ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - অক্ষম ব্যক্তির রোযার শরয়ী হুকুম : কাযা এবং ফিদইয়া আদায়ের মাসয়ালা

অক্ষম ব্যক্তির রোযার শরয়ী হুকুম : কাযা এবং ফিদইয়া আদায়ের মাসয়ালা

মুহাম্মাদ সাদিকুর রহমান >>

❑ শাশ্বত ও মানবতার ধর্ম ইসলামের অন্যতম একটি ফরয বিধান হল পবিত্র রমজান মাসের রোযা।

এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন —
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার।”
★হাওয়ালা– (সূরা বাকারাহ – আয়াত ১৮৩)

কিন্তু যারা রমজান মাসে রোযা রাখতে অক্ষম তাদের করণীয় সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

❑ অক্ষমতার স্থায়িত্ব বিবেচনায় অক্ষম ব্যক্তিগন দু’ভাগে বিভক্ত।
১) অস্থায়ী, স্বল্প মেয়াদী বা সাময়িক অক্ষমতা।
২) স্থায়ী বা দীর্ঘ মেয়াদী অক্ষমতা।

❑ অস্থায়ী, স্বল্প মেয়াদী বা সাময়িক অক্ষম ব্যক্তির বর্ণনা:–
———————————————————-
রমযান মাসে শরিয়ত নির্ধারিত সাময়িক অসুবিধা কিংবা ওজরের কারণে যিনি রোযা রাখতে অক্ষম।
১) সফর অবস্থায়।
২) অসুস্থ হওয়া (পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার মত যথেষ্ঠ লক্ষন রয়েছে)
৩) মহিলাদের মাসিক নির্ধারিত সময় অতিবাহিত কালীন সময়।
৪) বাচ্চা প্রসব কালীন পরবর্তী নির্ধারিত সময়।
৫) দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা রোজা রাখলে দুধের অভাবে শিশুর প্রাণ নাশের আশঙ্কা। অথবা অন্য কোনো সাময়িক কারণে প্রাণ নাশের আশঙ্কা থাকলে।

❑ রোযা রাখতে অস্থায়ী বা সাময়িক ভাবে অক্ষম ব্যক্তির করনীয়:–
——————————————————————-
এমতাবস্থায় উপরোক্ত ব্যক্তিগন সাময়িক অক্ষমতা দূর হলে সাথে সাথে প্রতিটি রোযা ভঙ্গের কারণে একটি করে রোজা কাযা আদায় করবেন।

উপরোক্ত ব্যক্তিদের রোযার সম্পর্কেই আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেনন–
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে। কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা ভ্রমণে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ, তাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না। তাই তোমরা রোজা রাখবে অর্থাৎ রোজার সংখ্যা পূরণ করবে এবং নিজেদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা বর্ণনা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।”
★হাওয়ালা–(সূরা বাকারাহ – আয়াত১৮৫)

❑ স্থায়ী বা দীর্ঘ মেয়াদী অক্ষম ব্যাক্তির বর্ণনা:–
————————————————
যে সমস্ত মুসলিমগন শরূয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কারণে স্থায়ী ভাবে রোযা আদায় করতে অপারগ হয়ে যান, সুস্থতা বা রোযা রাখার সক্ষমতা ফিরে আসার আশা কোন নূন্যতম লক্ষণও বাকী থাকে না।
১) বার্ধক্য জনিত কারণে অতিশয় বয়োবৃদ্ধ।
২) গুরুত্বর অসুস্থ ব্যক্তি যার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
৩) রোজা রাখলে স্থায়ী ভাবে প্রাণহানি ঘটতে পারে।

❑ রোযা রাখতে স্থায়ীভাবে অক্ষম ব্যক্তির করনীয়:–
—————————————————–

অতিশয় রোগাক্রান্ত, বয়োবৃদ্ধ, এমনকি দৈহিক দুর্বলতার কারণে রোজা রাখা অনেক কষ্ট সাধ্য অথবা রোজা রাখা দুঃসাধ্য বা রাখলে প্রাণহানির আশংঙ্কা রয়েছে তাদের জন্য নিম্নোক্ত শরয়ী বিধান সমূহ প্রযোজ্য।

