ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - মাঠবাড়িয়ার জনপ্রতিনিধিদের প্রতি খোলা চিঠি

মাঠবাড়িয়ার জনপ্রতিনিধিদের প্রতি খোলা চিঠি

মোঃ গোলাম মোস্তফা > বিভিন্ন পত্র পত্রিকার ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার বদৌলতে মঠবাড়ীয়ার সংঘর্ষ ও হতাহতের সংবাদ জানতে পারলাম। আপনারা আর অগ্রসর হবেন না। দয়া করে আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দিন। আমরা আপনাদের নিকট ভাত, কাপড় চাই না। নিজের কাজ নিজে করে নির্বিঘেœ ডাল ভাত খেয়ে ও মোটা কাপড় পড়ে থাকতে চাই। দেখতে দেখতে বয়স ৬০ এর কোঠায়। জীবনে বাবার চাকুরীর বদৌলতে, নিজের চাকুরী ও ব্যবসায়ীক জীবনে বহু দেশ বিদেশে ঘোরার সুযোগ হয়েছে। মঠবাড়ীয়ায় এই প্রথম গোলাগুলির রাজনীতি দেখতে পেলাম। হলিআর্টিজান-সোলাকিয়া-কল্যানপুর দেখে দেখে অস্তির। সেখানে মঠবাড়িয়াতে গোলাগুলি রক্তারক্তি হতাহত দেখতে হবে তা কখনোই কল্পনাও করিনি। নিজ দলের আধিপত্ত বিস্তার নিয়ে এতোদূর পর্যায় যেতে হবে কেন? আমরা সবাই আতœীয়তার বন্ধনে জড়িত। আজ নিজ স্বার্থের জন্য এমনিভাবে গ্রুপে বিভক্ত হতে হবে কেন? আপনারা জনপ্রতিনিধি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগনের সুখ শান্তির কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে একি অন্ধকার নর্দমায় নিমজ্জিত হতে চলেছেন। যে ব্যাপারটি নিয়ে সূত্রপাত তা পরিসমাপ্তির জন্য মঠবাড়ীয়াতে কি এমন লোকের খুবই অভাব! রমজানের মধ্যে একবার সমাধানের চেষ্ঠা করা হয় অথচ তার পর একমাস অতিবাহিত না হতেই ব্যাপক আকারে পূনঃরায় উত্থাপিত হলো ঘটানাটি।
আমরা মঠবাড়ীয়াটিকে কিভাবে সুন্দর একটি সাজানো জনপথে রুপান্তরিত করতে পারি সেদিকে প্রত্যেকে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে পারি। একটি মানুষের ধণ সম্পদের প্রয়োজন আছে কিন্তু তা বেঁচে থাকার জন্য কত টুকু প্রয়োজন আমরা কি ভেবে দেখেছি! সব্রত্র ব্যক্তি স্বার্থ, এই স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েই তো আপনারা নেমেছিলেন জন কল্যাণে তথা জনসেবায়। এই কি তার নমুনা! আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকলো আপনারা যারা জনপ্রতিনিধি, জনগনের সেবক ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত, তাঁরা ধৈর্য্য ধারন করুন। আপনারা নেতারা অস্তির হলে সমাজ তথা এলাকার জনগনের অশান্তি বেড়ে যায়। যে কোন কিছুর বিনিময়ই হোক না কেন আপনাদের এ থেকে বিরত থাকতে হবে। যে সময় টুকু ব্যয় হচ্ছে এই অনিষ্ঠ পথে সেটুকু সময় জনকল্যাণে ব্যয় করুন। কাউকেতো ছাড় দিতেই হয়! আর সেটি কে দেবেন ভেবে দেখুন।
আমরা মঠবাড়িয়াবাসি শান্তিতে থাকতে চাই । আমরা কোন মারা-মারি, হানাহানি, কাটাকাটি চাই না। নানা-নাতির দন্ড দেখতে চাই না। আমরা বলির পাঠা হতে চাই না। আজ যারা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে তাদের কথা, তাদের পরিবারের কথা ভাবুন। যিনি নিহত হয়েছেন তার পরিবারের কথা ভাবুন। ২৪ ঘন্টার ১টি ঘন্টা ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিনের কর্ম ও চিন্তার কথা ভাবুন, কি করেছেন আর কি করা উচিত ছিল। এর জবাবদিহিতা একদিন করতেই হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ছাড় দিন। কোথায় কি