ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - মাদকের করাল গ্রাসে বাংলাদেশ !

মাদকের করাল গ্রাসে বাংলাদেশ !

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে মাদক। প্রশ্ন হচ্ছে মাদক কি? যে সব বস্তু বা পানীয় দ্রব্য পান করলে সুস্থ মস্তিস্কের বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে এবং নেশা সৃষ্টি করে সেগুলোকে আমরা মাদক বলি। মাদক একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বিশ্বের কোথাও এমন একটি দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে মাদকের কালো ছায়া দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে স্পর্শ না করছে। মাদকাসক্তি হচ্ছে মানব সভ্যতার একটি ভয়ানক ব্যাধি। তরুণ এবং যুব সমাজ হচ্ছে দেশের প্রাণ। মাদকের করাল গ্রাসে পড়ছে দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী এবং যুবক-যুবতীরা । দেশের লাখ লাখ তরুণ ও যুব সমাজ মাদকাসাক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশ পঙ্গু হয়ে যাওয়া। মাদক দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নগর, শহর, বন্দর ও গ্রাম -গঞ্জে । কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত মাদকাসক্ত হচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, থেকে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, নারী ও পুরুষ কোন শ্রেণির লোক বাদ নেই মাদকাসক্তি থেকে। দেশের তরুণ ও যুব সমাজ সবচেয়ে বেশি মাদকাসাক্ত । মাদকাসক্তির প্রবনতা শুরু হয় ধুমপানের মাধ্যমে। বিড়ি ও সিগারেটের তামাকের মধ্যে থাকে নিকোটিন জাতীয় এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা ধুমপায়ীর শরীরকে কিছু সময়ের জন্যে সতেজ করে তোলে। কিন্তু পরবর্তীতে নিস্তেজ করে ফেলে। ধুম পানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, পেটের ভিতরে আলসার এবং স্ট্রোক হতে পারে। ধুমপান আমাদের দেশে সাধারণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। ধুমপানকে নেশা অথবা সামাজিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং এটাকে আভিজাত্যের প্রকাশ ও ফ্যাশন মনে করা হয়। গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, বাস-ট্রেন- লঞ্চে, পথেÑঘাটে, দোকান- পাটে, অফিস- আদালতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বত্র ধুমপায়ীদের রাজত্ব। “ধুমপান যে বিষপান” ধুমপায়ীরা তা মনে করেন না। অথচ আসক্তির যেসব দিক রয়েছে ধুমপানের মধ্যে এর সব কারণ বিদ্যমান রয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এক বিশাল অংশ সিগারেটের সাথে গাঁজা মিশিয়ে নেশা করে। তাই ধুমপানকে বলা হয় “সকল নেশার জননী”। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি অর্থাৎ ৫ কোটির বেশি লোক ধুমপানে অভ্যস্ত। এর মধ্যে ২কোটি নারী। ধুমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ২০০৫ সালে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধুমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি আইন পাশ করেন। এ আইনের ৪(২) ধারায় বর্ণিত আছে যে, এ বিধান লঙ্ঘন করলে ধুমপায়ী ৫০ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। পরবর্তীতে অর্থদন্ড ১০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এ আইনটির প্রয়োগ নাই। এ আইনটি বাস্তবায়ন করা হলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে ধুমপায়ীর সংখ্যা হ্রাস পাবে। মাদক ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী বিধায় সমাজে বিভিন্নভাবে মাদকের জাল বিস্তার করেছে। মাদক ব্যবসায়ের সাথে নারীরাও জড়িত। অনেক নারী মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শহর ও গ্রামে নারীরা সরাসরি মাদক বিক্রী করছে। তারা প্রলোভন দেখিয়ে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ -তরুণীদের মধ্যে মাদক ট্যাবলেট বিতরণ করছে। এ ট্যাবলেট সেবন করে তারা আসক্ত হয়ে পড়ে। কোনভাবে একবার কেউ মাদকাসাক্ত হলে অচিরে নেশা তাকে পেয়ে বসে। সে হয়ে পড়ে নেশার কারাগারে বন্দী। এরপর তারা খুঁজতে থাকে এ ট্যাবলেট। তারা জানেনা এ ট্যাবলেট মাদক। এ জন্যে তাদের উচিত অপরিচিত মানুষের নিকট থেকে কোন জিনিস গ্রহণ না করা। আমাদের দেশে কি পরিমাণ মাদক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় এবং কতলোক মাদকাসাক্ত তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নাই।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আমাদের দেশে মাদকাসাক্তের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। জাতিসংঘের তথ্যমতে আমাদের দেশে মাদকাসাক্তের সংখ্যা ৮০ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ । মাদক বিরোধী সংগঠন “মানস” এর সভাপতি ডঃ অপরুপ রতন চৌধুরীর মতে দেশে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মাদকাসাক্ত।বর্তমানে নারীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে চলছে। এদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও কর্মজীবীর সংখ্যা বেশি। পূর্বে সামাজিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নারীরা লুকিয়ে ধুমপান করলেও এখন প্রকাশ্যে ধুমপান করছে। এমনকি তারা হার্ড ড্রাগস যেমন- ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, সিসা, ইত্যাদি সেবন করছে। নানাবিধ কারণে নারী-পুরুষ মাদক সেবন করছে। শরীরের আকার ঠিক রাখা, রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করা ও মোবাইল ফোনে কথা বলা, পারিবারিক অশান্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ, হতাশা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, নতুনত্বের নেশা, বেকারত্ব, মূল্যবোধের অভাব, প্রেমে ব্যর্থতা, ইত্যাদি কারণে তারা মাদকাসাক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া, মাদক দ্রব্যের সহজ প্রাপ্তিও নারীদের মাদকাসাক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। মাদক দ্রব্য যেমন আফিম, গাঁজা, হেরোইন, মারিজুয়ানা, ফেনসিডিল, প্যাথেডিন, কোকেন, ইয়াবা, হাসিস, মরফিন, ইত্যাদি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার থেকে গোপনে আসে। ইয়াবা একটি মারাত্মক নেশাদায়ক ট্যাবলেট। এটি তরুণ-তরুণীদের ব্যাপকভাবে নেশাগ্রস্ত করে তুলছে।

