ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে স্বদেশ মুক্ত হোক

ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে স্বদেশ মুক্ত হোক

ভারতীয় সংস্কৃতি কপি করে বাংলাদেশে চর্চা করলেই কী জঙ্গি দমন সম্ভব হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে স্টার জলসা, জি বাংলা, সনি ম্যাক্স, স্টার প্লাস এর অনুষ্ঠান দেখা নিশ্চিত করতে পারলেই কী সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা সফল হবে? যেমনটি এখন হচ্ছে। অবশ্য এদেশে অনেক আগেই এসব চ্যানেলের আধিপত্য বিস্তার নিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের যুবকরা আর কিছু জানুক বা না জানুক ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের নাম এবং তাদের অভিনীত মুভির নাম জানবেই। এদেশের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো যখন নিজ দেশের সংস্কৃতি ভুলে ভিনদেশীয় কালচারকে বাহবা জানায় তখন খুবই কষ্ট লাগে। কষ্ট লাগে তখনই যখন দেখি বাংলাদেশের যুবকরা যে কোন আড্ডায় বা অনুষ্ঠানে বাংলাকে অপমান করে হিন্দী গান গাইছে। আর সেই গান যারা শুনছে তাদের দেখে মনে হয় তারা যেন হিন্দী ভাষাটা বাংলা থেকেও ভাল বোঝে। মাঝে মাঝে তারা হিন্দী ডায়লগ বলে যা শুনতে খুবই বিশ্রী লাগে। তারা যে শুধু হিন্দী ভাষাকে আয়ত্ত্ব করছে তাই নয়। ভারতীয় সব নোংড়ামিও আয়ত্ত্ব করছে। আগে শুনতাম ভারতে চলন্ত বাসে ধর্ষণ হয়, ধর্ষনের পর ধর্ষিতাকে হত্যা করা হয়, ছোট শিশু ধর্ষিত হয়, বাপ মেয়েকে ধর্ষন করে গর্ভবতী বানায়। শুনতাম এগুলো ভারতে হয়। কিন্তু আজ দেখছি ভারতীয় চ্যানেল দেখে বাংলাদেশীরাও সেগুলো ভালভাবেই আয়ত্ত্ব করছে।
বনানীর হোটেল রেইন ট্রি তে দুই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা তার বড় প্রমাণ। এই তো কয়েকদিন আগে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবা-মেয়ে একত্রে ট্রেনের নীচে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতীয়রা সফল হয়েছে। তারা ‘ধর্ষণ ‘ জিনিসটাকে বর্ডার পার করে এপাড়ে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আর একটা জিনিস বাংলাদেশীরা আয়ত্ত্ব করছে। তা হলো পরকীয়া। পরকীয়ার কারণে দুই সন্তান ফেলে রেখে ইউপি মহিলা চেয়ারম্যান তার থেকে বয়সে ছোট এক যুবকের সাথে পালিয়েছে। এভাবে কতজন যে পালিয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন।পাখি ড্রেস না পাওয়ার কারণে আত্মহত্যা করার কথাও শুনেছি। জি বাংলা আর স্টার জলসা আমাদেরকে যা শিখিয়েছে বুয়েট, খুয়েট,ডুয়েট,চুয়েট, রুয়েট, (ঢাকা , চট্টগ্রাম,খুলনা,রাজশাহী, বরিশাল) বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমাদেরকে তার পঞ্চাশের এক ভাগও শেখাতে পারেনি। আর পারবেই বা কেন? কারণ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তো আর কুটনামী শেখায় না। এগুলো আমাদেরকে মানুষ হতে শেখায় আর ভারতীয় চ্যানেলে সম্প্রচারিত নাটক, সিরিয়াল, মুভিগুলো আমাদেরকে অমানুষ হতে শিখায়। গতকাল একটা ছোট ভাইকে বই পড়াতে বসছি তখন প্রসঙ্গক্রমে মদ বা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহন খারাপ এটা নিয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ছোট ভাইটা বলে উঠল, “ভাইয়া ভাইয়া মদকে নাকি মাল বলে আর মেয়েদেরকেও নাকি মাল বলে?”