ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - প্রবাস জীবনে অপূর্ণতার ঈদ

প্রবাস জীবনে অপূর্ণতার ঈদ

🔹

২৯টা রোজা রেখেছি চাদঁ দেখিনি তুবুও আজ পবিত্র ঈদ । মোবাইল মেসেজ পেলাম প্রবাসী এক ভাইয়ের থেকে আমাদের ঈদ নিয়ে কিছু লিখবেন না। সিদ্ধান্ত হীনতায় ভূগছি, ঈদকে নিয়ে কি লিখবো তাই ভেবে!

যিনি লেখা দিতে বলে মেসেজ করেছেন তিনি হয়তো আমাকে খানিক রাইটার টাইপের ভাবতে পছন্দ করেন অথবা ভাল লাগার কোন এক মুহুর্তে তার ভেতরে সমৃদ্ধ আমি এই অযোগ্য মানুষ। তাই আর অনুরোধ উপেক্ষা করার সাহসে সাহসী হইনি। কিন্তু লিখতে বসে যে শব্দাভাবে ভুগছি তা কি কিরে এই প্রিয় মানুষটাকে বলি! প্রবাসের অপূর্ণ ঈদের কথা উপস্থাপনে বার বার পিছনে ফিরে ফিরে যেতে হয়েছে আমার বান্ধাবপাড়া। আমার মাতৃভূমিতে। যেখানে ঈদ আনন্দ উপছে পড়ে খুশীর ফোয়ারা হয়ে! একসময় আমরা যারা একসাথে চলেছি, এক স্কুলে পড়েছি, তারাই আজ ছড়িয়েছি, ছিটিয়েছি পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, অনেকটা সময়ের প্রয়োজনে। খানিকটা জীবনের দাবী ও বটে। জীবনের প্রতি যে কমিটমেন্ট তা থেকে একজন রেস্পন্সিবল মানুষের পালানো সত্যি অসম্ভব, তাই জড়িয়েছি জীবন নামের কাঠিন্যের সাথে।
জীবনের পথ পরিক্রমায় যতটা না দৃষ্টির সীমানা ছেড়ে দূরে গিয়েছি প্রিয় সব মানুষ গুলোকে ছেড়ে, প্রিয় জনপদ রেখে, মনে হয় প্রতিদিন সমাধিক কাছে এসেছি আত্মার পথে, ভালবাসার পথে, ভাললাগার জন্য। এ এক নিরেট ভাল লাগা যা সম্পূর্ণ আত্মিক আত্মিয়তায় সমৃদ্ধ। যাদের জন্য শত ব্যস্ততায় ও শত সহস্রাধিক মাইল দূরে থেকেও প্রানের কাছে আছি তা টের পাচ্ছি প্রতিমুহূর্তে।
কখনো কখনো এই প্রবাসকে আনমনে আপন করি, করতে হয়। আপন ভাবি, ভাবতে হয়।
এই প্রবাসকে প্রিয় বান্ধবাড়া, প্রিয় গুলিশাখালী, প্রিয় টিয়ারখালি, প্রিয় মঠবাড়িয়া, প্রিয় সেগুনবাগিচা, প্রিয় বাংলাদেশে ভাবি।আমাদের খুব সুযোগ ও নেই এই ভাবনা থেকে বের হবার!
বিদেশ বসে তাই সর্বদা প্রান কেঁদে কেঁদে উঠে আমার রুপসী বাংলার জন্য, যেথায় আমার শৈশব আর কৈশোরের স্বর্ণালী দিন গুলো বর্ণালী হয়েছিল নিজের মত করে। সেই স্মৃতিমাখা দিনগুলোর কথা ভেবে ভেবেই একটি সুন্দর আর বিলাসী স্বপনের জাল বোনা যায় খুব। নিজের অজান্তে প্রান ছুটে যায় আমার ধুলিমাখা প্রান্তরে যেথায় মায়ের আদর, বাবার স্নেহ সমেত বন্ধুদের উচ্ছল আর উদ্যমতায় কেটেছে দূরন্ত কৈশোর।ভেসে আসে প্রিয় মানুষ গুলোর স্মৃতি। মনের অজান্তেই আখিদ্বয় অশ্রুজল আসে। অন্তরআত্মা ঢুকরে কেঁদে উঠে। হারাই নিজেকে নির্বাসনের পালাবদলে।
জানতে চেয়ে প্রশ্ন করি নিজেকেঃ আমি কার? কে আমার?
বোঝাতে ব্যর্থ হই আমার আমিকেঃ এই আমরা কত নিরুপায় জীবনের কাছে!! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে পালাই আমার প্রিয় স্বদেশে। কি হবে এই উন্নত জীবনের হাতছানী? কি হবে শতভাগ নাগরিক সুবিধা সমৃদ্ধ জীবন ব্যবস্থা দিয়ে?
