ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - ধুমপান কি হারাম ?

ধুমপান কি হারাম ?

রাসুল সাঃ এর আমলে ধুমপানের প্রচলন ছিল না। এমনকি, খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলেও ছিল না। তবে মদ পান প্রচলন ছিল। সেআমলে গম, জব, খেজুর, আংগুর ও মধু দিয়ে মদ তৈরি করা হত। প্রশ্ন হল মদ বা মাদক কি? যে বস্তু মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং বিবেক-বুদ্ধিকে লোপ করে তাহল মদ বা মাদক। মদ বা মাদক অপবিত্র বস্তু। মদ বা মাদককে মহান আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেন। পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা আরাফের ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করেন। আর অপবিত্র বস্তু সমূহ হারাম করেন৷” এ আয়াত নাজিল হওয়ার পরে রাসুল সাঃ একটি সাধারণ বিধান প্রণয়ন করেন যে, যেসব বস্তু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর, মানুষের বিবেক বুদ্ধিলোপ করে, মানুষের জন্যে কষ্টদায়ক কিংবা ধনসম্পদের ক্ষতিসাধন করে তা হারাম অর্থাৎ আল্লাহ ও রাসুলের আদেশের পরিপন্হী।

প্রশ্ন হচ্ছে ধুমপান কি এবং ইহা কি হারাম? ধুমপান মানে ধোঁয়া পান। বিড়ি,সিগারেট, চুরুট, হুক্কা,কলকি বা নলের সাহায্যে অগ্নি সংযোগ করে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের নাম ধুমপান।ধুমপান একটি ক্ষতিকর, অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় বস্তু। এর মধ্যে কোন উপকার নেই, বরং পুরোটাই ক্ষতিকর। ধূমপানের মধ্যে থাকে নিকোটিন জাতীয় ক্ষতিকর পদার্থ।ইহা রক্তের সাথে মিশে পুরো শরীরের ভেতরে ক্ষতিকর পরিবর্তন করে। ধূমপান ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হয় এবং ত্যাগ করা কঠিন। দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশী মানুষ ধূমপায়ী।ধূমপানে মহিলারাও পিছিয়ে নেই। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশের মহিলারা ধূমপানে শীর্ষে আছে। ধূমপান ও কারখানার ধোয়া পরিবেশ দূষণ করে। ধোয়ায় বৃদ্ধি করে কার্বন মনো অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন জাতীয় গ্যাস,যা স্বাস্হ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।
ধূমপান শুরু হয় পশ্চিম গোলার্ধে। ১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দে কলম্বাস আমেরিকা আবস্কারের পর ইউরোপীয়রা কিউবাবাসীদের নিকট থেকে ধূমপান শিখে। সেখানের অদিবাসীরা ধর্মীয় আচারের অংশ হিসেবে ধূমপান করত। ওরা যে যন্ত্রের সাহায্যে ধূমপান করত তার নাম ছিল টোবাকা,স্পেনীয়রা বলত টোবাকো। সেই থেকে তামাক গাছ ও তার পাতাউভয়ই টোবাকো বা তামাক নামে পরিচিত হয়ে আসছে।
ধুমপায়ী ব্যক্তি প্রতি মাসে ৩০০০/ টাকা থেকে ১০,০০০/ টাকা ব্যয় করে। এ ব্যয় সার্বিক অপচয় এবং ক্ষতিকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ধুমপান ক্যান্সার, যক্ষা, এইডস, হৃদ রোগ,শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা গ্যাস্টিক, আলসার, ক্ষুধামন্দ, প্রভৃতি মারাত্মক রোগের কারণ। ধুমপান বিষপানের চেয়েও মারাত্মক। কারণ, বিষপানের সাথে সাথে মৃত্যু ঘটে, কিন্তু ধুমপানের ফলে মানুষ ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করে । ধুমপান এমনি একটি বস্তু যা নিজের ক্ষতির সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী লোকের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং ধন-সম্পদেরও অপচয় হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন এর সুরা বাকারার ১৯৫ আয়াতে বলেন “হে মানব সন্তান, তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধংসে পতিত করো না। অাল্লাহ কুরঅানের সূরা নিসা এর ২৯ নং অায়াতে বলেছেন,”তোমরা নিজে নিজেকে ধ্বংস করোনা। হারামকে হালাল মনে করা ইসলামের পরিপন্থী। ” ধুমপান অর্থের অপচয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মহান আল্লাহ কুরআন শরিফের সুরা বনি ইসরাইলের ২৭ নং আয়াতে বলেন “তোমরা কিছুতেই অপচয় করো না, নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই।শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। “ধুমপান, তামাকজাত দ্রব্য ও মাদক সেবন করার অর্থই হচ্ছে অপচয়, ও অপব্যয়,যা শয়তানের কাজের সামিল।এগুলোতে কোন উপকার নেই,বরং ক্ষতি বেসুমার।এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে। ধুমপান, তামাকজাত দ্রব্য ও মাদক সেবন মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।ইহা অাত্মহননের সামিল।ইহা সেবন অবস্থায় কেহ মৃত্যুবরণ করলে কিয়ামতের দিন অাত্মহননকারীদের সাথে থাকবেন।অাত্মহননকারীরা অবশ্যই জাহান্নামী। অতএব,ইহকাল ও পরকালে নিজেদের কল্যাণের জন্যে ধুমপান, তামাকজাত দ্রব্য ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন।

রাসুল সাঃ বলেন তোমরা নিজেদের ক্ষতিসাধন করো না এবং অপরের ক্ষতিসাধনও করো না ( মুসনাদ আহমদ)। রাসুল সাঃ আরো বলেন, “মহান আল্লাহ তোমাদের ধন সম্পদ বিনষ্ট করা হারাম করেছেন ( বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
একটু ভেবে দেখুন, যদি কেউ একটি টাকা জ্বালিয়ে দেয় তবে তাকে আমরা পাগল বলবো। তাহলে হাজার হাজার টাকাকে ধুমপানের জন্যে জ্বালিয়ে দেয়াকে কি বলবো? ধুমপানের দ্বারা আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তির কষ্ট হয়ে থাকে। অতএব, ধুমপান দ্বারা লোকদের কষ্ট দেয়া হয় এবং পবিত্র ও মুক্ত বায়ুকে দূষিত করা হয়। ।ধুমপানের সাথে অনেকগুলো হারাম কাজ করা হয়। ধুমপান অপব্যয় ও অপচয়,স্বেচ্ছায় শরীরের ক্ষতি এবং অপরকে কষ্ট দেয়া সুস্পষ্ট হারাম। আসুন, আমরা ধুমপান বর্জনের প্রতিজ্ঞা করি ও পরিবেশকে ভাল রাখি এবং এই অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করে সঞ্চয় করি। সঞ্চয়কৃত অর্থের একাংশ অসহায় মানুষকে দান করি। হে আল্লাহ, ধুমপান বর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্য সূত্রঃ
১.স্বাস্হ্য শিক্ষা ও ইসলাম — মোঃ লুৎফর রহমান সরকার ( সম্পাদিত) ।
২. আসুন সুস্হ থাকি— ডাঃ ফারহানা মোবিন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...