ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু > উপকূলের নিন্মাঞ্চলে প্লাবন – ১৫ জেলে নিখোঁজ

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু > উপকূলের নিন্মাঞ্চলে প্লাবন – ১৫ জেলে নিখোঁজ

পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া ও কাউখালী প্রতিনিধি > ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে পিরোজপুর জেলায় শনিবার মধ্য রাত থেকেই অবিরাম বৃষ্টিপাত চলছে। জেলার বলেশ্বর, কঁচা ও সন্ধ্যা নদীর পানি জোয়ারে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়েছে। সকাল থেকেই বাতাসের গতিবেগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে পাঁচ সহ¯্রাধিক নারী,পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। পিরোজপুরের পাড়ের বন্দরের একটি ট্রলার সহ ১৫ জেলে নিখোঁজ বলে জানা গেছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জেলা প্রসাশন জানিয়েছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
এ দিকে ঘূর্র্ণীঝড় ‘রোয়ান’ বাংলাদেশ উপকুল অতিক্রম করলেও জেলার মঠবাড়িয়ার নি¤œাঞ্চল ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মঠবাড়িয়ার মাঝের চরের বেরী বাধের বেশ কিছু অংশ পানির তেড়ে ভেঙ্গে যায়। মঠবাড়িয়ার ইউএনও এস এম ফরিদ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে সদর উপজেলার বাদুরা গ্রামে মৎস্যজীবী কল্যান সমিতির সম্পাদক মোঃ মোস্তফা আকন জানান, তার সমিতির সদস্য মনির গাজীর ট্রলার এম ভি রিপা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ায় অন্য তিনটি ট্রলারের খোজ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ওই ট্রলারটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ট্রলারটিতে মাঝীমাল্লা সহ ১৪ জনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ব্যাক্তিদের ৯ জনই হলো মোড়েলগঞ্জের বেতবুনিয়া গ্রামের। বাাকি ১ জনের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুরে এবং অন্নরা জিয়ানগর ও পিরোজপুর সদর উপজেলার। নিখোঁজ ব্যাক্তিরা হলো ট্রলার মালিক মনির গাজী, ইমান গাজী, আতিকুল, সহিদুল, রেজাউল, রিসান, রবিউল, বশির, আরিফুল , রিয়াজ, নিয়াজ, উজ্জল ও আদম। জেলা কন্ট্রোলরুম হতে জানা গেছে মঠবাড়িয়া উপজেলায় তিনটি কাঁচাঘর ভেঙ্গে গেছে। জেলা প্রশাসক মোঃ খায়রুল আলম সেখ জানান, নিখোঁজ ট্রলারটির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণীঝড় উত্তর পূর্ণবাসনের লক্ষে জেলা প্রসাশনের ত্রান তহবিল হতে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়াও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শহরের দোকান পাট সব বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ খায়রুল আলম সেখ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৭ টি উপজেলায় মোট ৮ টি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। জেলায় ১৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপকূলের সব পাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ৬৫টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণে উপজেলার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী নি¤œ এলাকায় ২/৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের মানুষ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। রোয়ানু’র প্রভাবে টানা বর্ষনে নিম্ম আয়ের মানুষজন ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় কাজে বের হতে পারেননি।
বলেশ্বর নদের পানি স্বাভাবিকতার চেয়ে ২/৩ ফুট পানি বৃদ্বি পাওয়ায় খেতাচিড়া,ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, নিজামিয়া, ভোলমারা, উলুবাড়িয়া, মাছুয়া,মধ্য তুষখালী, জানখালী, তুষখালীর এলাকার জেলে পল্লিতে আতংক বিরাজ করছে।
মাঝের চর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের ওয়ারলেস অপারেটর আব্দুল হালিম জানান, মাঝের চরের ২০০ টি পরিবার ঘূর্ণিঝর সিডরের মত নতুন ঝড়ের আশংকায় আতংকিত হওয়ায় শুক্রবার রাতেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর তীর ভাঙনের কবলে

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট দমকা বাতাস ও অবিরাম বর্ষণে আজ শনিবার উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার জনজীবন চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দিনভর প্রবাল বাতাস ও অবিরাম বৃষ্টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । এতে নি¤œাঞ্চলে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। ঝড়ো বৃষ্টিতে ১০টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জোয়ারের চাপ ও ভারিবর্ষণের পানিবৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে।
বলেশ্বরের প্রবল জোয়ারে বড় মাছুয়া স্টীমারঘাট সংলগ্ন জাহাঙ্গীর হোসেনের বসত ঘরটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বলেশ্বর নদের মাঝেরচরের বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে থাকায় ওই চরের দুইশ পরিবারের সহস্্রাধিক চরবাসি শংকার মাঝে দিন কাটায়। মাঝেরচর, চরভোলমারা, খেতাছিড়া ও কচুবাড়িয়া এলাকার বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এতে নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের মানুষ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। রোয়ানু’র প্রভাবে টানা বর্ষনে নিম্ম আয়ের মানুষজন ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় কাজে বের হতে পারেননি। এছাড়া শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে উপজেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আজ শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ চালু করা যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে, বলেশ্বর নদ তীরবর্তীসহ ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের গঠিত ৬টি কন্ট্রোলরুম দিনভর তালাবদ্ধ থাকায় রোয়ানুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তের প্রকৃত তথ্য এখনও নিরুপণ করা যায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম ফরিদ উদ্দিন দুপুরে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় ইউনিয়ন পরিষদে গঠিত কন্ট্রোল রুম তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সেখ জানান, মঠবাড়িয়ায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১৭ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।

কাউখালীতে নি¤œঞ্চল প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে পিরোজপুরের কাউখালীতে গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। শত শত গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতা দেখা নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের নি¤œঞ্চল পানিতে ডুবে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়া আংশকা দেখা দিয়েছে।
উপজেলায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও ধমকা হাওয়া দেখা দেয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। চলে আজ শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত। টানা ভারী বর্ষণে মানুষ ঘরবাড়িতে আটকা পড়ে। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজে বের হতে না পেরে দুর্ভোগের শিকার হন। কাউখালীতে গত দুই দিন ধরে বিদ্যুত বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

কাউখালীর বেকুটিয়া ফেরিও আমরাজুড়ি ফেরিচলাচল বন্ধ ছিল।কাউখালী থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
এ দিকে কাউখালী উপজেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি ঘূর্ণিঝড় পূর্ববতী এবং পরবর্তী সময়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
প্রতিবেদনের ছবি> মো. জামান আবীর

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...