তাও কি সম্ভব?
জীবন যে আমাকে ঘিরে রেখেছে, কঠিন এক বাস্তবতায়।
এতসব বাস্তবতায়ও আমাদের এ প্রবাসী জীবনে আনন্দ, হাসি, কান্না, সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণতো রয়েছেই। এই উপলক্ষ গুলো তৈরী হয় পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় রীতিনীতিকে কেন্দ্র করে। তেমনি একটি ধর্মীয় উৎসব সারা বিশ্বের মুসলিম জাতির জন্য আনন্দের ঈদুল ফিতর।
যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্য দেশের মত পালিত হয় মহা আয়োজনে এই উৎসব।
ঈদ মানে আনন্দ, আর এই আনন্দটা তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তা পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। আমরা যারা প্রবাসে থাকি, ঈদ তাদের জন্য এক ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে আসে। কারণ, প্রবাসে আমরা অনেকেই মমতাময়ী মা, প্রিয় বাবা, প্রিয়তম স্ত্রী, স্নেহের সন্তান, আদরের ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ছাড়া ঈদের দিনটি অতিবাহিত করি। আর তাই ঈদের দিনটা এখানে অনেকটাই আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত একটা দিন। প্রবাসীদের মনটা থাকে দেশে আর দেহটা থাকে বিদেশে। বিশেষ করে পৃথিবীর বহু দেশেই প্রবাসীদের পরিবারবিহীন একাকী থাকতে হয়। আর জীবনসংগ্রামের এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রবাসীরা ঈদ উদৎযাপন করেন। ইমো অথবা স্কাইপে, ভাইবারে বা ম্যাসেঞ্জারে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকেই হয়তো মরুভূমির মরীচিকায় নিজের দুঃখটাকে মিশিয়ে দিয়ে কাজেও যান।এখানে ফজরের নামাজের পরপরই নির্দিষ্ট কিছু মসজিদে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজে যেতে হয় । এখানে নামাজে যাওয়ার সময় আমাদের কেউ পেছন ফিরে ডেকে বলে না একটু সেমাই, একটু পায়েস খেয়ে যাও। পূর্বাকাশে সূর্যমামার দেখা পাওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় ঈদের নামাজ। এরপর নামাজ থেকে ফিরে আবার কর্মস্থলে ফিরে যেতে হয়, যারা ছুটি পায় এখানকার বন্ধুবান্ধব নিয়ে সামান্য ঘোরাফেরা বা একে-অপরের বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফিরে এসে আবার পরদিন ডিউটির প্রস্তুতি, এভাবেই কেটে যায় আমাদের ঈদ নামক কষ্টের দিনটি (প্রবাসেও কিছু বাংলাদেশি আছে যারা এখানে ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছেন, তবে তাঁদের সংখ্যা সামান্য)। আমাদের ঈদ যেমনই যাক অন্তত এটুকু জেনে ভালো লাগে যে আমাদের কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার সুখে-শান্তিতে ঈদ করতে পারছে, একজন প্রবাসী হিসেবে এটাই আমাদের সার্থকতা।

সকলকে ঈদ মোবারক।

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...