ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - পূর্ব বাংলা লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন

পূর্ব বাংলা লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন


১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মধ্যে রাতে জেনারেল মুহাম্মদ আইউব খান এক সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা দখল করেন। সারা দেশে সামরিক আইন জারী করে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙ্গে দেন এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। PODO and EBDO জারী করে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও বামপন্থী নেতা ও কর্মীদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবুল মনসুর আহমেদ, কোরবান আলী, সরদার ফজলুল করিম, নূর উদ্দিন, আবদুল হামিদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন এম, মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, ইত্তেফাক পএিকার সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া,কফিলউদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ আলতাফ হোসেন প্রমুখ। বন্দীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। সামরিক আইন জারী হওয়ায় এদেশে নেমে আসে ভয়াবহ দমননীতি। এ অবস্থায় জামালপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম সাহসী যুবক আলী আসাদ স্হানীয় যুবকদের বিশেষ করে আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খন্দকার ফজলুর রহমান, এম,এ, সাঈদ, আখতারুজ্জামান প্রমুখ এর সাথে আলাপ -আলোচনা করে এদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্য ১৯৫৮সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে গোপনে জামালপুরে গঠন করেন “পূর্ব বাংলা লিবারেশন ফ্রন্ট ” নামে এক বিপ্লবী সংস্থা। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তাঁরা নেএকোনা ও টাঙ্গাইলে শাখা গঠন করেন।
১৯৫৯ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় এর শাখা গঠিত হয়। তাদের সাংগঠনিক প্রচেষ্টায় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহণ এবং অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের জন্যে আলী আসাদ ঢাকাস্হ ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সাথে আলাপ আলোচনা করে এক দল যুবককে নিয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে যান। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অনুমতি নিয়ে তাঁরা যখন সেখানে কাজ করেন তখন হঠাৎ পশ্চিম ব্ঙ্গ সরকার গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরন করেন। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাদেরকে ফেরত চেয়ে তাদের ওপর গ্রেফতারী পরোয়ানা ও হুলিয়া জারীর কাগজ পএাদি পশ্চিম বঙ্গ সরকারের নিকট প্রেরন করেন। পশ্চিম বঙ্গ সরকার তা যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে মুক্তি দেন।

পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামীদের কার্যকলাপে উদ্বিগ্ন কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা বঙ্গ সন্তান খাজা নাজিম উদ্দীন ১৯৬২ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিল মুসলিম লীগের কর্মী সভায় ভাষণ দানকালে বলেন যে, আমি ৫ বছর যাবত ঢাকায় অবস্থানকালে আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের নিকট থেকে অবহিত হয়ে ব্যথিত হলাম। এদেশের একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে উইসপারিং করতেছে।
জেনারেল আইউব খান ১৯৬২ সালের ৮জুন সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন এবং ১৮জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমানকে মুক্তি দেন। ১৫ জুলাই রাজনৈতিক দল বিধি জারী করে রাজবন্দিদেরকে মুক্তি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পুনর্জীবিত করেন। জেনারেল আইউব খান নিজেই কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে একটি দল গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেয়ে দলীয় কাজে ময়মনসিংহ যান। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খানের কাছে আলী আসাদের বিপ্লবী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারেন। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, এখন থেকে আলী আসাদ প্রকাশ্যে বের হয়ে দলীয় কাজ করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধুর বাণী তাকে জানানো হলে তিনি প্রকাশ্যে বের হতে রাজী হননি। তিনি বলেন যে, শপথ নিয়েছি, দেশকে স্বাধীন করব। দেশের সাথে বেঈমানী করতে পারব না। দেশের স্বাধীনতার জন্যে ভারতের সহযোগিতা চাইব।ভারতের সহযোগিতা না পেলে চীন অথবা রাশিয়ার সহায়তা চাইব। স্বাধীনতা অর্জনে সহযোগিতা এবং সহানুভূতি পাওয়ার জন্যে তিনি সারা ভারত ঘুরে বেড়ান। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে ইসলামী ছাএ সংঘের জামালপুর মহকুমা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এর নেতৃত্বে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আল বদর বাহিনী। যেখানে লিবারেশন ফ্রন্টের জন্ম সেখানেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আল বদর বাহিনীর জন্ম। ১৯৭১সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্ত হলো, কিন্তু আলী আসাদের সন্ধান আজও পাওয়া গেল না।
তথ্য সূত্র ঃ
১/ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (২য় খন্ড)
২/ আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর-আবুল মনসুর আহমেদ।
৩/বাংলাদেশের মুক্তিযুূ্দ্ধের ইতিহাস -ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...