ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - পিরোজপুরের আদালতে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া

পিরোজপুরের আদালতে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া

খালিদ আবু ,পিরোজপুর >>
প্রায় দু’শত বছরের অধিক সময়ের পুরনো প্রথা ভেঙ্গে পিরোজপুর আদালতে হাজতিদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পিরোজপুরের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়ার উদ্যোগে এই মানবিক আয়োজনটি চালু করা হয়। একদিন আদালত চলাকালীন সময় হাজতখানার দিক থেকে হৈচৈয়ের আওয়াজ আসে বিজ্ঞ জেলা জজ মহোদয়ের কানে। বিচক্ষণ জেলা ও দায়রা জজ অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে হাজতিদের অধিকাংশ সকালে দুটি রুটি খেয়ে কোর্টে এসেছে এবং সারাদিন অভূক্ত অবস্থায় আছে। কারাগারে নিতে দেরী হলে তারা রাতের খাবারও হয়ত পাবে না এ আশংকায় দ্রুত কারাগারে নেয়ার জন্য হৈচৈ করছে। এর কয়েকদিন পর তিনি জেল ভিজিটে গেলে কোর্টে হাজতীদের দুপুরের খাবার প্রসংগে আলাপে জানতে পারেন যে, আদালতে প্রেরনের সময় হাজতীদের দুপুরের খাবার হিসেবে চিড়া-গুড় সাথে করে দিয়ে দেয়া হয়। কোর্ট থেকে ফেরার পর হাজতিরা একেবারে রাতের খাবার গ্রহন করে। পরে বিজ্ঞ জেলা জজ কারা কর্তৃপক্ষ ও কারাগারে খাবার সরবরাহকারি ঠিকাদারের সাথে হাজতিদের দুপুরের খাবার আদালতে প্রেরন সংক্রান্তে আলাপ করেন। কিন্তু তারা পরিবহন সমস্যার কথা উল্লেখ করে অনাগ্রহ দেখান। পরে বিজ্ঞ জেলা জজ জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বিস্তারিত আলোচনাপূর্বক এই মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন যে, কারা কর্র্তৃপক্ষ হাজতীদের জন্য দুপুরের খাবার আদালতের হাজতখানায় সরবরাহ করবেন এবং হাজত খানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ খাবার পরিবেশনের বিষয়টি তদারকি করবেন। এছাড়া হাজতখানায় ভারপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট দুপুরে খাওয়ানোর বিষয়টি সরাসরি তদারকি করবেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে এ কার্য্যক্রম অব্যাহত আছে। পিরোজপুর এর বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ গোলাম কিবরিয়ার এই অনুসরনীয় মহৎ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই মাদারীপুরসহ আরো কয়েকটি জেলায় অনুসৃত/গৃহীত হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ গোলাম কিবরিয়া আদালতে আগত বিচার প্রার্থী জনগন এবং বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে পিরোজপুর পৌরসভার সহায়তায় রিভার্স ওসমোসিস টেকনোলজির তিনটি আধুনিক পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন স্থাপন করেন। সাধারন বিচারপ্রার্থী জনগনের বসার জন্য জেলা জজ আদালত ভবনের প্রত্যেকটি ফ্লোরের বারান্দায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের স্বস্তির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ডান্ডাবেড়ী নিষিদ্ধ করে বেআইনী অবমাননাকর শাস্তির প্রচলন রোধ করত: মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো: গোলাম কিবরিয়া। বিগত ১৭/৮/২০১৫ তারিখ বেলা ২টার সময় একটি ফৌজদারী মিস কেস শুনানীর প্রাক্কালে পিরোজপুরের জেলা জজ মহোদয় দুইটি সাধারন প্রকৃতির সি.আর মামলায় অভিযুক্ত ৭০ বছরের একজন বৃদ্ধ ও রুগ্ন ব্যাক্তিকে ডান্ডাবেড়ী পরিয়ে আদালতে হাজির করার কারন জানার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলারকে তলব করে আদালতে আনেন। তিনি উক্ত বিষয়ে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে না পেরে তখনই জেলা কারাগার থেকে চাবি এনে ডান্ডাবেড়ী খুলে দেন। উক্ত বিষয়ে জেল সুপারকে লিখিত বক্তব্য প্রদানের নির্দেশ দিলে তিনি জানান যে, কোর্ট ইন্সপেক্টর পিরোজপুর কর্তৃক প্রেরীত ০৯/১০/১৩ তারিখের ৬৮১০ নং স্মারকে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের কোর্টে প্রেরনের পূর্বে ডান্ডাবেড়ী পরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করায় কারা কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত ব্যাবস্থা করেছে। তবে ২ টি সাধারন সি.