মাদকের কুফলঃ মাদকাসক্তির কুফল অতি মারাত্মক । এটি ধংস করে মেধা, বিবেক,লেখাপড়া ও মনুষত্ব । বিনস্ট করে রেস্নহ,মায়া-মমতা,ভালবাসা ও পারিবারিক বন্ধন । মাদক দ্রব্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। মাদকাসক্তির কারণে শারীরিক, মানসিক ও কর্মশক্তি লোপ পায়। আয়ু কমে যায়। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাদকাসক্তির ফলে যুবক-যুবতীর নৈতিক অধঃপতন ঘটে। মাদকাসাক্তদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। মাদকাসাক্ত ব্যক্তি নেশার খরচ জোগানোর জন্যে নানা রকম সমাজবিরোধী কর্মকান্ড যথা ছিনতাই,চাঁদাবাজি,রাহাজানি,চুরি,ডাকাতি এবং খুন খারাবীতে লিপ্ত হয়। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে নেশার টাকা না দেয়ায় কলেজ ছাত্রী ঐশি রহমান তার পিতা পুলিশ অফিসার ও মাতাকে খুন করেছে। এরকম বহু ঘটনা অহরহ ঘটছে।স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, সন্তান পিতা-মাতাকে এবং পিতা সন্তানকে হত্যা করে।

মাদকাসাক্ত ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জমান খানের মতে “ মাদক সন্ত্রাসের চেয়েও ভয়াবহ”। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত তরুণ ও যুব সমাজ যদি এমনভাবে মাদকাসাক্ত হয়ে নিজের জীবন নষ্ট করে তাহলে তা হবে জাতির জন্য ভয়াবহ অভিশাপ। প্রখ্যাত বিষ বিজ্ঞানী ফিওদর উগলভ বলেন, মাদকাসক্তি মানব জাতির জন্যে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও প্লেগের একান্ত প্রতিক্রিয়ার চেয়েও ভয়াবহ।

প্রতিকারঃ সর্বনাশা মাদক দ্রব্যের ব্যবহার রোধ করা একান্ত আবশ্যক। তা না হলে মাদক আমাদের জাতীয় জীবনকে পঙ্গু করে দিবে। এ সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করতে হবে। এজন্যে নগর,শহর, বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। মাদকাসাক্তির মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করতে হবে। মাদক বিরোধী সংগ্রামে সকলকেই শামিল হতে হবে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দেশের ভবিষ্যত কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজকে রক্ষা করুন।

লেখকঃ
সদস্য সচিব
মঠবাড়িয়া উপজেলা নাগরিক কমিটি
মোবাইলঃ ০১৭১৩০৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...