খালিদ আবু, পিরোজপুর <>
জীবন যুদ্ধে পরাজিত অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষক অন্ধত্ব আর স্বজনদের অবহেলা নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করছেন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এক সময় অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে ইংরেজীতে মাস্টার্স্ করা হতভাগ্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম কাজীকে (৮৫) রাস্তায় দাড়িয়েও ভিক্ষা করতে হয়েছে। শিক্ষকতার সময় স্কুলের পাওনাদির সবটুকু বুঝে আনার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার এই মানুষগড়ার কারিগর এখন চিকিৎসা খরচ ও নিজের ভরনপোষনের অধিকার কথা শোনাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
নিজের এই অসহায়ত্বের কথা জানাতে অবসরপ্রাপ্ত ঐ স্কুল শিক্ষক সোমবার রাতে পিরোজপুর প্রেসক্লাবে বর্তমানে তার দেখভাল করা এক মেয়েকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাবার পক্ষে মেঝ মেয়ে সৈয়দা ফারহানা ফেরদৌস মনি অভিযোগ করে বলেন, তার মা নুরজাহান বেগম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পিরোজপুরে চাকুরি করে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। বড় বোন মুক্তা পিরোজপুর শহরের ভাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বাবা অবসরে গেলে বড় বোন অবসর কালীন কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ করে বাবাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এমনকি পারিবারিক সম্পত্তি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে মানুষের কাছে বলে বেড়ায় তার বাবা মারা গেছেন। মায়ের সাথে দেখা করতে গেলে অপমান অপদস্ত করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, তার বাবা নজরুল ইসলাম ১৯৮২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ডিআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করেছেন। চাকুরি কালিন সময়ে তার বাবা স্কুল থেকে প্রাপ্ত বেতনাদিও পাননি। স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন। এসময় তিনি স্কুলের ন্যায্য পাওনাসহ বড় মেয়ের কাছ থেকে বাবার ভরনপোষণের খরচ পাবার দাবী জানান।
এব্যাপারে অভিযুক্ত বড় মেয়ে সৈয়দা কানিজ ফেরদৌস মুক্তা জানান, এক সময় তার বাবা সন্তানদের দেখাশুনার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন। তখন মা নুরজাহান বেগম চাকরী করে মেয়েদের লালন পালন করেছেন। তার মেঝ বোন মনি ১৬ বছর আগে নিজের পছন্দে বিয়ে করার পর মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছে। ছোট বোন হিরা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এখন ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত।
তিনি আরো বলেন, তার বাবা এক সময় নিখোঁজ হয়ে যান এবং গ্রামের বাড়ী ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে চাচাদের সাথে থেকেছেন। তখন তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার করেছেন বলে শুনেছি। সে ঘরে তার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে বলে জানা যায়। শৈশব থেকে দেখে এসেছি বাবা মায়ের সাথে বনিবনার অভাব। বাবার অবহেলার মাঝে মায়ের প্রচেষ্টায় আজ আমি নিজের পায়ে দাড়িয়েছি। মা পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সজ্জায়।
মায়ের সঞ্চিত অর্থ আর নিজের বেতন দিয়ে মায়ের চিকিৎসা, ছোট বোনের লেখাপড়া আর পরিবারের ভরনপোষন করে যাচ্ছি বলে উল্লেখ করে মুক্তা বলেন, মেঝ বোন মনি যে অভিযোগ করেছে তা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
ডিআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুল আলম বলেন, নজরুল ইসলাম যখন আমাদের স্কুলে ছিলেন তখন আরেকজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে তার ভাল জানা নাই। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত না থাকায় কোন প্রতিকার করা যাচ্ছে না। তবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নজরুল ইসলামের প্রতি সহানুভুতিশীল এবং মানবতার স্বার্থে তাকে আর্থিক সহায়তা করার চিন্তা কমিটির রয়েছে।