ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন

দেবদাস মজুমদার >>

মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক তেমন শিক্ষা ছিলনা। তবে তিনি নিজ প্রচেষ্টায় সমাজসংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জণ করেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি সওগাত নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। তাঁর এ প্রকাশনার মাধ্যমে উপমহাদেশে সাময়িকীপত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

বাঙালি মুসলমানের সাংবাদিকতা, সাহিত্য আন্দোলনের পথিকৃৎ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৮৮৮ সালের নভেম্বরে, কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর থানার পাইকারদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত গুণি মানুষ। তাঁর কালে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণযেগ্য ছিলনা। এমনকি বাংলা শিক্ষাতেও আপত্তি ছিল। কিন্তু নাসিরউদ্দীনের পিতা তাঁর সন্তানকে ভালোভাবে বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষা দিতে চাইলেন। তাই মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের পর পুত্রকে এক হিন্দু পণ্ডিতের অধীনে শিক্ষা নিতে পাঠশালায় পাঠালেন। সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে নাসিরউদ্দীন অনুধাবন করেন যে, মুসলমান লেখকদের বই কিংবা পত্রপত্রিকা একেবারেই নেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার ঠিক আগে নাসিরউদ্দীন পিতৃহারা হলেন। একাডেমিক পড়াশোনার পাট সেখানেই চুকে গেল। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সংসার চালানোর দায় মাথায় এসে পড়ল। কিছুদিন কাঁচা সুপারি স্টক করে বিক্রি করলেন। এর পর স্থানীয় স্টিমার ঘাটের স্টেশনমাস্টার তাকে অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরি দিলেন। কিছুদিন পর কাজ শুরু করলেন বীমা এজেন্ট হিসেবে। তখনকার দিনে মুসলমান সমাজে বীমা করা বা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগকে গুনাহর কাজ বলে বিবেচনা করা হতো।

প্রথম জীবনে তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি বীমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি সওগাত নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ সালে সাময়িকীটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে অবশ্য এর প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯২৬ সালে তিনি সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করেন।

গোঁড়া মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম নারীদের ছবি সওগাতে ছাপান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যাজ্ঞাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেন। তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপানোটা ছিল এক অসাধারণ সাহসের ঘটনা।

১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নাসিরুদ্দীন ১৯৪৬ সালে বেগম নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’-র সদস্য এবং ‘নজরুল ইন্সটিটিউট’-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি-র চেয়ারম্যান।

তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরষ্কার, ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সৃজনশীল লেখক ও সাংবাদিকদের পুরষ্কৃত করার লক্ষ্যে তিনি নিজ নামে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক প্রদান শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৯৪ সালের ২১ মে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

তথ্য সূত্র > মুক্ত বিশ্বকোষ, ছবি সূত্র >> ইত্তেফাক

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...