ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - শহীদ নূর হোসেনের পিতৃভূমি মঠবাড়িয়ায় এরশাদ দু:খ প্রকাশ করুক : জাগো লক্ষ নূর হোসেন সংগঠনের দাবি

শহীদ নূর হোসেনের পিতৃভূমি মঠবাড়িয়ায় এরশাদ দু:খ প্রকাশ করুক : জাগো লক্ষ নূর হোসেন সংগঠনের দাবি

মো. রাসেল সবুজ >>

বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ নূর হোসেন একটি অবিস্মরণীয় নাম।বুকেপিঠে “#স্বৈরাচার_নিপাত_যাক, #গণতন্ত্র_মুক্তি_পাক” শ্লোগান লিখে রাজপথে হাজির হয়েছিলেন #মানব_পোষ্টার খ্যাত অকুতোভয় নূর হোসেন।আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই সেদিন তাকে সতর্ক করেছিলেন তার উপরে পুলিশের আক্রমনের আশংকার ব্যাপারে।কিন্তু মৃত্যুভয় উপেক্ষা করেই নূর হোসেন এগিয়ে গেলো স্বৈরাচরবিরোধী মিছিলের সম্মুখভাগে। একপর্যায়ে স্বৈরশাসকের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ ঠিকই টার্গেট করে গুলি করে বসে নূর হোসেনের বুকে! তাজা লাল রক্তে ভেসে যায় ঢাকার পিচ ঢালা কালো পথ।নূর হোসেনের সাথে সেদিন প্রান হারায় আরো বেশ কয়েকজন। শুরু হয় লাশ নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি। চেষ্টা করা হয় লাশগুলোকে গুম করার। গভীররাতে চুপিচুপি পুলিশ তিনটি লাশ নিয়ে হাজির হয় জুরাইন গোরস্থানে।ঘুম থেকে উঠিয়ে আনা হয় গোর খোদোকদের।পুলিশ হুকুম দেয় গর্তখুরে লাশগুলিকে মাটি চাপা দোবার জন্য। কিন্তু বেঁকে বসে তারা। মুসলমানের লাশ গোসল ছাড়া কিছুইতেই তারা সমাহিত করবেনা বলে ঘোষনা দেয়।পুলিশ বাধ্য হয় তাদের দাবী মেনে নিতে।লাশের গোসল করানোর সময় নূর হোসোনের শরীরে লেখা “গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক” শব্দটি সেদিন নারিকেলের ছোবড়া আর ‘৫৭০’ সাবান দিয়ে অনেক ঘষেও তারা উঠাতে পারেনি।এই অমর বাণী সহই তাকে কবর দেওয়া হয়..! ঘটনাটি ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বরের। এরপরে ডাঃ মিলন সহ অনেকের প্রানের বিনিময়ে তীব্র আন্দোলনের মূখে ৯০ সালে এসে পতন ঘটে স্বৈরশাসক হু, মু, এরশাদের।কিন্তু অবস্থার উন্নতি হলেও আজো আমরা প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের দেখা পাইনি। এই সুযোগে সেই পতিত স্বৈরশাসক এখনো এদেশের রাজনীতির তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নির্বাচনে দাড়ালে এখনো তিনি বিপুল ভোটে জিতে আসেন! পৃথিবীর ইতিহাসে এরশাদই একমাত্র স্বৈরশাসক যিনি গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে জেলে গিয়েও আবার রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ সারা পৃথিবীতে যত স্বৈরাচার ছিলো ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে হয় তারা নিহত হয়েছে না হয় জেলে গিয়েছেন অথবা নির্বাসিত হয়েছেন। শুধু এরশাদ সাহেবই আমাদের দেশের নষ্ট রাজনীতির সুযোগ নিয়ে প্রায় শতবর্ষ বয়স নিয়েও এখনো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে আনন্দ ফুর্তির মাধ্যমে রাজনীতি উপভোগ করে যাচ্ছেন। তার দল এখন গৃহপালিত বিরোধী দলের আসনে আছেন আর তিনি এনজয় করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদবী। জাতীয় পার্টিও তেমনি একই সাথে সরকারোও আছে আবার বিরোধীদলেও তারা! এরশাদ সাহেব এবার স্বপ্ন দেখছেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রেসিডেন্ট পদটি আবার বাগিয়ে নেবার! নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গকরার যে অপরাজনীতি এদেশে চলছে তাতে সে প্রেসিডেন্ট হলে আমরা লজ্জিত হলেও অবাক হবোনা মোটেই!

