ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব


হিন্দুরা তাদের উদ্দেশ্য ও উপলক্ষ অনুযায়ী দেবতা নির্বাচন এবং পূজা করে থাকেন। যে উদ্দেশ্য সাধনে যে দেবতা বেশী প্রশংসনীয়, ওই দেবতার পূজা করা হয়। নানা কারণে বাঙ্গালী
হিন্দুরা দেবী দুর্গাকে বেশী পূজা করে। দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত উৎসবকে দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা বলে। এটি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুর্গা কে, পূজা কি এবং দেবতা কারা?
হিন্দুদের মতে, যিনি দুর্গম নামক অসূরকে বধ করেছেন, তিনিই দুর্গা। তিনিই এ মহাবিশ্বের যাবতীয় দুঃখ -কষ্ট বিনাশকারিণী দেবী।
পূজা শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রশংসা বা শ্রদ্ধা জানানো, যা উপাসনার মাধ্যমে করা হয়। হিন্দু ধর্মে পূজা শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়। ঈশ্বরের প্রতীক বা কোন রুপকে সন্তুষ্ট করার জন্যে ভক্তি সহকারে বিশেষ পদ্ধতিতে পূজা করা হয়। পূজার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে বা দেব-দেবীর কাছে মথা নত করা এবং তাদের সান্নিধ্য লাভের প্রয়াস। তাই দেব-দেবীদের সন্তুষ্ট করার জন্যে যে অনুষ্ঠান করা হয় তাকে পূজা বলা হয়।
দেবতা কারা? ঈশ্বর অসীম ক্ষমতা ও গুণের অধিকারী। তিনি যখন নিজের গুণ বা ক্ষমতাকে কোন বিশেষ আকার বা রুপে প্রকাশ করেন,তখন তাকে দেবতা বলে। দেবতারা পৃথক গুণ বা শক্তির অধিকারী হলেও তারা ঈশ্বর নন। ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। দেবতারা এক ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ বা শক্তি প্রকাশ করে। ঋগবেদে একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে – ” একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি।” এর অর্থ হচ্ছে, এক, অখন্ড ও চিরন্তন ব্রাহ্মাকে বিপ্রগণ ও জ্ঞানীরা বহু নামে বর্ণনা করেছেন। দেবতাদের বিভিন্ন গুণ বা ক্ষমতার জন্যে তাদেরকে পূজা করা হয়। দেবতাদের পূজা করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে সুখ-শান্তি দান করেন।
দুর্গাপূজা ভারত,বাংলাদেশ, নেপাল সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী হিন্দুরা দুর্গাপূজা পালন করেন। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, এিপুরা, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আশ্বিন ও চৈত্র মাসে বিশেষ জাঁকজমকের সাথে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। ভারতের আসাম,বিহার,উড়িষ্যা ও মনিপুর রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অবাঙ্গালীরা কন্যা কুমারী নামে দেবীর পূজা ও উৎসব পালিত হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজাকে বলা হয় শারদীয় দুর্গোৎসব এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজাকে বলা হয় বাসন্তী দুর্গোৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসব ৫ দিনব্যাপী মহাসমারোহে পালিত হয়। আশ্বিন মাসের শুল্ক পক্ষের ৬ষ্ঠ তিথিতে প্রতিমা স্হাপন করে দশম তিথিতে দশমী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। শারদীয় দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত ধনী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
বাংলাদেশে দুর্গা পূজার প্রথম প্রচলিত হয় সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫)।দিনাজপুর জেলার তাহিরপুরের জমিদার রাজা কংসনারায়ন মতান্তরে নদীয়ার জমিদার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়(১৭১০-১৭৮৩) দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। কৃতিবাস ওঝার রচিত রামায়ন গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, দশম বা একাদশ শতাব্দীতে অখন্ড বাংলায় দুর্গাপূজা প্রচলিত ছিল। হয়তো কংসনারায়ন বা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের সময় থেকে জাঁকজমকের সাথে অনুষ্ঠিত হতে থাকে।
আগে জমিদার এবং ধনী পরিবারগুলো দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। পারিবারিক দুর্গাপূজায় শাস্ত্রচার পালনের ওপর বেশী গুরুত্ব দেয়া হত। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের সমাগম হত। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে দুর্গাপূজা সার্বজনীন রুপ লাভ করে। হিন্দুরা দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখে দেশমাতা,ভারত মাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী চেতনা বিপ্লবের রুপ ধারণ করে। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরাম গান রচনা করেন,যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র হয়।
বিঃদ্রঃ তথ্যে গরমিল পরিলক্ষিত হলে দয়া করে জানালে সংশোধন করা হবে।
আগামী ২২-২৬ অক্টোবর পর্যন্ত হিন্দুদের অন্যতম প্রধান শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে এবং নিরাপদে অনুষ্ঠিত হতে পারে সেজন্যে সুনজর রাখার জন্যে সবাইকে সবিনয়ে অনুরোধ করছি। মদিনা সনদে বলা হয়েছে, অমুসলিমগণ নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। কেউ কারো ধর্ম বা উৎসবে হস্তক্ষেপ বা বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...