সোহেল হাফিজ, বরগুনা >>
আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হয়েছিল সোহেল। সেই সোহেলের জন্যে কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছিলো মায়ের।
ভাই হারানোর শোকও যখন ভুলতে বসেছিলো ভাই-বোনরা। ঠিক তখন রবিবার হঠাৎ করেই বাড়ি ফিরল বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের সেই দরিদ্র যুবক সোহেল (২৭)। কোথা থেকে কিভাবে সে ফিরে এসেছে তা কেউ জানে না। ১০টি বছর তার কিভাবে কেটেছে তাও জানে না কেউ।
সোহেলের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোহেল যখন বাড়ি ফিরে আসেন তখন তিনি বড় বড় চুল, দাড়ি এবং গোঁফে আবৃত ছিলেন। তাকে দেখে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই মনে হয়েছে। বাড়ি ফিরেও এখন পর্যন্ত কারও সাথে কোনও কথা বলছেন না সোহেল। নির্বাক তাকিয়ে থাকেন বন্ধুদের দিকে। মাঝে মাঝে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তিনি।
ঘটখালী গ্রামের স্থানীয় অধিবাসী আলমগীর মোক্তার জানান, সিডরের একদিন আগে সোহেলসহ একই গ্রামের ১২ জন দিনমজুর মিলে পায়রা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলারযোগে ধানশী (ধান গাছের মত লম্বা উদ্ধিদ যা পানের বরজে ব্যবহৃত হয়) সংগ্রহের জন্য যায়। পরদিন রাতে প্রলয়ঙ্করী সিডরের কবলে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ১২ সহকর্মী। পরে তাদের দুজন বাড়ি ফিরলেও বাকী ১০ জন আজ অবধি ফেরেনি।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান বাদল বলেন, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আরপাঙ্গাশিয়া বাজারে একটি ট্রাক পাঁচ-ছয়জন লোক নামিয়ে দিয়ে যায়। পরদিন সকালে ঘটখালী গ্রামের একজন স্থানীয় অধিবাসী জেসমিন আক্তার আরপাঙ্গাশিয়া বাজারে সোহেলকে দেখে তার বাড়িতে খবর দেন।
উপকূলীয় উন্নয়ন সংগঠন জাগোনারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, দুর্যোগের কবলে পড়ে গভীর বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হওয়ার ৫-১০ বছর পরে বাড়ি ফেরার ঘটনা বরগুনায় নতুন নয়। এর আগেও জেলার বিভিন্ন গ্রামে এ রকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে দীর্ঘদিন পরে এভাবে ফিরে আসা একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে যারাই এভাবে ফিরে এসেছেন তাদের অধিকাংশ জেলেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তাদের অনেকই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েই জীবনযাপন করছেন। তবে কেন, কিভাবে বা এর পেছনে কি রহস্য রয়েছে তা এখনও উদঘাটন করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওরা ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের স্থানীয় অধিবাসী এনসান আলীর তিন মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে সোহেল দ্বিতীয়। দারিদ্রের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার পরে আর এগোয়নি তার পড়াশোনা। সোহেল যখন নিখোঁজ হন তখন তার বয়স ছিলো ১৭ বছর। এখন তার বয়স ২৭।
সূত্র >> কালের কণ্ঠ