ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - প্রকৃতি 🔻 বাহারী ঝুমকোলতা

প্রকৃতি 🔻 বাহারী ঝুমকোলতা


🌿
আমাদের প্রাণ ও প্রকৃতি জুড়ে বিচিত্র ফুলে নিয়ত শোভা ছড়ায়। ফুল আসলে সবুজ প্রকৃতির মোহন রূপ। ফুল মনে প্রশান্তি আনে। বাহারী কত সহস্র ফুল। কবি বলেছেন ফুল সে আপনার জন্য ফোঁটেনা। আমাদের প্রকৃতিতে নানা অচাষকৃত উদ্ভিদে ঠাসা। কিছু ফুল চাষ করা আবার কিছু অচাষকৃত। পথের ধারে ঝোপে ঝাঁড়ে কত যে ফুল ফোঁটে সব সুনন্দ শোভনের নাম জানা হয়না। ছবি তুলে তুলে বৃত্তান্ত জানার চেষ্টা করি । মাঝে মাঝে চেনা ফুলের নামও ভুলে যাই।

দেখতে কানের ঝুমকার মতো বলেই এ ফুলের পরিচিতি ঝুমকোলতা। আবার স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি রাধিকা নাচোন নামে। অসম্ভব দৃষ্টিনন্দন এই ঝুমকোলতা ফুল। হালকা বেগুনি রঙের আভায় ফোটা ঝুমকোলতা সত্যি বাহারী এক ফুল। আমাদের গ্রামদেশে বাগানের ঝোপঝাড়ে একসময় এ লতা জাতীয় ফুলটি বেশ চোখে পড়ত। এখন তেমন একটা দেখা মেলেনা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ঝুমকোলতা ফুল ফোটে।
তবে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সদরের থানাপাড়া বাসস্টান্ড এর কাছে গুলিসাখালী সড়কের পাশে ঝোঁপে আকড়ে ধরে বেড়ে ওঠা নয়নাভিরাম ঝুমকোলতার ফুলের ছবিটা তুলেছিলাম। পাতার গোড়া থেকে গজানো লতা ছেয়ে গেছে। গত তিন আগে সেই ঝুমকোলতার খোঁজে গিয়ে ্োর দেখা মেলেনি। ঝোপঝাঁড় পরিস্কার হয়ে গেলে ঝুমকোলতাও হারিয়ে যায়।

ঝুমকোলতা ফুল দেখতে ভারি সুন্দর। লতানো গাছ চিরসবুজ। ঘন সবুজ পাতায় ভরা এই ঝুমকো লতা। ঝুমকোলতার বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora Incarnata।
এটি একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ গাছেরপাতা দেখতে হাতের তালুর মতো। পাতায় তিনটি খাঁজ আছে এবং প্রতিটি অংশ দেখতে আঙ্গুল সদৃশ। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। পাতার কক্ষ থেকে লতা বের হয়। ফুল একক, সুগন্ধযুক্ত। বাতাসে একটা মৌতাতানো সুবাসিত গন্ধ ছড়ায়। হালকা বেগুনি রঙের পাপড়ি বাইরের দিকে সজ্জিত থাকে। এ গাছের ঔষধিগুণ আছে যা বিভিন্ন প্রকার রোগ-প্রতিরোধ ও নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ঝুমকোলতা বা প্যাশন ফ্লাওয়ার ফুলটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা, মেক্সিকো, ক্যারাবিয়ান, সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মে। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া এবং হাওয়াইয়ের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে ঝুমকোলতা। তবে আমাদের দেশে এর বিস্তার লাভের সঠিক তথ্য জানা নেই।
এ গাছের পাতা ছিড়লে কিছুটা গন্ধ বের হয়। ঝুমকোলতা ফুলটির রঙ সাদা বা ক্রিম অথবা উভয় রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে। তবে সাধারণত বেগুনি রঙের আভায় বর্ণিল হয় ফুলটি। ফুলের ব্যসার্ধ ৫-৬ সেন্টিমিটার। ঝুমকোলতার ফলও হয়। ফলের আকৃতি গোলাকার। ব্যসার্ধ ২-৩ সেন্টিমিটার। পাকার সময় ফলটি হলদে কমলা থেকে লাল রঙ ধারণ করে। ফল বহুবিচিযুক্ত। ফুলটির মঞ্জরিপত্র থেকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়। এজন্য মঞ্জরিপত্রের সাহায্যে ঝুমকো লতা ক্ষতিকর পোকামাকড়দের ফাঁদে ফেলতে পারে।
ফুল ফোটে গ্রীষ্মের শেষ ভাগে, থাকে বর্ষাকালজুড়ে। এ জন্য বর্ষার ফুল হিসেবেই এর পরিচিত। ঝুমকোলতা ফুলটি একক। লতানো গাছে একটি একটি করে সুগন্ধি ফুল ফোঁটে। শুকনো জায়গায় টিকে থাকতে পারলেও ভেজা জায়গা মূলত ঝুমকো লতার জন্য উপযোগী।
ঝুমকো লতায় প্রচুর পরিমাণে স্যাপনিনস থাকায় এটি নাকি সাবানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় ডিটারজেন্ট তৈরিতে ।
মিষ্টি ফুল ঝুমকোলতা। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন প্রকৃতি প্রেমী কবিরাও।
পরিবেশ বান্ধব ঝুমকোলতা যেন আর আমাদের প্রাণ প্রকৃতি থেকে না হারিয়ে যায়।

দেবদাস মজুমদার

সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...