ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে চাই সু-শিক্ষা এবং সঠিক জ্ঞান

সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে চাই সু-শিক্ষা এবং সঠিক জ্ঞান

মো. গোলাম মোস্তফা >

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন :
“ সব দেশের সংস্কৃতির বাতাস যতটা সম্ভব মুক্তভাবে আমার উঠোনে বইবে। তবে তা কখনোই আমাকে উড়িয়ে নেবে না”।
মাদার তেরেসা বলেছিলেন :
“তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকেই ভালবাসতে না পারো, তবে অদৃশ্য ঈশ্বরকে কি করে ভালবাসবে?”
সংস্কৃতির চেতনা প্রাণবন্ত না হলে গণতন্ত্র লাভ করে না তার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা । সংস্কৃতবোধ জীবন্ত না হলে প্রবেশ করেনা সমাজ জীবনের গভীরে, জনগনের আশা আকাঙ্খা ধারন করে তাঁদের নিজস্ব কর্মধারায় প্রতিফলিত হয় না । সংস্কৃতি যেমন বাক্তিকে ছাপিয়ে সমগ্রের হয়ে ওঠে এক পরিচয়, গণতন্ত্রও তেমনি বাক্তিকে কেন্দ্র করেই রুপান্তরিত হয় সামষ্টিক কর্মপ্রবাহে । সংস্কৃতি দেয় পরশীলিত এক দৃষ্টিভঙ্গি । গণতন্ত্র আনে সমাজ জীবনে সৃজনশীলতার এক দূর্বার প্রাণবন্যা । দুই-ই চলে পাশাপাশি, হাত ধরা ধরি করে । একটি পিছিয়ে পড়লে অন্যটি হাত বাড়ায় সহায়তার । হাত ধরে টেনে তোলে । পরস্পর পরস্পরের আলোয়ে পথ চলে । দৈহিক বলের পরিবর্তে যুক্তি কার্যকর হয়, তখনই দেখা দেয় সংস্কৃতির-চেতনা । পেশীর পরিবর্তে মন যখন হয়েছে চালিকাশক্তি, তখনই সংস্কৃতির সূচনা হয় । দৈহিক বল আক্রমন করে, অপরকে সরিয়ে রাখে, মন কিন্তু কাছে টানে, অপরকে আকর্ষণ করে, অপরের কাছে ছুটে যায় । এভাবে সংস্কৃতি বোধের নব নব পর্যায়ে মানবের সংঘবদ্ধ জীবনের সূত্রপাত ঘটে । গড়ে ওঠে পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ এবং একপর্যায়ে রাষ্ট্র । সংস্কৃতি ও গণতন্ত্র দুয়েরই শুরু বাক্তিকে কেন্দ্র করে । বাক্তি জীবনকে সুন্দর ও সুরুচি সম্পন্ন করেই সংস্কৃতি হয়েছে অর্থপূর্ণ । ব্যক্তিত্বে সুষম বিকাশ ঘটিয়ে, ব্যক্তিকে সংকীর্ণতার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে, সবার সাথে চলার এবং বলার উপযোগী করে, সংস্কৃতিই ব্যক্তির সামনে সম্ভাবনাময় উন্নত সামাজিক জীবনের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করেছে । তেমনি গণতন্ত্রও ব্যক্তিকে তাঁর অহংবোধের সংকীর্ণ গুহা থেকে টেনে এনে মিলিয়েছে সমাজের বিস্তীর্ণ উদার উপত্তাক্কায় । তাই দেখা যায়, উন্নত সংস্কৃতির ঘাটেই ভিড়েছে সাম্য, সু-ভ্রাতৃত্ব ও স্বাধীনতার পণ্যবাহী গণতন্ত্রের সোনারতরী । যে সমাজে সংস্কৃতির মান এখনো উন্নত হয়নি, সেখানে গণতন্ত্রের যাত্রাপথ এখনো কঠিন । এখনো জীবন পিচ্ছিল । সু- শিক্ষা হয়তো এ পথের দিশারী হতে পারে, তাও কিন্তু এ সমাজে স্বল্প সংখ্যক জনসমষ্টির আয়ত্বে । সু-শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত সমাজের বৃহত্তর অংশ ।
