ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি

নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি


নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি একটি জাতীয় সমস্যা। বর্তমানে এটি পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। নারী নির্যাতন বলতে বুঝি, নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা অত্যাচার করা। অন্যভাবে বলা যায় যে,নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোন নারীকে অত্যাচার এবং জোরপূর্বক কোন অনৈতিক কাজে বাধ্য করাকে নারী নির্যাতন বলে। নারীর প্রতি এসিড নিক্ষেপ করা, ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি করা, নারী পাচার করা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, অল্প বয়সে জোরপূর্বক বিয়ে করা বা দেয়া,দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করা, যৌন সঙ্গমে প্রলুব্ধকরণ, ইভ টিজিং, স্ত্রীর নিকট যৌতুক দাবী করা, স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করা, স্ত্রীর দেন মোহর পরিশোধ না করা ইত্যাদি নারী নির্যাতনের সামিল। জাতি সংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে,” Gender violence is a violence against women that results in physical, mental snd sexual arbitrary deprivation and violation of human rights. নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ হচ্ছে, নারীদের প্রতি পুরুষের বৈষম্যমূলক মানসিকতা। পুরুষ সাধারণত নারীদেরকে তাদের তুলনায় কম সম্মান ও মর্যাদাবান মনে করে নারীদের ওপর নির্যাতন করে। নারী নির্যাতন দু ভাগে ভাগ করা যায় যথা- পারিবারিক এবং সামাজিক নির্যাতন। ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অধিকার দিয়েছে। ইসলাম প্রদত্ত অধিকার বাস্তবায়ন করা হলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে। নারী ও পুরুষের অধিকার সমান।আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা আল বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে বলেছেন, ” নারীরা পুরুষের ভূষণ আর পুরুষেরা নারীর ভূষণ। ” এ আয়াতে নারী ও পুরুষকে পরস্পরের সমান বলা হয়েছে। বিয়ের পর অনেক স্বামী স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করে না।দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৪ নং আয়াতে “সন্তুষ্টচিত্তে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে বলেছেন। ”
অনেক স্বামী স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করে,যা নারী নির্যাতনের সামিল।স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ। বর্তমানে অনেক নারী স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহার করে।আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে বলেছেন, ” তোমরা পরস্পরে সদ্ব্যাবহারের সাথে জীবনযাপন কর।” বিজাতীয় সাংস্কৃতির প্রভাবে উঠতি বয়সের ছেলেদের হাতে মেয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। ইদানিং নারীরা অশালীনভাবে চলাফেরা করায় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে দেশের অগ্রগতি দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্যে সরকার ১৯৮৩ সালে নারী নির্যাতন ( নিবর্তক শাস্তি) আইন পাস করেছেন।আইনে বলা হয়েছে, কেউ নারী নির্যাতন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর মেয়াদ পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবে এবং একলাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। যদি কেউ নারী ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের চেষ্টায় নারীর মৃত্যু ঘটায় বা ধর্ষণের নারীকে হত্যা করে, তাহলে ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
এ আইন নারীদের নিরাপত্তা বিধান, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং যেকোন নির্যাতন থেকে নারীকে রক্ষার জন্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে এ আইনের অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া, এআইনের কার্যকারিতার অভাবে দেশে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি তথ নারী ধর্ষণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে এ আইন অধিকতর সংশোধন এবং কার্যকর করতে হবে। এছাড়া, সচেতন জনগণ, মানবতাবাদী সংগঠন এবং পুলিশ প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। হে আল্লাহ, নারীদেরকে হেফাজত করুন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...