ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - আমেরিকায় ঈদ

আমেরিকায় ঈদ

ফারজানা ফারজু >
সময় যেন পাগলা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলছে। এত লম্বা ছুটি সামারের। তবু কিভাবে যে প্রায় আড়াইটা মাস কেটে গেলো যেন টেরই পেলাম না। ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ফিরে এলাম দেশ থেকে। আসলে বাধ্য হলাম। কারণ স্কুল খুলে গেছে সেপ্টেম্বর ৬ তারিখে। অনেকেই বলেছিল আর কয়টা দিন থেকে কেনো কুরবানির ঈদটা করে যাই না ? কিন্তু সম্ভব হয়নি। এখানে স্কুল ইয়ার সেপ্টেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত। দুই দিন কোন ছাত্র ছাত্রী আসে নাই । ক্লারিক্যাল ডে। এই দুই দিন ক্লাস সাজানো, মিটিং, যার যার ক্লাস বুঝে নেয়া হয়। তাছাড়া প্রতি বছর কিছু অদল বদল হয়। কিছু টিচার রিটায়ার্ড করেন। সেখানে নূতন টিচার আসেন। এবার আমার স্কুলে আমাদের দুই এসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল রিটায়ার্ড করেন। সেখানে নূতন জনরা আসেন। আরো বেশ কিছু টিচার চলে যান অন্য স্কুলে। সেখানে নূতনরা এসে ফিল আপ করেন। যাই হোক স্কুলের কথা বিস্তারিত অন্য কোন দিন বলা যাবে। আজ ইদের কথা বলি। স্কুলের ২য় দিন ক্লাসের পেপার ওয়ার্ক কাজ করছিলাম। এবার আমার কাজ পড়েছে মিস নোলেনের সাথে। অনেক দিন তিনি স্কুলের ডিন ছিলেন। এখন ক্লাসরুমের ভার নিয়েছেন। লাঞ্চের সময় যতারীতি স্টাফ রুমে লাঞ্চ করছিলাম অনেকের সাথে। মারিয়া বলে উঠলো
– আই এম স হ্যাপি নো স্কুল মানডে। একটূ অবাক হয়ে বললাম
– হোয়াই? আই ডিড নট নো দেট!
– বিকোজ অফ ঈদ।
– বাট আই স দা ক্যালেন্ডার সানডে ঈদ।
– নো চেক এগেইন , ইট ইজ মানডে। ইউর হলিডে , বাট এউ ডোন্ট নো ?
সবাই হেসে উঠলো। একটু লজ্জা পেলেও খুব খুশী লাগলো যে আমাদের ইদের কথা এখন সবাই জানে। গতবার মেয়র ডিব্লাসির বদৌলতে শুধু নিউ ইয়র্কে দুই ঈদে দুইদিন স্কুলের ছুটি এপ্রুভ হয়েছে। আরো কিছু স্টেট শুনেছি এই নিয়ে ফাইট/ চেষ্টা করছে। তাছাড়া হিন্দু বৌদ্ধরাও তাদের ছুটি নিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনও তা কার্যকরী হয়নি। যাই হোক অনেকে ভাবেন প্রবাসে আমরা ঈদে ঘুমিয়ে কাটাই অথবা মাছি মারি। না। এটা ঠিক না। এখন এখানে প্রচুর বাঙ্গালীর বাস। তাছাড়া আছে পকিস্তানী, মিশর , আরব , ইয়েমেন , নাউজেরিয়া , ঘানা , আরো বেশ কিছু মুসলিম কান্ট্রি। এবং সবাই বলতে গেলে বেশ সুন্দরভাবে ঈদ যাপন করে থাকেন। মসজিদ গুলো উপচে পরে ইদের নামাজে। কোন কোন জামাত হয় পার্কগুলোতে খোলা যায়গাতে। তবে এখানে বেশীর ভাগ মসজিদে মেয়েদের জন্য ভিতরে একটি রুম থাকে। বড় টি ভি স্ক্রিনে দেখে এবং শুনে আমরা ইমাম সাহেবকে ফলো করতে পারি। নামাজের পর অনেকেই বেড়াতে চলে যায়। নয়তো নিজের বাড়িতে অতিথির আপ্যাহন চলে। তবে নিউ ইয়র্কের বাইরে ঈদ হয় একটু আলাদা কোথাও কোথাও। যাদের পরিবারের তেমন কোন আত্নীয় স্বজন নেই। সেখানে অনেকে একটা বাসায় প্ল্যান করে অনেক গুলো পরিবার মিলিত হন । সবাই একটা করে খাবারের আইটেম নিয়ে যান। সব গুলো জোরা দিয়ে টেবিল সাজিয়ে গল্প গুজব করে দিনটা পার করে দেন।
কুরবানি সম্বন্ধে কিছু বলি। এখানে বেশীর ভাগ মানুষ দেশেই কুরবানি দিয়ে থাকেন। তবে অনেকে আবার একটা খাসি কুরবানি দেন। আর নয়তো সাতজন ভাগ করে একটা গরু দিয়ে থাকেন। কুরবানি দেয়ার নিয়মও আছে। কেউ কেউ চলে যায় যেখানে কুরবানি দেয়া হয়। বেশীর ভাগ নিঊ ইয়র্কের বাইরে । খুব সকালে উঠে চলে যান সেখানে। নিজের হাতে কুরবানি দেন। এর পরের কাজ কসাইদের। তাঁরা মেশিনে সমস্ত গোস্ত কেটে প্যাকেট করে হাতে ধরিয়ে দেন। আর একটা নিয়ম হল গ্রসারী গুলোতে নাম লিখিয়ে আগে থেকে টাকা দিয়ে দেন। সাথে কার নামে কুরবানি দেয়া হচ্ছে তাঁর নাম। ইদের দিন যথারীতি গোস্ত রেডি হলে ফোন দিয়ে যার যার ভাগ্যের গোস্ত পিক আপ করে নিয়ে আসে বাড়ীতে। তবে এটা ঠিক মুসলিম আর বঙ্গালী বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে ইদের জৌলুশ দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে ইদের ফ্যাশনের দিকেও নজর কাড়ছে সবার। প্রতিটা রাস্তায় দেখা যায় লেটেস্ট ড্রেস শাড়ী, পাঞ্জাবী পরে একে ওপরের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছেন সবাই । কাজে গেলে এর পরদিন অনেকেই বলে থাকেন । আই স ম্যানি পিউপল ওয়াজ ডুইং দেয়ার ঈদ গরজিয়াসলি । দে হেড বিউটিফুল ড্রেস অন। হউ ওয়াজ ইউর ঈদ? মনটা খুশীতে ভরে উঠে … বিদেশেও দিন দিন এভাবে পরিচয়ের প্রসার বাড়ছে জেনে। আজ এখানেই থাক । অন্যদিন অন্য কোন প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করা যাবে। সবাই ভালো থাকুন। হেভ এ নাইস ঈদ। ঈদ মোবারক সবার জন্য।

-ফারজানা ফারজু, নিউইয়র্ক।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...