টমাস জেফারসন লিখেছেন, “কোন জাতি অজ্ঞতা দূর না করে মুক্ত হতে চাইলে চূড়ান্ত হতাশ হতে বাধ্য” । আর তাই সারা বাংলাদেশে না পারলেও নিজ জন্মস্থান মঠবাড়িয়াতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে ফেরী করছি, যদি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সম্মানিত শিক্ষকরা এগিয়ে আসেন সু-শিক্ষা প্রতিষ্ঠার লক্ষে ! আমার বহু দিনের গবেষণালব্দ প্রচেষ্টা যাহ আমার নিজ সন্তানদের মধ্যে প্রয়োগ করেছি এবং ভাল ফলাফল পেয়েছি, তাহাই ছড়িয়ে দিতে চাই মঠবাড়িয়ার প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে । লেখাপড়ার মান উন্নয়নে ও ভাল ফলাফল অর্জনের লক্ষে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, স্বাস্থ্য (মানসিক স্বাস্থ্য) গঠন, সঠিক মানের লেখাপড়া ও পরীক্ষার প্রস্তুতি বিষয়ে মাল্টি-মিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করে যাচ্ছি । পাশাপাশি অভিভাবকদেরকেও সচেতন মূলক আলোচনা উপস্থাপন করছি । যদি প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন করা যায় তবে খুব বেশী দিন লাগার কথা নয় আমাদের মঠবাড়িয়াকে স্বনির্ভর, সুন্দর একটি সমাজে রূপান্তর করতে । হয়তো আমরা সেই সুন্দর সমাজ দেখে যেতে পারবো না, কিন্তু আশা করতে পারি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম উপহার দেবে সেই সুন্দর মঠবাড়িয়া, আর সে লক্ষে আমাদেরকে টমাস জেফারসনের কথা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে এক্ষুনি । প্রতিটি মা-বাবাকে ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে দু’টো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে । প্রথমত তাদের সু-শিক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতাশীল দুনিয়ার জন্য সুযোগ্য নাগরিক করে গোড়ে তূলতে হবে । দ্বিতীয়ত সন্তানদের আদব কায়দা এবং নৈতিক শিক্ষা এমন ভাবে দিতে হবে যাতে তারা জজ, ব্যারিস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সাথে সাথে বাবা- মায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল আদর্শ সু-সন্তান হয়ে বড় হয় । আর এ ক্ষেত্রে ধর্ম ( সে যে ধর্মই হোক না কেন ) নিঃসন্দেহে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে । “ In old age, nothing like obedient children “ অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সে, সু-সন্তানের তুলনা নেই ।
“A tree is known by the fruit it bears “ ফলেই বৃক্ষের পরিচয় ।
ঐতিহাসিক একটি সত্য ঘটনা দিয়ে শেষ করছি আজকের লেখাঃ বায়জিদ বোস্তামির ছোট বেলা, তার মা ঘুমিয়ে ছিলেন হঠাৎ মা জেগে বললেন, বাবা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও । ছোট্ট বায়জিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসে পানি নেই, গেলেন পুকুরে এসে দেখলেন মা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, মাকে না ডেকে পানি হাতে মায়ের শিয়রে দাড়িয়ে থাকলেন সারা রাত । কি-জানি মা কখন জেগে আবার পানি চান ! ভোর হলে মা জেগে দখলেন পানি হাতে ছেলে বায়জিদ দাড়িয়ে, মা হতবাক হলেন ! আর আল্লাহ্ র দরবারে দোয়া করলেন আর তাইতো বায়জিদ (রঃ) মায়ের দোয়ায় এতো বড় অলি হতে পেরেছিলেন ।

# লেখকঃ মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...