আর মামলায় অভিযুক্ত একজন বৃদ্ধকে ডান্ডাবেড়ী পরানোর জন্য তিনি দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উক্ত ঘটনার পরে জেল কোড এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, কারাগার থেকে বিচারাধীন বন্দীদেরকে আনা নেয়ার সময় ডান্ডাবেড়ী পরানোর বিধান নেই। তবে ৭১৫ বিধি অনুযায়ী সাজা প্রাপ্ত কয়েদীদের মধ্যে যারা ‘গ’ শ্রেনীর বন্দী তাদের মধ্যে ভয়ংকর অথবা দুর্ধর্ষ চরিত্রের বন্দী থাকলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে তাদের ডান্ডাবেড়ী পরানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কারা রক্ষক প্রত্যেক বন্দীর জন্য চামড়ার পট্টি অবশ্যই সরবরাহ করবেন যাতে চামড়া ছিড়ে না যায়। সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ কয়েদী ছাড়া অন্য কোন বিচারাধীন বন্দীকে কারাগার থেকে আনার সময় ডান্ডাবেড়ী পরানোর আইনত কোন সুযোগ নেই। জেল কোডের ঊনবিংশ অধ্যায়ে বর্নিত মতে কোন বন্দী কোন অপরাধ করলে কারাগারের ভিতরে শাস্তি স্বরূপ তাকে ডান্ডাবেরী পরিয়ে রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এইরুপ বন্দীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পূর্বে অবশ্যই উক্ত বেড়ী খুলে ফেলতে হবে মর্মে জেল কোডের ৭২১ বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অত্যন্ত আশার কথা এই যে, এই ঘটনার পর পিরোজপুর জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা নেওয়ার সময় কোন বিচারাধীণ বন্দীকে ডান্ডাবেড়ী পড়ানো হচ্ছে না। এভাবে বিচারাধীন বন্দীদেরকে বে-আইনী অবমাননাকর ও নৃশংস শাস্তি পাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এইভাবে পিরোজপুর আদালত থেকে সূচনা হয়েছে এক ঐতিহাসিক মানবিক ইতিহাস।
বিচারের জন্য প্রস্তুত মামলা সমূহ বদলি করার পর জামিনে থাকা আসামীদের পক্ষ থেকে পুনরায় সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিনের আবেদন করা হয় এবং জামিননামা দাখিলের বিষয়টি পিরোজপুরসহ সারা দেশের আদালত গুলোতেই প্রচলিত আছে। এতে আসামীদের অযথা খরচ ও হয়রানীর সম্মুখীন হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে দায়রা জজ আদালতে যে জামিননামা দাখিল করা হয়ে থাকে তাসহ নথী বদলী করা হয় এবং ঐ জামিননামা যেহেতু বহাল থাকে, সেহেতু নতুনভাবে জামিনের আবেদন করা বা জামিননামা দাখিল করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। দায়রা আদালতে যে জামিননামা দাখিল করা হয় উহা বাতিল বা বাজেয়াপ্ত না হওয়া পর্যন্ত দায়রা বিভাগের যে আদালতেই মামলা বদলী করা হোক না কেন সে আদালত উহা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করা হয় যে, দায়রা আদালত কর্তৃক বিচারের জন্য প্রস্তুত মামলা দায়রা বিভাগের অন্য আদালতে বদলী করা হলে যে সকল আসামী দায়রা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করে জামিননামা দাখিল করেছেন তাদেরকে পূণরায় বদলীকৃত আদালতে জামিনের আবেদন বা জামিননামা দাখিল করতে হবে না। ইহা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অহেতুক ভোগান্তি লাঘবের নিমিত্তে পিরোজপুরের জেলা জজ মহোদয় কর্তৃক গৃহীত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা দেশের সকল আদালত কর্তৃক অনুসরণযোগ্য মর্মে বিজ্ঞ মহল মনে করে।
বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ গোলাম কিবরিয়ার নির্দেশে মামলার সন ওয়ারী তালিকা প্রস্তুতকরে পুরাতন মামলা নিস্পত্তির নিমিত্ত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সংশ্লিষ্ট বিচারক ও আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করাসহ আরও কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করায় পুরাতন মামলাসহ সকল শ্রেণীর মামলা নিস্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পিরোজপুর জেলা জজশীপে বিচারকের সংখ্যা কম থাকা সত্বেও ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দেড় গুনের বেশী মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা আরো বেড়ে গিয়েছে। জেলা জজশীপে মোট ১১টি বিচারকের পদ থাকলেও বর্তমানে ৯ জন বিচারক কর্মরত আছেন। ৬ টি সহকারী জজ আদালতের মধ্যে ২ টি শূণ্য আছে। একইভাবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বর্তমানে ৪ জন ম্যাজিষ্ট্রেট কর্মরত আছেন। ৪টি জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর পদ শূন্য আছে। পিরোজপুর জেলায় বিচারকদের যে পদগুলো শূন্য রয়েছে তা পূরণ করা হলে মামলা নিস্পত্তির হার দ্বিগুন করে মামলার জট নিরসন করা সম্ভব বলে আশা করেন বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম কিবরিয়া।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...