এক সময় মঠবাড়িয়া বাজারে একটি আওয়াজ ছিল ‘এ পেপার’ প্রতি উত্তরে সাধু পেপার দাও। বয়সের ভারে ন্যূজ সাধু এখন একটি ব্যাংকের প্রহরী। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, কনকনে শীতকে উপেক্ষা কওে জীবনের প্রায় ৩৫ বছর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া বাজারের অলি-গলিতে সংবাদপত্র বিলি করেছেন সাধু। পুরো নাম সুনিল অধিকারী । সহজ সরল মানুষ সুনীলের স্থানীয় পরিচিতি সাধু নামে । মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় শিংগা গ্রামে স্থায়ী বাসিন্দা তিনি।
জানাগেছে, ১৮ বছর বয়সে মাত্র ১০০ টাকা বেতনে মঠবাড়িয়ায় সংবাদপত্র বিলি শুরু করেন তিনি। তখন আমাদের মঠবাড়িয়াতে ঢাকা থেকে পত্রিকা আসত লঞ্চ যোগে। ফলে পাঠক একদিন পর বাসি পত্রিকা হাতে পেতেন। অর্থাৎ রবিবারের পেপার পাঠক হাতে পেতেন সোমবারে। তাও আবার সন্ধ্যার দিকে। পেপার যে সময়ই আসুক পেপারগুলো বুকে জড়িয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যেত সাধু। যখন পাঠাশালার ছাত্র ছিলাম তখন থেকেই দেখেছি সাধু’র কোলে পেপারের গাইড। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি।
২০০৭ সালে সাংবাদিকতার পেশায় আসার পর দাদার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। প্রথম দিকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও পরবর্তীতে ওস্তাদ বলে ডাকতাম। দাদার সাথে কথা বলার পর মনে হলো মানুষ ছোটখাটো হলেও মনের দিক থেকে অনেক বড় মনের মানুষ সুনিল অধিকারী ওরফে সাধু। একজন সরল ভালো মানুষ। নীতি ও আদর্শের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই। পত্রিকা বিলির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রগতি নিউজ এজেন্সির মালিক প্রয়াত সুশীল হালদারের কাজ করে গেছেন। এক জীবনে ৩৫টি বছর অনেক দিন। ৩৫ বছর ধরে একজন মালিকের কাজ করা অনেক কঠিন। বেতন সামান্য হলেও কাজকে অনেক বড় করে দেখতেন সাধু। পত্রিকাই ছিল যেন তার প্রাণ। শত কষ্টের মাঝেও পাঠকের সাথে কথা বলতেন হাসি মুখে। দুনিয়ার কোনো হট্টগোলই তার পছন্দ নয়। ব্যস্ততার মাঝে সুযোগ পেলেই হাতের কর টিপে ভগবানকে স্মরণ করেন। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় গত ৭ বছর আগে এ পেশা ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে সাধু ধানীসাফা কৃষি ব্যাংকে প্রহরী হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাধুর জানান, সাইকেল চালাতে পাড়লে তিনি এ পেশা ছেড়ে চলে যেতেন না। পত্রিকা বিলির পেশা ছেড়ে দেওয়ায় মঠবাড়িয়া শহরের এক সময়ের জনপ্রিয় সাধু এখন একা হয়ে পড়েছেন। তাকে এখন কেউ আর সাধু বলে ডাক দেয় না।
লেখকঃ সাংবাদিক