বিশেষ প্রতিনিধি ↪️
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শরু হচ্ছে মঙ্গলবার। তবে দূর্গা পূজার রীতি অনুযায়ী আজ সোমবার সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশ জুড়ে মন্ডপে মন্ডপে শেষ মুহূর্তের আয়োজনে এখন সাজ সাজ রব। শহর তো বটেই প্রত্যন্ত গ্রাম জুড়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের মুখরতা শুরু হচ্ছে। এবছর সারা দেশে ৩০ হাজার ৮১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোত্সব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২৯ হাজার ৩৯৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর রাজধানীতে ৩২৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩১টি ।
ইতিমধ্যে পূজা মণ্ডপ গুলোতে শেষে হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার অনেক মণ্ডপে চলছে প্রতিমাগুলো রং করার কাজ। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মহিষাসুরের প্রতিমা। পূজামণ্ডপকে পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক রূপ করে ভক্ত-দর্শনার্থীদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করা কারুশিল্পীদেরও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। পূজার প্রস্তুতির এ শেষ মুহূর্তে এখন যেন দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পীদের।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালির অন্যতম উত্সব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ হবে বোধন। এ উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে বিকেলে ৪টায় পূজা শুরু হবে। আগামী মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে দশভুজাদেবী দুর্গার ষষ্ঠী বিহিত পূজা। আর সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ঢাক আর কাঁসর ঘণ্টার শব্দে, ধূপের ধোঁয়া, উলুধ্বনির সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে উচ্চারিত হবে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু, মাতৃরূপেণন সংস্থিতা, নমসত্মস্যৈ নমসত্মস্যৈ নমসত্মস্যৈ নমোঃ নমোঃ’। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরত্কালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরত্কালের এই পূজাকে হিন্দু মতে অকাল বোধনও বলা হয়।
দেবীর দশ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে। যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে উপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তিক্ষ বান ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্ঠের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ দশটি অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলেরমতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না। মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষ্মী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক।
ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই দুর্গোৎসবে মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী সপরিবারে তিন দিনের জন্য পিতৃগৃহে আগমন করেন।
আর তিনি পৃথিবীর যত শোক,ব্যাধি দু:খ বেদনা মুছে যায়।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য রইল আজকের মঠবাড়িয়া পরিবারের শুভেচ্ছা।