দেবদাস মজুমদার :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যা দিবস আজ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) । এইদিন ভোর রাতে উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের ২৫ হিন্দু বাঙালীকে এক দড়িতে বেঁধে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে।
স্বাধীনতার এত বছর ধরে ২৫ শহীদেও গণসমাধিস্থল (বধ্যভূমি) ছিলো অরক্ষিত ও উপেক্ষিত। এমন কি মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা শহীদ পরিবারগুলো যথাযথ স্বীকৃতিও পাননি।
এ বধ্যভূমিতে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় এবার নির্মিত হচ্ছে সূর্যমণি শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ। প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এরিন এন্টারপ্রাইজ গত তিনমাস আগে এ স্মৃতিস্তম্ভেও নির্মাণ কাজ শুরু করে।
সূর্যমণি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধা, ২৫ শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা শোকযাত্রা করে মঠবাড়িয়া শহর হতে আড়াই কিলোমিটার দূরে টিকিকাটা ইউনিয়নের সূর্যমণি বেরিবাঁধের(বর্তমান সøুইজগেট)শহীদ বেদীতে সমবেত হবেন)।
এ উপলক্ষে শোকযাত্রা, শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও স্মরণ সভার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমাÐের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাখন লাল মিলনায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শহীদ পরিবার সূত্রে জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর এই দিন ভোর রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত আঙ্গুলকাটা গ্রাম থেকে ৩৭ জন নিরাপরাধ হিন্দু বাঙালীকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় সংগঠিত রাজাকার বাহিনী। ওই রাতে ৫০/৬০ জনের সংগঠিত একটি রাজাকার বাহিনী ওই গ্রামের হানা দিয়ে ব্যপক ধরপাকড় ও লুটপাট চালায়। এসময় ৩৭ জন হিন্দু বাঙালীকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে ধরে এনে তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে রাতভর থানায় আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এদের মধ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরের দিন ৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকী ৩০ জনকে মঠবাড়িয়া শহর হতে আড়াই কিলোটিার দূরে সূর্যমণি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালের পাড়ে এক লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় ভগ্যক্রমে গুলিবিদ্ধ পাঁচ জন বেঁচে গেলে বাকী ২৫ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ,সমর্থন ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দানের অপরাধে স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁদের ওপর এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।
স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও ২৫ শহীদের রক্তে রঞ্জিত সূর্যমনি গ্রামের বধ্যভূমি পড়েছিলো অযতœ অবহেলায়। এমনকি এই জীবনদানের যথাযথ স্বীকৃতিও পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। তবে ওই স্থানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য ২০০১ সালের ৭ জানুয়ারী তৎকালীন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন । এরপর আর তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে চলতিবছর গণপূর্ত বিভাগ সূর্যমণি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যায়ে এখানে দৃষ্টিনন্দন সমঋতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুর হয়।
স্থানীয় টিকিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার বলেন, এটি বর্তমান সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ। অযতœ অবহেলায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিতে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্মম্ভ এখন চলমান রয়েছে।
সেদিন যাঁরা সূর্যমণিতে শহীদ হয়েছিলেন তাঁরা হলেন, জিতেন্দ্র নাথ মিত্র, শৈলেন মিত্র, বিনোদ বিহারী, ফনী ভূষন মিত্র, ঝন্টু মিত্র, নগেন কির্ত্তুনীয়া, অমল মিত্র, সুধাংশ হালদার, বিরাংশু হালদার, মধুসুদন হালদার, প্রিয়নাথ হালদার, সীতানাথ হাওলাদার, অন্নদা হাওলাদার, অনিল হাওলাদার, হিমাংশু মাঝি, জিতেন মাঝি, সুধীর মাষ্টার, অমেলেন্দু হাওলাদার, অচীন মিত্র, অরুণ মিত্র, নিরোধ পাইক ও কমল মন্ডল ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।
শহীদ বিরাংশু কুমার হালদারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র হালদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বজনহারা হয়েছি। তবে শহীদ পরিবারগুরোর প্রতি কেউ নজর দেয়নি । গণহত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে আমরা খুশী হয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাবেক কমান্ডার মো. বাচ্চু মিয়া আকন বলেন,স্বাধীনতার এত বছর পরেও শহীদের স্বীকৃতি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবে সূর্যমণি বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে বর্তমান সরকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে এটি আশার কথা।