ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - কৃষি ও বাণিজ্য - কৃষি দিবানিশি

কৃষি দিবানিশি

আবহমান বাংলার কৃষি আসলে এগিয়েছে কৃষকের লোকায়ত জ্ঞানে। কৃষিজমিতে সেচের এই উদ্ভাবনীটাও কৃষকের লোকায়ত জ্ঞান। উপকূলে আবাদী জমিতে সেচ ব্যাবস্থা আদিতে এরকমই ছিলো। পরে সমাজভিত্তিক সমাবয়ে সেচ ব্যবস্থাপনাও গড়ে ওঠে। বিএডিসির পাওয়ার পাম্প । ছেলেবেলায় আমার গ্রামের বাড়িতে একদিন সদর থেকে সবাই মিলে পাওয়ার পাম্প মেশিন টেনে আনতো। সেচ মেশিন আনার সময়ে পিছনে জীবনে অনেক দৌড়েছি আমি। আমার বাড়ির পূবের খালের পাড়ে এক ভিটায় সবাই মিলে সেচ মেশিন বসাতো। মাঝ মাঠ অবধি সেচ নালা কাটতো সবাই মিলে। তারপর সেচ মেশিনে হ্যাণ্ডেল ঘুরিয়ে পাম্প চালু হতো। পাম্প মেশিনের আওয়াজ আর মেশিনের চোঙার কালো ধোঁয়ার মধ্যে লাফাতে লাফাতে আর পাম্পের ঝিড়ি ঝিড়ি জলধারার ইচ্ছে গোসল সেরে আমি একদিন বড় হয়ে যাই।

মাঠের সেচ নালার ভেতর কত যে মাছ মিলতো । আমি ধরেছি আর সিলভারের ঘটিতে ছোট মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। আমার শৈশব আসলে এক মেঠেল বালক ।
আমার শৈশবের এইসব আবাদি জীবন বদলে গেছে। সমবায়ের সেই সেচ পাম্প নাই। মান্ধাতার আমলে কৃষকের বানানো টিনের ডুরি সেঁউতি সেচ জিনিসটাও নাই।
মানুষ আমি বড় হতে হতে আধুনিক আর জটিল জীবনে হা পিত্যেসে মরে যাই। কৃষক মরে, মরে কৃষি । সেচের জন্য রাষ্ট্র কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালে। কৃষি বিভাগের কত রকম যে প্রজেক্ট চলে প্রান্তিক কৃষক সবটাও জানেও না। তবু সেচ ব্যবস্থা আজও কৃষক বৃষ্টি আর জোয়ারের জলধারায় যেন নির্ভরশীল।
ফলস মরে খড়ায়, মরে অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টিতে। কোনও কোনও জনপদের ফসল মরে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতায়। আমাদের উপকূলে স্লুইজগেটগুলো অকার্যকর। স্লুইজগেটগুলো অরক্ষিত, প্রবাশালীরা এতে জাল পেতে মাছ শিকারে আটকে দেয়। প্রবহমান খাল গুলো বাঁধ আর মাছধরার গড়া দিয়ে জলধারা আটকে দেওয়া আর খালগুলোতে দখল দুষণে খাল এখন মরা।

সেচের এই সংকট গভীরে রেখে কৃষি বিপ্লব একটা দায়সারা বিষয় বটে। কৃষি ও কৃষকের সাথে প্রতারণাও কম চলে না এই দেশে। নকল সার কীটনাশক তো আছেই। কৃষির প্রণোদনা ও নানা পরিষেবা প্রান্তিক কৃষকের কাছেও যথারীতি পৌঁছায় না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। প্রান্তিক কৃষকরা নিয়ত লড়াইটা চালালেও রাস্ট্রের পদক সম্মানা তাদের জোটেনা।

আমরা সংকট গভীরে রেখে কৃষির বিপ্লব চাই। কৃষি নিয়ে বড় বড় সেমিনার হয় সেখানে প্রান্তিক কৃষকেরা কথা বলেনা। কথা বলে বুদ্ধিজীবী আর পরিকল্পকরা।

সামনে যে দিন সেখানে কৃষি নিয়ে আর নয়ছয়ের সুযোগ নেই। বাঁচতে হলে কৃষিকে বাঁচাতেই হবে। পেটে খাবার চাইলে কৃষির বিকল্প লড়াই আর জানা নেই।
কিভাবে বাঁচবে আমাদের শস্যভাণ্ডার কৃষি ? আমার খাল দখলে মরে যাচ্ছে, সেচ ব্যবস্থাপনা অকার্যকর, স্লুইজগেটগুলো এখন অকার্যকর, পতিত জমি আবাদহীন,চরাঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থানা নেই, তিন ফসলী জমি এখন এক ফসলী হওয়ার উপক্রম, উন্নত বীজ নিয়ে সংশয়ে কৃষক । সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাপনা বিলুপ্ত। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটগুলো দায়সারা। এ সব কিছুর সংকট নিয়ে এখনই ভাবনা জরুরী।

পেটে ভাত তো দিতেই হবে। খাদ্য সংকটে আমরা মারা পড়তে পারিনা। আমাদের এখন দিবানিশি কৃষি নিয়ে ভাবনা সমযেরই ভাবনা।
🌿

দেবদাস মজুমদার
২৬ এপ্রিল-২০১০
পূর্ব শিংগা
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...