ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - দুঃখী মানুষের মানচিত্র 🔻 সুমতি সরলাদের নিরন্ন কাল

দুঃখী মানুষের মানচিত্র 🔻 সুমতি সরলাদের নিরন্ন কাল


✒️দেবদাস মজুমদার <>
সুমতি আর সরলা । অতিদরিদ্র দুই বিধবা বৃদ্ধা। সুমতি রানী মণ্ডল অশীতিপর। আর সরলা রানী হালদার সত্তোরোর্ধ বয়সী। এই দুই অসহায় বৃদ্ধার বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় শৌলা গ্রামে । বৃদ্ধা সুমতির স্বামী বিজেন্দ্র নাথ মণ্ডল আর বৃদ্ধা সরলার স্বামী নকুল চন্দ্র মণ্ডল ১০/১২ বছর আগে মারা যান। এরা পেশায় ছিলেন কৃষি শ্রমিক। আমাদের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী ইউনিয়নের বড়শৌলা গ্রামের কৃষিজমিতে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতায় তিন ফসলী জমি এক ফসলী হয়ে যায়। সুমতি আর সরলাদের নিরন্নের কাল নামে । সেই সাথে পুরো গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোর অবস্থা ফসলহানীতে খাদ্য সংকটে। আজও বড়শৌলা গ্রামের অবস্থা বদলায়নি।
বিধবা বৃদ্ধা সুমতি আর সরলা স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা ভাতার জন্য টানা দশ বছর চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন বৃদ্ধ ভাতার জন্যও । ওসব তাদের ভাগ্যে জোটেনা। এলাকার মেম্বর পয়সা ছাড়া তালিকায় নাম উঠনো ভাবতেই পারেনা। সুমতি সরলাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন কেবলিই মরে যায়।
করোনা সংকটের পর অসহায় দুই বৃদ্ধার ঘরবন্দী জীবনে নিরন্নের কাল নামে। কেউ খোঁজও রাখেনা। আজও এই দুই বিধবার ভাগ্যে কোনও ত্রাণ মেলেনা। স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যের হাতে পায় ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৩০ কেজি চাল আর ২ হাজার ৫০০ টাকার সহায়তার তালিকায় নাম উঠেছিলো। কিন্তু স্থানীয় পুরুষ ইউপি মেম্বর আব্দুল লতিফ খান ওই নাম গোপনে কেটে তালিকা দিয়ে বাদ দেন। মেম্বর তার নিজের লোকদের নাম তালিকাভূক্ত করে ওই এলাকার ৭০ জনের একটা তালিকা মঠবাড়িয়ার ইউএনও মহোদয়ের দপ্তরে জমা দেন। ফলে মেম্বরের কারসাজির তালিকা এখন অবধি চূড়ান্ত হয়ে যায়। বাদ পড়েন অসহায় সুমতি আর সরলা । সেই সাথে বাদ পড়েন এলাকার আরও দুস্থ ১৫জন।
আমি আজ এইসব নিরন্ন ও বঞ্চিত মানুষের গ্রামে গিয়েছিলাম। বঞ্চিতরা আমার সামনে বিক্ষোভ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মঠবাড়িয়ার ইউএনও আর এসিল্যাণ্ড মহোদয়ের সাহায্য চেয়েছেন। সেই সাথে প্রতিকার চেয়েছেন মেম্বর কেন তাদের নাম কেটে দিয়েছেন ? কেন এই দুস্থ মানুষেরা নিরন্নের কালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের তালিকা থেকে বাদ যাবেন ?
আমি কাল এনিয়ে একটা বিশেষ প্রতিবেদন লিখতে চাই। কিন্তু বৃদ্ধা আর সরলার কস্ট মনের ভেতর পুষে রেখে এই একটা রাত পার করতে পারছিনা। এই দুই দুস্থ বিধবার বঞ্চনার আখ্যান না লিখতে পারলে আমার আজ রাতে ঘুম হবেনা।
আমার কেবলি মনে হচ্ছে এই করোনা সংকটে ইউনিয়ন পর্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকা নিরুপণে মঠবাড়িয়ার ১১ ইউনিয়নের সকল ইউপি সদস্যগণ নয়ছয় করেছেন। এই দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি নিয়ে ভবিষ্যত বাংলাদেশ আমরা চাইনা।
আমার বেদনা হচ্ছে সুমতি সরলাদের নিরন্নের কালে কেন এলাকার মেম্বর নির্দয় ! কেন তারা আজও ত্রাণ সহায়তা পেলেন না। দুঃখি মানুষের মানচিত্র ছিঁড়ে খুঁড়ে দেখি বঞ্চণায় কত পাপ জমেছে আমার সোসাইটিতে ।
ভাবছি সুমতি সরলাদের সংকট সময়ে কস্টের আখ্যান শোনার কেউ কি নেই ? ।
🌿

 

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...