ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - মঠবাড়িয়ায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে দুর্গতি !

মঠবাড়িয়ায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে দুর্গতি !

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি >>

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ১৫২ নম্বর পশ্চিম চালিতাবুনীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জ্বরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ছাদ ভেঙে টিনের চালা নির্মাণে বরাদ্দ হয়েছিল দুই লাখ টাকা। পরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান হায়দার ওই বরাদ্দে স্কুলের সংস্কারের কাজ শুরু করে গত দেড় মাস আগে । চার কক্ষের ওই স্কুল ভবনের পুরো ছাদ তিনি গত দেড় মাস আগে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলেন। এলাকাবাসির অভিযোগ ভাঙা ছাদের ইট,রড আর খোয়া বিদ্যালয়ের সভাপতি কোন নিয়ম নীতি ছাড়াই বিক্রি করে দেন।
অপর দিকে কোনও বিকল্প শ্রেণী কক্ষের ব্যবস্থা না করে স্কুল ভবনের পুরো ছাদ ভেঙ্গে নির্মাণ কাজ ফেলে রাখেন। এতে পুরো বিদ্যালয়টি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে ছাদহীন স্কুল ভবন ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলছে এখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান। রোদ বৃষ্টির দুর্ভোগে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশংকাজনক হারে কমে গেছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম পশ্চিম চালিতাবুনীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে কোমলমতি শিশুদের এমন দুর্গতির পাঠদান দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ স্কুলের অপরিসর বারান্দায় আর কিছু অংশ স্কুলের সম্মূখ মাঠে চরম দুর্ভোগে খোলা আকাশে পাঠদান চলছে।
বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাতি আক্তার বলে, আমাগো স্কুলে ছাদ নাই। স্কুল ভবন ভাঙা । বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করা যায়না। আমাগো নতুন স্কুল ভবন দ্যান।
বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮২ সালে ৩৪ শতাংশ জমিজুড়ে ১৫২ নম্বর পশ্চিম চালিতাবুনীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৩৩জন শিক্ষার্থী নিয়মিত লেখাপড়া করে আসছে। গত ২৫ বছর আগে এশটি অফিস কক্ষ ও তিনটি অপরিসর শ্রেণী কক্ষের একতলা পাকা স্কুল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এলকাবাসি জানান, বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণের এশবছরের মধ্যে জরাজ¦ীর্ণ হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে স্কুল ভবনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে বিদ্যালয়টিতে পাঠ পরিবেশ বিঘিœত হয়। বিদ্যালয়ের ছাদ ও পলেস্তরা খসে পড়তে শুরু করলে প্রাণহানীর ভয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চরম আতংকের মধ্যে পড়েন। এমন অবস্থায় সম্প্রতি বিদ্যালয়টির ছাদ অপসারণ করে টিনের চালা নির্মাণে দুই লাখ টাকা সরকারি বরাদ দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি হাফিজুর রহমান হায়দার নিজেই সংস্কার কাজ শুরু করেন। গত দেড়মাস আগে বিদ্যালয়ে পুরো ছাদ ভেঙে নির্মাণ কাজ ফেলে রাখেন। এমনকি ভাঙা ছাদের মালামাল তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে দেড় মাস ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান বিঘিœত হয়। স্কুলের অপরিসর বারান্দা আর খোলা আকাশের নিচে কোমলমতি শিশুদের দুর্ভোগে ফেলে চলছে পাঠদান। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় স্কুলের সভাপতি নিজের খেয়াল খুশীমত বিদ্যালয় সংস্কার কাজ ফেলে রেখেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র হালদার পাঠদানে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, স্কুল ভবনের ছাদ ভাঙার পর বিকল্প পাঠদানের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। রোদের তাপে শিক্ষার্থীদের ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে পাঠদান বন্ধ থাকে। এমন দুর্ভোগে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে চায়না। ফলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান হায়দার বলেন, ছাদ ভেঙে মালামাল বিক্রির অভিযোগ সত্যি নয়। স্কুলের ছাদ ভাঙার পর বরাদ্দের টাকা না পাওয়া ও ঝড় বৃষ্টির কারনে টিনের চালা নির্মাণে দেরি হচ্ছে।
বিকল্প শ্রেণী কক্ষের সাময়িক ব্যবস্থা না করে পুরো ছাদ কেন ভাঙলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা নানা সংকটে করা যায়নি। যত দ্রুত সম্ভব টিনের চালা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, শিশুদের বিকল্প শ্রেণী কক্ষের ব্যবস্থা না করে স্কুলের পুরো ছাদ ভেঙে ফেলা ঠিক হয়নি। এমনিতেই স্কুলটি জরাজ্বীর্ণ তারপর পুরো ছাদ দেড় মাস আগে ভেঙে কাজ ফেলে রাখায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় এ অপরিসর স্কুলটি সংস্কারের চেয়ে স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ জরুরী।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ছাদটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। ছাদ ভেঙে টিনের ছাউনির কাঠামো দিয়ে সংস্কারে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রমজান মাসের মধ্যে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সংস্কারের কাজ শেষ করার কথা । কিন্তু বরাদ্দের অর্থ ছাড় না হওয়ায় তারা সংস্কার কাজ করতে পারেননি। ছাদ ভেঙে ফেলায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন আগামী শনিবার ও রবিবার স্কুল ছুটি রেখে টিনের ছাউনীর কাঠামো নির্মাণের জন্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এয়াড়া ভাঙা ছাদের মালামাল একদিনের মধ্যে স্কুলে সংরক্ষণ করতেও বলা হয়েছে। বিদ্যালয়টি যাতে স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে পূণনির্মাণ হয় তার জন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...