ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - উপকূলীয় বলেশ্বর ও কঁচা নদে ইলিশের আকাল

উপকূলীয় বলেশ্বর ও কঁচা নদে ইলিশের আকাল

খালিদ আবু, পিরোজপুর >>

ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও দক্ষিন উপকূলীয় এলাকা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ^র ও ভান্ডারিয়ার কঁচা নদে জেলেদের জালে মিলছেনা আশানুরুপ ইলিশ। এ কারনে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে পরিবার গুলোতে বিরাজ করছে হতাশা।

সংশ্লিষ্ট জেলেদের সূত্রে জানাগেছে, ভরা মৌসুমের শুরুতে সাগরে ইলিশের দেখা না মিললেও গত দু’সপ্তাহ ধরে সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর রুপালি ইলিশ। কিন্তু উপকূলীয় এলাকা পিরোজপুরের নদ নদীতে কাংখিত ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে ধারদেনা করে চলছে জেলে পরিবার গুলোর। এখানকার শত শত জেলে রয়েছে যারা এই মৌসুমে ঝড়,বন্যা আর জলদস্যুদের ভয়ে সাগরে না গিয়ে স্থানীয় নদ নদীতে ইলিশ ধরে থাকেন। সদর উপজেলার বাদুরা, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার শত শত জেলে এ অঞ্চলের বড় নদী কঁচায় সারা বছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার নাজিরপুরের কালিগঙ্গা, কাউখালী ও নেছারাবাদের সন্ধ্যা এবং কঁচার সংযোগ পান গুছি নদীতেও। রাত দিন জাল ফেলে দু’একটা ইলিশ ধরা পড়ছে জালে। যা বিক্রি করে সংসার চালানো অনেক কস্ট হচ্ছে জেলে পরিবার গুলোর। এ অবস্থায় বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

বছরের জুন মাসের শুরু থেকেই জেলেদের জালে ধরা দেয় রূপালি ইলিশ। এই সময়ে মাছ বিক্রি করে সারা বছরের ধারদেনা ও দাদনের টাকাশোধ করতে থাকেন দরিদ্র জেলেরা। দলে দলে নদীতে ইলিশ ধরার আশায় জেলেরা জাল ফেললেও কারো জালে দু’একটা ইলিশ ধরা পড়ছে আবার কেউবা ফিরে আসছেন খালি হাতে। এই সময়টায় এসব নদ নদী থেকে আহরিত তাজা ইলিশ স্থাণীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ চলে যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসময় স্থানীয় হাট বাজার গুলোও থাকে ইলিশের জন্য সরগরম। কিন্তু সে চিত্রে এখন ভাটা পড়েছে।
এদিকে স্থানীয় নদ নদীতে ইলিশের আকাল পড়ায় জেলেদের দাদন দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরাও। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। এরপর রয়েছে অধিকাংশ জেলের ঘাড়ে এনজিওর ঋণের বোঝা। অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ঠিকমত এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। এছাড়া অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন এ পেশার সাথে জড়িত জেলার কয়েক হাজার জেলে।

কচা নদীর টগড়া ও চরখালী ফেরিঘাটে অনেক খুচরা মাছ বিক্রেতারা এ নদীর তাজা ইলিশ বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে এসব নদ নদীতে জেলেদের জালে কাংখিত ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ অনেক জেলেকে দাদন দেয়া আড়ৎদার মামুন মাঝি। দাম ভাল থাকলেও নদীতে মাছ কম। তাই সাগরের বরফ দেয়া ইলিশই এখন বেচা বিক্রি বেশি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় কচা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া চরবলেশ^র গ্রামের শাহজাহান ফরাজী, ফারুক সরদার ও আজিজুলের সাথে। তারা বলেন, সাগরে এখন ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এখান থেকে সাগরের দুরুত্ব ২৫/৩০ কিলোমিটার হবে। সাগরের সাথে কচা নদীর সংযোগ রয়েছে। সে হিসেবে এ নদীতেও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। এক সময় এ নদীটি ইলিশের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ নদীটি ইলিশের জন্য তার সতন্ত্র বৈশিস্ট্য হারিয়েছে।

পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে স্থানীয় নদ নদীর কোন ইলিশের দেখা নেই। শুধু সাগরের বরফ দেয়া ইলিশে সরগরম এ মৎস্য বন্দর। এমনটাই জানালেন ওখানকার মৎস্য ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন মল্লিক।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...