এমতাবস্থায় উপরোক্ত ব্যক্তিগন রোজা রাখার পরিবর্তে ফিদইয়া আদায় করবেন।

উপরোক্ত ব্যক্তিদের রোযার সম্পর্কেই আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, ‘(যারা রোজা রাখতে সক্ষম নন) তারা রোজা রাখার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে’।
★হাওয়ালা– (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৪)।

❑ অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায়ের নিয়ম:–
———————————————
শরিয়তে ফিদইয়া হল, বিনিময় বা মুক্তিপণ। প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একটি করে ‘সদকাতুল ফিতর’ বা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা ফিদইয়া বা অনুদান গ্রহনের উপযুক্ত গরীব ব্যক্তিকে দান করা।
★হাওয়ালা–(ফতহুল ক্বাদীর)।
অতএব দু’টি উপায়ে ফিদইয়া আদায় হবে।
১) একজন নিঃস্ব, ফকির বা মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ানো।
(আমাদের দেশে যেহেতু দৈনিক খাবারের ক্ষেত্রে তিন বেলা খাবার গ্রহনের প্রচলন থাকায় তিনবেলা খাবার খাওয়ানোই উত্তম)।
২) ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম খেজুর,আটা, গম, চাল বা তার সমপরিমাণ মূল্য গরিবদের দান করাই হল রোযার ‘ফিদইয়া’।

❑ ফিদইয়া আদায়ের পরেও সুস্থতা লাভ করলে করনীয়:–
————————————————————–
এ অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে সুস্থতা লাভ করে এবং রোযা রাখার সক্ষমতা অর্জন করেন অর্থাৎ রোজা রাখার মতো শক্তি ও সাহস ফিরে পান়; তাহলে ঐ ব্যক্তি নিজেই রোজার কাযা আদায় করে নিবেন। এক্ষেত্রে আগে আদায়কৃত ফিদইয়া সাদকা বা দান হিসেবে গণ্য হবে এবং সওয়াবের অধিকারী হবেন।

❑ ফিদইয়া আদায় না করে মারা গেলে করনীয়:–
————————————————-
অসুস্থ বা রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তি যদি ফিদইয়া আদায় না করে মারা যায় এবং মৃত ব্যক্তি কর্তৃক ফিদইয়া আদায়ের ব্যাপারে অসিয়ত থাকে, তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে উত্তরসূরীগনের জন্য ফিদইয়া আদায় করা ওয়াজিব বা আবশ্যক কর্তব্য।
তবে অসিয়ত না করে গেলে ফিদইয়া আদায় করা মুস্তাহাব বা উত্তম কাজ।

আরো একটি জরুরী মাসয়ালা: বদলী রোজার হুকুম:–
——————————————————
কিছু স্থান বিশেষ একটি প্রচলন আছে, রোযা রাখতে অক্ষম বা সক্ষম ধনী ব্যক্তি কর্তৃক গরিব লোক বদলী রোজা আদায় করেন।
এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, কোনো অবস্থাতেই একজনের রোজা অন্যজন বদলি হিসেবে পালন করতে পারবেন না। শরীয়তে এমন বদলী রোজার বিধান নেই। কেউ কারও রোজা বদলি হিসেবে রাখলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা শুদ্ধও হবে না।

❑ মাহে রমজানের রোযা গুলোকে আল্লাহ তা’য়ালা ফরয করে মুসলমানদের আত্মিক পরিশুদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছেন। এই রোযার মাধ্যমেই তাকওয়া তথা পরহেজগারিতা দান করে নিষ্কলুষ আত্মা এবং সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করেন।

তাই, কাযা আদায়ের মাধ্যমে আরোপিত রোজার ফরয বিধান আদায় করা উচিত। ফিদইয়া আদায়ের

মাধ্যমে আল্লাহ পাক বান্দার রোজা বর্জনের গুনাহ সমূহ মার্জনা করেন। আল্লাহ তা’য়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ ভাবে রোজা আদায় করে ইসলামী শরীয়তের শাশ্বত বিধানের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আ’লামীন।

লেখক >> মুহাম্মাদ সাদিকুর রহমান, শিক্ষার্থী, ইসলামী আইন অনুষদ, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...