ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - শৈশবের স্মৃতিচারণ ডাঃ সৌমিত্র সিনহা রায়

শৈশবের স্মৃতিচারণ ডাঃ সৌমিত্র সিনহা রায়


ছোট্টবেলার স্বপ্ন ছিল শের-ই-বাংলা র মতো হবো।বরিশালের স্বপ্নপুরুষ।শের-ই-বাংলার মতো আমিও একবার পড়ে, বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলেছি বারবার, অনেকবার।কিন্তু নতুন করে আবার বই কিনতে হতো,বাবার মার খেতে হইতো,বই ছিড়ছি কেনো বলে । একজন কখনোও অখুশি হইতো না।সে,আমার মা।বড় হইতে হইতে বাবাও বড় হইতে থাকলো,ম্যাচিউর হইতে থাকলো…….। বাবার ছোটবেলার কষ্ট করে পড়ালেখা করার গল্প,দারিদ্র্যতার সাথে সকাল দুপুর যুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে আমার হিরো চেঞ্জ হয়ে গেলো।আমার বাবাই আমার হিরো।একটু বড় হলাম।ঢাকাতে আসলাম,নটরডেম কলেজ।১০ টা সাদা বিড়ালের মধ্যে ১ টা কালা বিলাই থাকলে খারাপ দেখায়।মেধাতে আমি আমার নটরডেমের বন্ধুদের থেকে প্রচুর পিছনে ছিলাম।ফ্রিলি স্পিংকিং।আমার তাই খারাপ লাগতো।কিছুই পড়তাম না,কিছু পাড়তামও না।নটরডেমের হিরো বলতে আমার রুমমেট সুব্রত।আমি আজীবন ওর মতো সহজ সরল জীবন যাপন করতে চাই।নটরডেম আমারে একটা জিনিস শিখাইয়া দিছে,চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিছে,যে আমি চরম মেধাবী কোনো বালক না।এই শিক্ষাটা আমি আজীবন মেনে চলছি।তবে ওই ২ বছরে ৫০০ বারের মতো গর্তে ফালাইয়া,লোকাল গার্ডিয়ান কল কইরা ঝাড়ি খাওয়াইয়া,বাবা ফোন দিয়া ঢাকাতে ডাকাইয়া আইনা তার সামনে অপমান করাইয়া,অংকে ১০০ তে ০০ দিয়া আমার মনে বারবার আঘাত দিছে।আমি কত্তো রামকৃষ্ণ মিশনের বাথরুমে যাইয়া কান্না করছি,হিসাব নাই।ওই সময় দুইটা উপায় ছিলো।হাল ছেড়ে দেওয়া অথবা স্রোতের বিপরীতে সাতার কাটা।নটরডেম কলেজ আমারে স্রোতের বিপরীতে সাতার কাটাইছে।জীবনে প্রথম বাসার বাইরে এসে,পরিচিত মহল্লার বাইরে এসে এটা খুব কষ্টের ছিলো।কথায় আছে…” life starts at the end of comfort zone”… মায়ের কোলের বাইরে এসে এইটা প্রথম সংগ্রাম ছিলো।জীবনে পরিশ্রম করা শিখছি।রাজশাহী মেডিকেলে অনেক কিছু অর্জন আছে। সবথেকে বড় অর্জন ফ্রেন্ডরা।এত্তো সুন্দর একটা ফ্রেন্ডসার্কেল পাওয়াটা স্বপ্নের মতো ছিলো।তবে আমার পড়ালেখার হিরো নাফিস।এখনো।এমবিবিএস শেষ করে ঢাকায় আসছি, এক বছর হয়ে গেলো।কষ্টটা সবথেকে বেশী মনে হয় এইসময়টাতে করছি।আজিজের ওই কবুতরের খোপে মাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকা,নিজের টাকায় সকাল বিকাল রাত খেয়ে,রিক্সা ভাড়া দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে বিনা পয়সার অনারারী ট্রেনিং,নিজের খরচ,বাসার খরচ,ওদের বাসা ভাড়া চালাইতে প্রতি সপ্তাহে টানা ৪৮-৭২ ঘন্টার জন্যে খ্যাপে যাওয়া…৩৫ তম বিসিএস প্রিলি কোচিং,৩৪ তম বিসিএস ভাইভা,বারডেমের ডায়বেটিসের কোর্স……করছি সবই,করা লাগছে। ১ দিন,২ দিন না টানা ১ বছর।কোনো মানুষ এভাবে বেশিদিন বাচতে পারে না।আমি নিজেই মাঝেমধ্যে নিজেরে স্যালুট দেই,আর আমার আশেপাশে যারা এগুলা আরো বেশিদিন ধরে করতেছে তাদেরকেও স্যালুট জানাই।ডাক্তারদের মধ্যে এত্তো এত্তো হিরো,ডাক্তার না হলে জানাই হতো না।থেমে নাই জীবন,থেমে নাই স্বপ্ন দেখা।এখন আর স্বপ্ন দেখতে ভয় পাইনা,এমনকি সাথে আরো ১০ টা ফ্রেন্ডরে সাথে নিয়া স্বপ্ন দেখি।আজ আমার ৩০ তম জন্মবার্ষিকী। এই ছোট্ট জীবনে যা পাইছে অনেক।তবে মা,বাবারে অনেক কিছু দেয়ার ছিলো।বেচে থাকলে,ইচ্ছা রাখি।মানুষ অনেক অসহায়।আবার মানুষ অনেক স্বার্থপর।এই দুই গ্রুপককে আলাদা করে, অসহায় মানুষগুলারে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্রত নিয়ে ভর্তি হইছিলাম মেডিকেলে। ব্রতটা এখনো আছে।গত জন্মদিনের থেকে এই জন্মদিনে জীবনে একজন মানবী যোগ হইছে।সে যেন আজীবন জীবনের আষ্টেপিষ্টে লেপ্টে থাকে।সবশেষে একটা মানুষের গল্প বলে জন্মগ্রহনের সময়টাকে স্মরনীয় রাখতে চাই…
.গল্পটা আমার এক রুমমেটের।
একদিন রাতে ওরে বলতেছিলাম,

