কাউখালী প্রতিনিধি >
পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রতিবন্ধী স্কুলের উদ্যোগে আজ শনিবার উপজেলার আমরাজুড়ী সন্ধ্যা নদীর তীরের চরের আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমুল শিশুরা স্থানীয় শিক্ষানুরাগী পরোপকারী আবদুল লতিফ খসরুর জন্মদিন পালনে ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সুবিথা বঞ্চিত শিশুদের বান্ধব খসরুর জন্মদিনে ফুলের শুভেচ্ছা, মিষ্টি ও ফল দিয়ে আপ্যায়ন, সাংস্তৃতিক অনুষ্ঠান ও নৌকা ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়। কাউখালী প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল লতিফ খসরুকে ৩০ জন প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমুল শিশুরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। মিষ্টি ও ফল দিয়ে তারা আপ্যায়ন করে তাদের এই প্রিয় মানুষটিকে। শিশুরা তার জন্মদিনে নেচে-গেয়ে হই হুল্লোল করে দিনটি উদযাপন করে। পরে প্রতিবন্ধী শিশুরা সন্ধ্যা নদীতে নৌকা ভ্রমণে বের হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবাসন প্রকল্পের সভাপতি চান মিয়া ও ছিন্নমুল শিশুদের অভিভাবকগন।
বাক প্রতিবন্ধী শারমিনের মা মঞ্জিলা বলেন, মোর সোয়ামি বোবা, মোর চাইরডা মাইয়্যা পোলাও বোবা। যহন কেউ মোগো জিগায় নায় হেই সময় খসরু ভাই মোগো এইহানে আইয়্যা স্কুল করছে ওগো লেহাপড়া হিকাইছে। হেইজন্য মোরা আইজ হেরে লইয়্যা একটু ফুর্তি হরছি। মোরা হের জন্য দোয়া হরি।
প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল লতিফ খসরু বলেন, এসব নিষ্পাপ শিশুরা আমার জন্মদিন পালন করেছে তাতেই আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার জন্মদিনে এসব শিশুদের আমি কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ জানাই এবং আজকের এই দিনটি দেশের সকল প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমুল শিশুদের জন্য উৎসর্গ করলাম।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা কেউন্দিয়া গ্রামে এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মানুষ হিসেবে নিজস্ব দক্ষতার গুণে তিনি ছাত্রজীবন থেকে মানব সেবা, মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। উপজেলায় তিনি একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী নুসরাত জাহান, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার ছোট্ট পরিবার।
তিনি ২০০৯-১১ সালে পিরোজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজসেবক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৩ সালে বিভাগীয় পর্যায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হতদরিদ্র প্রতিবন্ধীদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার জন্য নিজ উদ্যোগে প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আর যে স্কুলে তিনি নিজেই শিশুদের পাঠদান করান।
স্কুল কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পাঠ অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠা করেন আবদুস সোবাহান স্মৃতি নামে একটি পাঠাগার।
উপজেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠা করেন তথ্য কেন্দ্র ও সংগ্রহশালা। যা থেকে উপকৃত হচ্ছেন এ এলাকার মানুষ। আর নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।