তথা অশ্লীলতার পথ পরিহার করে জান্নাতের পথ অবলম্বন করবে কিনা।

পবিত্র কুরঅানে মহান অাল্লাহ নারীদেরকে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন।অথচ অামাদের সমাজে চলছে পাশ্চাত্যের অবাধ অন্ধ অনুকরণ।নিত্য নতুন অাঙ্গীকে হচ্ছে সৌন্দর্য্য প্রদর্শনী। নারী অাজ পরিণত হয়েছে ভোগের সামগ্রী ও বানিজ্যের পন্যে।অাদর্শ মা, কন্যা ও বোন হিসেবে নারীর অস্তিত্ব বিপন্ন। এ অভিশাপ থেকে সমাজ ও দেশকে মুক্ত রাখতে হলে সবাইকে এগিয়ে অাসতে হবে।পরিতাপের বিষয়,অামাদের সমাজে যারা ধর্ম-কর্ম পালন করেন তাদের অনেকেই নিজেদের স্ত্রী ও কন্যাদেরকে হিজাব ব্যবহার করার বিষয়ে উদাসীন।
অামাদের সমাজে অনেক নারী অাছেন যারা হিজাবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু তারা তা পালন করেন না।অাবার অনেকেই হিজাব সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষন করেন,কিন্তু তা পালনে এগিয়ে অাসেন না।এর কারণ হল হিজাব সম্পর্কে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, হিজাবহীনতার পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং পুরুষ অভিভাবকদের সীমাহীন ঔদাসীন্য ও দায়িত্বহীনতা।
হিজাব পরিধান সম্পর্কে অমুসলিম মনীষী অধ্যাপক ভোন হরমর বলেন যে, পর্দা তথা হিজাব পরিধান করা নারীদের সুরক্ষা ও মান-মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এক বিশাল বস্তু, যা আকাঙ্ক্ষার যোগ্য।
কেউ কেউ মনে করে হিজাব প্রগতির অন্তরায়। তাদের মতে হিজাব হচ্ছে স্বাধীন মহিলাকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার শামিল।অথচ এ হিজাব নরপশুদের হাত থেকে রক্ষা করার ভূষণ। হিজাব মুসলিম মহিলাকে অমুসলিম মহিলা থেকে পৃথক করে মর্যাদার আসনে আসীন করে।
পরিতাপের বিষয়, অধিকাংশ মহিলারা মহান সৃষ্টিকর্তার বিধানের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের খেয়াল খুশীমত বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করে।ইহা তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে আদৌ কল্যাণকর নয়।

নারীদেরকে মর্যাদার অাসনে অধিষ্ঠিত করতে হলে, নির্যাতনের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হলে, সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করে একটি সুন্দর ও অাদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এবং পরকালীন মুক্তি পেতে হলে অামাদের নারী-পুরুষ সবাইকে যথাযথ ভাবে পর্দা বা হিজাবের বিধান মেনে চলতে হবে। হিজাব একটি বাস্তব প্রয়োজন। হে অাল্লাহ, মুসলিম নারীদেরকে চলাচলে হিজাব ব্যবহার করার তাওফিক দান ও হেফাজত করুন।আল্লাহ হাফিজ।

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...