,” দোস্ত, ছোট্টবেলায় শরৎচন্দ্রের বই বেশী পড়তাম।রবীন্দ্রনাথ বা বঙ্কিমের উপন্যাস বেশী ভালো লাগতো না,যদিও বাবা সব বই ই কিনে এনে দিতো।তুই কার বই বেশী পড়তি..?”

উত্তরে ও বললো,”দোস্ত,আমার কোনো ছোটবেলা নেই।তুই যখন তোর বাবার কিনে আনা বই ফ্যানের নীচে বাতাস খেয়ে, মায়ের হাতে বানানো চায়ে চুমুক দিয়ে পড়তি,আমি তখন মাঠে গরু চড়াতাম,কাকতাড়ুয়ার কাজ করতাম ধানক্ষেতে,হাল চাষে বাবারে সাহায্য করতাম।”…

জীবনে কিছু মানুষ ঠেকে ঠেকে পরিশ্রমী হয়,আর সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষকে পরিশ্রমী বানিয়েই পাঠায়।

জীবনে যদি আমারে কেউ বলে, তুমি এমন একটা ছবির নাম বলো যেটা তুমি একটানা ১০০ বারও দেখতে পারবা,বিরক্ত হবা না।সোজাসাপ্টা উত্তর হবে…”ভাগ মিলখা ভাগ..”..এই ছবির মধ্যে আমি আমাকে খুজে পাই,একটা আজীবন হতভাগ্য,পরিশ্রমী যুবক ফারহান আক্তারের মধ্যে আমি আমার অবয়ব আঁকি।এই ছবির শেষে একটা লাইন আছে….”dedication, hard working,destinaton, a man with this three, the sky is the limit..”….আমি এই ছবি দেখার পর থেকে এই একটা কথা প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে মনে মনে আওড়াই ,এটা পরিশ্রমী,হতভাগ্য মানুষের গীতার শ্লোক,কোরানের আয়াত।অাকাশ আমিও ছুতে চাই।আমার স্বপ্নের আকাশ অনেক বড় নয়,তবে সুন্দর।মানুষ ছুটে চলুক অসীম স্বপ্ন নিয়ে,খুজে পাক নিজের পছন্দের ঠিকানা।জন্মদিনে সবার দোয়া, আর্শিবাদ চাই।

ডা. সৌমিত্র সিনহা রায়
মেডিকেল অফিসার
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...