ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - আহারে কে মারল মোর বাবারে !

আহারে কে মারল মোর বাবারে !

দেবদাস মজুমদার >
সারাদিন ঘাস খাইয়া ঘরে ফিরছিল বাবায়। আহারে কোন পাষাণে মারল মোর বাবারে ! হত দরিদ্র বিধবার এমন গগন বিদারী কান্না স্বজন হারা অসহায় মানুষের মত । কাঁদছিল সে পথের ধারে । পাশে পড়েছিল বিধবা বৃদ্ধার অবলম্বন প্রিয় ছাগলের নিথর শরীর। গলা বিচ্ছিন্ন ছাগলের ছোপ ছোপ রক্তে ভিজেছে সড়ক। অজ্ঞাত কোনও মোটরসাইকেল চালকের বেপরোয়া চাকায় পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধার অবলম্বলনের ছাগলটি মারা পড়ে। প্রিয় ছাগলের এমন মৃত্যুতে বিধবা বৃদ্ধা স্বজনহারা মানুষের মত কাঁদছিলেন। পথচারীদের স্বান্তনায় বৃদ্ধার কান্না যেন থামছে না।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার দরিয়ারপাড়-শর্ষিনা সড়কের কচুয়াকাঠি গ্রামের সড়কে গতকাল শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ছাগলটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেলে জীবনের একমাত্র অবলম্বন ছাগল হারিয়ে শোকে বিলাপ করছিলেন বিধবা গোলবানু বেগম(৫৫)।
স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, কাউখালী উপজেলার কচুয়াকাঠি গ্রামের হত দরিদ্র বিধবার বসতঘর ছাড়া আর কিছু নেই। ১০ বছর আগে বৃদ্ধার দিনমজুর স্বামী হারুণ হাওলাদার অসুখে ভুগে একরকম বিনা চিকিতসায় মারা যান। বড় ছেলে মিলন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মেঝ ছেলে সুমন রিকশাচালক আর ছোট ছেলে জুয়েল দিনমজুরী করে যে যার মত কোনমতে বেঁচে আছেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বড় ছেলের সাথে থেকে বৃদ্ধা গোলবানু দিনমজুরী করে কোনমতে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটান। দিনমজুরী টাকায় অনেক কষ্টে গত একমাস আগে তিন হাজার টাকায় ছাগলটি কেনেন। ছাগলটিকে লালন পালন করে আশা করছিলেন আরও কিছু ছাগলের। এতে বৃদ্ধার আয়ের একটা সংস্থান হবে। তবে বিধি বাম । প্রতিদিনের মত সড়কের পাশে ঘাস খেয়ে আজ শনিবার বিকাল ৫টার দিকে অভ্যসমতই বাড়ি ফিরছিল ছাগলটি। হঠাত একটি বেপরোয়া মোটরসাইকেলের চাকায় ছাগলটি পিষ্ট হলে গলা বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনস্থলেই ছাগলটি মারা যায়। মোটরসাইকেল চালক এ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। বৃদ্ধা গোলবানু খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সড়কের পাশে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।devdas-pic-k-1
কাউখালীর সমাজ সেবক মো. আবদুল লতিফ খসরু জানান, তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। এসময় তিনি হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধাকে গলা বিছিন্ন রক্তাক্ত মৃত ছাগলের পাশে বসে বিলাপ করতে দেখে এগিয়ে যান। বৃদ্ধার কান্নায় তখন পথচারী ও স্থানীয়রা জড়ো হন। বৃদ্ধার কান্না দেখে তখন অনেকই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায় তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাসে মৃত ছাগল নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। বসতবাড়ির পাশেই ওই বৃদ্ধা প্রিয় ছাগলটিকে মাটিচাপা দেন। তিনি আরও বলেন, একটি ছাগলের জন্য অসহায় ওই বৃদ্ধার কান্না মানুষ হিসেবে সইবার মত ছিলনা।
বিধবা বৃদ্ধা গোলবানু বলেন, ম্যালা কষ্টের টাকায় কেনা ছাগল । তারে লালন পালন করেছি মায়ের যত্নে। আমার বাবার(ছাগলের) তো কোন দোষ ছিলনা। কেডায় মারল বাবারে। এখন কে দিবে আমার ক্ষতিপূরণ।
কচুয়াকাঠি গ্রামের ইউপি সদস্য নেপাল চন্দ্র দে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিধবা গোলবানু সহায় সম্বলহীন মানুষ। এরকম একজন বৃদ্ধার প্রিয় ছাগলের দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেদনার। এ ঘটনায় দোষী মোটরসাইকেল চালকে সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যাতে অসহায় বৃদ্ধা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...