এ কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। আমি জানতে চাইলাম তোমাকে এটা কে শিখাইছে? ও বলল “আমি সনি ম্যাক্সের ‘ক্রাইম পেট্রোলে’ এগুলো বলতে শুনছি।” দেখুন এইসব চ্যানেল আমাদের কোমলমতি শিশুদেরকে নোংড়া কথা শেখাচ্ছে। আমাদের মহিলাদেরকে কূটনামী আর পরকীয়া শেখাচ্ছে। এসব চ্যানেলে এমন সব ভিডিও গান বা সিনেমা দেখানো হয় যা মা-বাবা, ভাই-বোনদেরকে নিয়ে এক সাথে দেখা যায় না। সুস্থ সংস্কৃতির নামে উলঙ্গ মেয়েদের পাছা দোলানো দেখানো হয় এই চ্যানেলগুলোতে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারে ভারতীয় চ্যানেল আছে। এগুলো মাসে মাসে ঐসব পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর বিনিময়ে শেখাচ্ছে নোংড়ামী। এ চ্যানেলগুলো দেখার জন্য শিশুরা পড়াশোনায় মনযোগী হতে পারছে না। এগুলোর জন্য বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। যুব সমাজ ধ্বংসের এই হাতিয়ার ভারতীয় চ্যানেল। ধর্মীয় দিক থেকেও এগুলো আমাদের শিশুদেরকে বিধর্মীয় রীতিনীতি শেখাচ্ছে।
অনেক মুসলমান শিশুকে গলায় হাত দিয়ে কসম করতে দেখেছি। এগুলোকে নাকি দিব্যি বলে। আমাদের শিশুরা এখানে শিখতেছে মূর্তিপূজা, প্রসাদ খাওয়া। এমনটি চলতে থাকলে এক সময় আমাদের আস্তিত্ব বিপর্যস্ত হবে। বিভিন্ন রকম অন্ধ বিশ্বাস শেখাচ্ছে। ভূত -প্রেতাত্মা বলে যার কোন অস্তিত্বই নাই আধুনিক যুগে এসে সেই বিষয় গুলো শেখাচ্ছে কোমলমতি শিশুদেরকে। এখনি যদি এই সমস্যার সমাধান না করা যায় তাহলে বাংলাদেশের অলিতে গলিতে নিয়মিত ধর্ষণ, খুন হতেই থাকবে। মানুষ দিন দিন অসভ্য হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ তখন আর বাংলাদেশ থাকবে না। হয়ে উঠবে বোম্বে বা কলকাতার মতো ধর্ষনের শহর। সানি লিওনের মত পর্ণস্টার যেই জাতির সম্মানিত ব্যাক্তিত্ব, গোমুত্র যাদের পছন্দের পানীয় সেই জাতি যে কতটা সভ্য হতে পারে তা আমরা ভালভাবেই বুঝি। সেই দেশের আনাচে কানাচে অলিতে-গলিতে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই জাতিকে কপি করলে জাতি অসভ্য জাতিতে পরিনত হবে।সেই দেশের সংস্কৃতিকে যারা কপি করছে তারা আসলে নিজেদেরকেই ভুলে গেছে। এই ভিনদেশীয় আচার আচরণ, কৃষ্টি -কালচারের যারা এদেশে গোড়াপত্তন করেছে তারা আর যাই হোক এদেশের সন্তান না, এদেশের সুভাকাঙ্খী না। এরা ভারতের দালাল। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যারা দেশের মঙ্গল চান তারা খুব তারাতারি এইসব চ্যানেলকে না বলুন। আর যারা বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিনত করেছে তাদেরকে জুতা মারুন। আমরা বাংলাদেশী। আমাদের নিজস্বতা আছে। আমরা আমাদের দেশটাকে আমাদের নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে চাই। পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত একটা সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই বাংলাদেশকে। যেখানে থাকবেনা কোন অপসংস্কৃতি, যেখানে থাকবে না কোন জঙ্গি। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে যুবকরা যখন কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বীকার হবে না, যখন তারা সমান নাগরিক সুবিধা পাবে তখন তারা বাংলাদেশকে ভালবাসতে শিখবে। বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসতে শিখবে। আর তখন তারা কোন অবস্থাতেই বিপথগামী হবে না। জঙ্গি হবে না। সব বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করলেই জঙ্গি সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। বিজাতীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দিলে একদিন এদেশ হবে জঙ্গির অভয়ারন্য। বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা কোনদিন জঙ্গি সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে না।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মনে প্রাণে বাংলাদেশকে ভালবাসুক। এদেশের আলোবাতাসে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো দেশের উন্নয়নে কাজ করুক! সুখী সমৃদ্ধ দেশে শাপলার মতো নিষ্পাপ আর শুভ্র হাসি ফুটে উঠুক সবার মুখে। বাংলাদেশে চিরজীবী হোক।
লেখক >> নাবিল আহামেদ মিজান চতুর্থ বর্ষ, রসায়ন বিভাগ বরিশাল বি .এম কলেজ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...