ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - দক্ষিণবন্দরবাসী আমরা ঠকছি, ভাসছি জলমগ্ন এই শহরে !

দক্ষিণবন্দরবাসী আমরা ঠকছি, ভাসছি জলমগ্ন এই শহরে !

মোস্তাফিজ বাদল >>

পিরোজপুর জেলার সবচেয় সমৃদ্ধ উপজেলা মঠবাড়িয়া। মঠবাড়িয়া কৃষি, শিক্ষা,রাজনীতি আর জনপ্রশাসনে জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে সবসময়েই অগ্রসরমান। আমাদের মঠবাড়িয়ায় জন্ম নিয়েছেন জাতীয় নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ায়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যর দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি আমাদের ভাষা সংগ্রামী।মঠবাড়িয়াবাসী হিসেবে আমরা এ জাতীয় নেতার জন্য গর্ববোধ করি।

নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যবোধে ভিন্ন আমাদের মঠবাড়িয়া উপজেলা। শিক্ষায় অগ্রসর মঠবাড়িয়া এটি রাজনৈতিক সচেতন উপজেলাও বটে। উপকূলে এটি একটি বৃহৎ উপজেলা শহর। জন্মলগ্ন থেকেই দু’টি ভাগে বিভক্ত এই মঠবাড়িয়া শহরটি। ০১. উত্তর বন্দর। ০২. দক্ষিণ বন্দর। দক্ষিণ বন্দরের মানুষও নানা পেশা ও মতে বিভক্ত। বিভক্ত ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে। কিন্তু একটি জায়গায় তাঁরা কোমরকষা ! আর সেটা হলো ঐক্য এবং সম্প্রীতি । এলাকা অথবা এলাকার মানুষের স্বার্থে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে সময় লাগে না। সময় লাগেনি বিগত দিনেও। এখানের সবার প্রতি সবার টান। একদম পরাণের আপন। দলীয় বিভিক্তি এ আহত হলেন আ.লীগ নেতা জনাব ফারুকউজ্জাজ্জামান । যিঁনি দক্ষিণ বন্দরের বাসিন্দা। প্রতিবাদ করল দক্ষিণ বন্দরবাসি। পালন করল হরতাল। রাস্তায় নেমে এলেন সব দলমতের লোক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চোখে আঘাত পেলেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জালাল। সে ব্যথায় ব্যথিত হলেন এলাকার সবাই। সকল পূজা, পার্বণ কিংবা আনন্দ আয়োজনে এখানকার ঐক্যবদ্ধতার ইতিহাস বহুকাল আগের। যা আজ অবধি বিদ্যমান।

এইতো কিছুদিন আগের কথা, হেমায়েত উদ্দিন কমিশনার একটি মামলায় জেলে গেলেন। দেখলাম তাঁর জন্য এলাকার সব মানুষের ভালবাসার কি দারুণ প্রকাশ। আঞ্চলিকতায় এঁরা ভুলে যায় দল -মত, দ্বন্দ্ব, বিভাজন। পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড জুড়েই দক্ষিণ বন্দর। নানা কারণে এই অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। বার্ষিক বাজার রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রাজস্ব আদায় হয় পৌর শহরের দক্ষিণ বন্দর থেকে। এখানে বসে গরু, মহিষ, ছাগল, হাস, মোরগের ঐতিহ্যবাহী বাজার। হাটের দিনের বিশাল সবজির বাজারও বসে দক্ষিণ বন্দরে । সেই সাথে মৌসুমী ফলের সমারোহ । ভাসমান খোলা বাজার এই বন্দরকে ঘিরেই পরিচালিত হয়। বসে ফলদ ও বনজ গাছের চারার হাটও শহরের দক্ষিণ বন্দরে। চমৎকার একটি জায়গার নাম ‘বাহালিপট্টি’ । হাটের দিনে সব মানুষের কেন্দ্রমুখ এই বাহালিপট্টি। অন্যদিনে বসে রমরমা ফুসকা হাট। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে মিঠাই গুঁড়ের বাজারও বসে এখানে। েআমাদের দক্ষিণ বন্দরে কি নাই ? লবণের জন্যও আছে ভিন্ন বাজার ব্যবস্থা। চাল, ধানের নির্ধারিত হাটও এখানে। মাংশ বাজার, কসাইখানা, চাই – বুচনা, হোগলাসহ বাঁশের তৈরি সকল মালামালের একমাত্র প্রাপ্তি স্থান দক্ষিণ বন্দর। এখানে বিশাল অংশ জুড়ে কর্মকারপট্টি, কামারপট্টি অবস্থিত। মাটির হাড়ি – পাতিল বিক্রয়ের একমাত্র বাজারটিও এখানে। ইট,বালু,পাথর, খোয়া বিক্রির বৃহৎ কেন্দ্র এই দক্ষিণ বন্দর। এখানে আছে মঠবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় মুদিব্যবসা ও কাঁচামালের আড়ৎ। লঞ্চঘাট, নদীপথে আসা যাওয়া মালামাল ওঠানামার ঘাটটিও দক্ষিণ বন্দর। এই পথ দিয়ে যেতে হয় বড়মাছুয়া স্টিমার ও লঞ্চঘাট। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ এই দক্ষিণ বন্দরের উপর থেকেই যাতাযাত করে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, খাদ্যগুদাম ইত্যাদি। মঠবাড়িয়ায় ফলাফলে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মহিউদ্দিনে আহমেদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও মহিলা মাদ্রাসাসহ আছে আরও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও চিকিৎসা এই বন্দরকে ঘিরেই। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে জমজমাট বিশাল মেডিসিন মার্কেট। এতকিছু থাকার পরেও শুধু নেই একটি জিনিস। আর তা হলো বড় বড় নেতাদের বসতবাটি। দক্ষিণ বন্দরে বাস করেন না এমপি, মেয়র কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান। যার ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিণ বন্দর জনপদ। আমাদের দুর্ভাগ্য মঠবাড়িয়া পৌর শহরের সবচেয়ে সমৃদ্ধি যে বন্দরের মানুষ দিয়ে যাচ্ছে তারা সবসময় থেকেছে যেন অভিভাবকহীন আর ‍উপেক্ষিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের আগে যেমনি উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। তেমনি উন্নয়ন বঞ্চিত ঘনবসতিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দক্ষিণবন্দর। এখানকার গরুর হাটটি ছিল বিশাল ও বিখ্যাত। ব্রীটিশ আমলে গড়ে ওঠা এ আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। আর তা রেখেছে শত সংকটেও।