হয়েছে তা না ভেবে নিজ এলাকা নিয়ে ভাবুন। মৃত্যুর পর লাশটি মঠবাড়ীয়াতে দাফন হোক এটা সবারই কাম্য। মেয়র সাহেব বলতে গেলে মঠবাড়ীয়ার পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকেই “মেয়র পদে” আছেন। এতোটুকু শহর তৃতীয় শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা (কাগজে-কলমে)। আদৌ পৌরবাসী কি প্রথম শ্রেনীর কোন মর্যাদা পাচ্ছেন? নেই কোন পানি ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাটের বে-হাল দষা, বিদ্যুতের লুকোচুরি, ড্রেনেজের ব্যবস্থাতো নেই, ট্রাফিক সমস্যা, শৌচাগারের সমস্যা, পরিবেশ বান্ধব কোন কার্যক্রম কি কোথায় চোখে পড়ে? কতবার আমার লেখুনির মাধ্যমে ঘুমন্ত মেয়র সাহেবকে সজাগ করতে চেষ্টা করেছি, আদৌ কি তাঁর ঘুম ভাঙ্গাতে পেরেছি! আপনারা তো অনেক বড় মানুষ। আমাদের মতো ক্ষুদ্রকায় জনগনের কথা আমলে নেওয়ার সময় কোথায়!
উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কেও সামাজিক অনেক সমস্যার কথা এই পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরেছি। জানি না তাঁকেই বা কতটুকু সজাগ করতে পেরেছি। ১১ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহোদয়গণকেও লিখেছি সমাজের বিশৃঙ্খলার কথা। মেয়র মহোদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে আমার ক্ষুদ্র লেখনির মাধ্যমে পরামর্শ হলো উভয়ই যাতে সম্মান জনকভাবে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন তার জন্য কিছু ছাড়া দিয়ে হলেও ব্যাবস্থা গ্রহন করুন। পরিশেষে একটি ছোট গল্প দিয়ে লেখা শেষ করবোঃ হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা নিযুক্ত হয়ে ভিষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন! আমার শাসনকৃত এলাকার একটি প্রাণিও যদি কষ্ট পায় বা ক্ষুদায় মারা যায় তবে আল্লাহর কাছে আমি অপরাধি হয়ে যাব, কাল কিয়ামতের দিন আমি বিচারের সম্মখিন হবো। গভীর রাতে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের এক ছোট্ট কুটুরিতে প্রদীপ জ্বলতে দেখে এগিয়ে গেলেন, দেখছেন গৃহকর্তা বিচলিত হয়ে হাঁটা-হাঁটি করছেন। ওমর (রাঃ) গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ভাই তুমি এতো প্রেষাণ কেন? লোকটি বল্লেন ভাই আমার স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাঁতরাচ্ছে, কোন দাই-মা নেই আমি তাই খুব বিচলিত। সাথে সাথে ওমর (রাঃ) বল্লেন তুমি চিন্তা করো না আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু সময় পর ওমর (রাঃ) একজন মহিলাকে নিয়ে হাজির হয়ে বল্লেন বন্ধু ইনি দাই-মা ভিতরে যেতে দিন। কিছুক্ষন পর ভিতর থেকে আওয়াজ এলো ইয়া আমিরুল মোমিনিন আপনার বন্ধুকে বলুন তাঁর একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। লোকটি হযরত ওমর (রাঃ) কে চিনতে পেরে ক্ষমা চাইতে থাকলেন, আর বল্লেন ইয়া আমিরুল মোমিনিন আপনাকে আমি চিনতে পারি নি। সেজন্য বেয়াদবি মাফ করবেন। তবে দাই-মার জন্য কিছু স্বর্ণ-মুদ্রা দিতে চাই। ওমর (রাঃ) বল্লেন,হে বন্ধু তুমি কাকে দাই-মা বলছো, সেতো স্বয়ং আমার সহ-ধর্মীনি। এবারে বন্ধু আরো ভীত সন্ত্রস্থ হলেন।

লেখক পরিচিতি > মো. গোলাম মোস্তফা, মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...