ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মঠবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত : ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আইনী বাধা নেই

মঠবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত : ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আইনী বাধা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচন আবারও স্থগিত করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণী মামলার জটিলতায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। র‌বিবার বি‌কে‌লে মঠবাড়িয়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এর আগে, গত ৩১ মে মঠবাড়িয়া পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিলে আগামী ১৭ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছিলো।
অপরদিকে জেলার নবগঠিত ভাণ্ডারিয়া পৌরসভায় ভোটিার তালিকা হালনাগাদ করণে নানা অভিযোগ ওঠায় এ পৌরসভার নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নির্বাচন কমিশন। ফলে ভাণ্ডারিয়া পৌরসভায় নির্বাচনে এখন আর বাধা নেই। আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মঠবাড়িয়া পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণ-সংক্রান্ত ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। শেষ ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ওই গেজেট নোটিফিকেশন রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করেছে আদালত। আদালতের আদেশের কারণে মঠবাড়িয়া পৌরসভার বর্ধিত সীমানায় নির্বাচন করার সুযোগ নেই। এ কারণে কমিশন মঠবাড়িয়া পৌরসভার ঘোষিত তফসিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসেন বলেন, মঠবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল রোববার। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন স্থগিতের চিঠি বিকেলে পাওয়ার পর সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
মঠবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ১ জুন মঠবাড়িয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে মঠবাড়িয়া পৌরসভা সীমানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের মো. ওহাব মাতুব্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট সীমানা সম্প্রসারণ কাজে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয় এবং এরপর বিভিন্ন সময় স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে আদালত।
সবশেষ ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি মঠবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের ৯ মে পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল পৌর পরিষদকে বিলুপ্ত করে পৌরসভায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রশাসক নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। শেষে ১৫ মে ২০২৩ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আরিফ উল হক পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ পেয়েছেন।
অপরদি‌কে নির্বাচনের ভোটার তা‌লিকা সং‌শোধন করার জন‌্য মামলা করায় ভান্ডা‌রিয়া পৌরসভা নির্বাচন স্থ‌গিত ক‌রা হ‌য়ে‌ছিল। গত র‌বিবার ভান্ডা‌রিয়া এক মেয়র প্রার্থী নির্বাচন স্থ‌গি‌তের বিপ‌ক্ষে আপিল কর‌লে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম নির্বাচনের ভোটার তালিকা সংশোধনের নির্দেশ সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। এতে ক‌রে ভান্ডারিয়া পৌর নির্বাচনে আর কোন বাধা নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে যথাসময়ে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমকে রহমান।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার সুযোগ আইনে নেই। কিন্তু রিটকারী আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। ওই মামলায় ভোটার তালিকা সংশোধনের আদেশ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করেন হাইকোর্ট। তিনি আরও জানান, আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে যথাসময়ে ভান্ডারিয়া পৌর নির্বাচন হতে আইনগত আর কোনো বাধা নেই।
গত ৩১ মে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক রিট মামলা করা হয় হাইকোর্টে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় নির্বাচনের ওপর কোনো স্থগিতাদেশ আসেনি। তবে আরেকটি রিট মামলায় ভোটার তালিকা ২৮ দিনের মধ্যে সংশোধনের আদেশ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করে দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মাহবুব উল ইসলামের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আব্দুল হালিম হাওলাদারের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন পৌর নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী মাহিবুল হোসেন। তার পক্ষে শুনানিতে অ্যাডভোকেট এমকে রহমান বলেন, হালিম হাওলাদারের ভাই মাসুম হাওলাদার ভোটার তালিকা সংশোধনের নির্দেশনা চেয়ে রিট মামলা করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সেই মামলায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে হালিম হাওলাদের মামলায় হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ১৪ ধারা ও ভোটার তালিকা বিধিমালা-২০১২ এর ২৬ বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা সংশোধন বা নির্বাচন চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এ ধরনের মামলা করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তাই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের প্রার্থনা করা হয়।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...