নূর হোসেন যে আমাদের মঠবাড়িয়ার সন্তান তা রাজনীতি সচেতন বয়ষ্করা জানলেও তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই ছিলো অজানা।কারন এদেশে জাতীয় বীরদের দলমত নির্বিশেষে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি।যদিও ঢাকায় ঘটা করেই ১০ ই নভেম্বরে “শহীদ নূর হোসেন দিবস” পালন করা হয় কিন্তু মঠবাড়িয়াতে অতীতে নূর হোসেনকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হতোনা।

মঠবাড়িয়ার সন্তান নূর হোসেনকে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক ভাবে তুলে ধরার প্রত্যাশা নিয়েই আমরা গড়ে গড়ে ওঠা “#জাগো_লক্ষ_নূর_হোসেন নামের একটি সংগঠন। আমাদের স্বপ্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শহীদ নূর হোসেনের জীবন দানের ইতিহাস তুলে ধরা। পাশাপাশি মঠবাড়িয়াতে নূর হোসেনের একটি ভাস্কর্য নির্মান, মঠবাড়িয়া থেকে শাপলেজা পর্যন্ত রাস্তাটি “শহীদ নূর হোসেন সড়ক” নামে নামকরণ, তার নামে মঠবাড়িয়াতে একটি আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরী নির্মাণ সহ বেশ কিছু দাবী জানিয়ে আসছি। আমরা আমাদের সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাসও পেয়েছি। নিশ্চয়ই একদিন এগুলো বাস্তবায়ন হবে বলেই আমরা প্রত্যাশী। আমরা চাই রাষ্ট্রের পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দল, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং ব্যক্তিপর্যায়েও যোনো সবাই গণতান্ত্রের চর্চা করে। এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া।

সেই মঠবাড়িয়ার মাটিতে এরশাদ সাহেবের আগামী ২৭ তারিখ আসার কথা রয়েছে।রাজনীতির মাঠে এখনও তার পরিচয় ‘#আনপ্রেডিক্টেবল‘ হিসেবে।তাই কেউ কেউ মনে করছেন শেষ মুহূর্তে তিনি নাও আসতে পারেন। তবে এর আগেও তিনি এখানে এসেছেন। তাই এবারো তার আসার সম্ভবনাই বেশি।সামনে যে জটিল রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে তাতে সরকারই চাইবে এরশাদ সাহেব বীরের বেশেই দেশ দাপিয়ে বেড়াক।ফলে আমরা চাইলেও হয়তো তাকে রোধ করতে পারবোনা।তাই আমরাও চাই তিনি মঠবাড়িয়ার মাটিতে আসুক।এসে শহীদ নূর হোসেনের পিতৃ-ভূমিতে প্রকাশ্য জনসভায় #নূর_হোসেনের_মৃত্যুর_জন্য_দুঃখ_প্রকাশ_করুক। যদিও জানি এরশাদ সাহেব নিজ হাতে নূর হোসেনকে খুন করেননি কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তার পতনের দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ প্রান হারালে এর দায় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি কিছুতেই এড়াতে পারেননা। তাহলে হিটলারকেও আমাদের ক্ষমা করে দিতে হবে কারন হিটলার নিজ হাতে একজনকেও হত্যা করেননি!

এরশাদ সাহেব দুঃখ প্রকাশ করলেই হয়তো শহীদ নূর হোসেনের মা তার সন্তানকে ফিরে পাবে না।পুত্রশোক কোনো কিছুতেই ভোলা যায়না। কিন্তু শহীদ নূর হোসেনের আত্মা কিছুটা হলেও হয়তো শান্তি পাবে।

লেখক : আহ্বায়ক, জাগো লক্ষ নূর হোসেন ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...