আমাদের দক্ষিণ বন্দর গরুর হাটে বিভিন্ন জেলার লোকজন আসতেন এই বাজারে গরু কেনাবেচার জন্য। কোনদিন শুনিনি এই গরুহাটে ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গুরুত্বপূর্ণ ও সঠিক জায়গায় গরুবাজারটি হওয়ার জন্য এমনটি হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আছে যারা সব সময় এই গরুহাটের বিরোধিতা করে আসছে। ব্যক্তিগত লাভের আশায় তারা এমনটি দাবী করছে কেউ। আর এই দাবী করা মানুষগুলো সবই অন্য এলাকার। অনেকে শুধু নাকছিটানোর জন্য বা এর সুফল, কুফল না বুঝেই বিরোধিতা করে আসছে। লাভের কথা ভেবেই ইতোমধ্যে ডিসেআর নিয়ে অনেক ঘর নির্মাণ করেছেন । সংকুচিত করা হয়েছে গরুর হাট। হাটের বাকি জমিটুকু দখল করার জন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বহু হেভিওয়েটরা। কোন না কোন অজুহাতে গরুর হাটটি স্থানান্তর করতে পারলে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য সুবিধা মিলবে । কাড়ি কাড়ি টাকা পকেটস্থ হবে। কি দারুণ ব্যাপার বটে ! দারুণ না? ইতোমধ্যে গাছের চারার হাট, তরকারি বাজার, সবজী চারার বাজার দখল হয়ে গেছে। অতঃপর নজর পড়েছে প্রাণের খালে দিকে। দখল হয়ে গেছে খালের দুইধার। শহরের প্রাণকেন্দ্রের খালটির পানি প্রবাহ থেমে গেছে। নাব্যতা হারিয়েছে প্রবহমান খাল। ভরাজোয়ারে এখন তলিয়ে থাকে দক্ষিণ বন্দরের পুরো ব্যবসাকেন্দ্র । তলিয়ে যায় গরুহাট, সবজী হাটসহ ব্যবসায়ের প্রাণকেন্দ্র টুকু সবকিছু। ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ, প্রাণ ও প্রকৃতি । ব্যবসায়িরা ব্যবসা ঘুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসাপাতি। কোমর পরিমাণ পানি ভেঙে যাতায়াত করে ছাত্র -ছাত্রী, শিক্ষক, মহিলা সবাই। কাপড় ভিজিয়ে দুর্ভোগে যাতায়াত করছে মা বোন। দেখে নির্লজ্জভাবে মজা লুটছে বখাটেরা । অথচ আমরা নিরব থাকছি!

গত বিএনপি – জামায়াত আমলে বিশাল চারা হাটটি দখল করে নিল রাতের অন্ধকারে। অতঃপর কয়েকজন খালের সেতুর দু’পাশ দখল করে নিল। দখল হল স্রোতস্বিনী খালের মোহনা। সেখান থেকে দখল যাত্রা শুরু। চাউল হাট সংলগ্ন খালে সংকুচিত করে স্লুইজগেট নির্মাণ করা হলো। হারিয়ে গেল পালতোলা নৌকাচলা প্রবহমান খালে।

এখনও থেমে নেই দখল। সদর খালে পিলারের পর পিলার জেগে উঠছে প্রতিদিন। সবই হচ্ছে দিনের আলোয় প্রশাসনের নিরবতা ও সহযোগিতার বদৌলতে। আমরা আমাদের শহরের প্রাণের খালের মুক্তি চাই। খালের পাড়ে বেড়িবাঁধ চাই। গরুহাট আধুনিকায়ন চাই। অত্যাধুনিক ও টেকসই রাস্তা চাই। মানুষ চলাচলের জন্য ফুটপাত চাই। পিছিয়ে থাকা ৩নম্বির ওয়ার্ডের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ চাই। দয়ালঘাটে(হাসপাতালের সমঊখ লঘ্চঘাট) ছোট আকালর পন্টুন চাই। রাস্তা কমপক্ষে তিনফুট উঁচু চাই। আমরা অবহেলিত দক্ষিণবন্দরবাসি। আমরা ডুবছি অবাঞ্চিত জলধারায়। আমরা ভাসছি জলমগ্ন এই শহরে। নিরুপায় আমরা ঠকছি গাঁ সয়ে যাওয়া এই দখলবাজির শহরে। বঞ্চিত আমরা তবু জনদাবিতে ফুঁসে উঠছি না !

লেথক > মোস্তাফিজ বাদল,আহ্বায়ক, সিটিজেন জার্নালিজম এক্টিভিস্ট,মঠবাড়িয়।

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...