খুব ছোটবেলায় আব্বু আমার জন্য একটি টিয়া পাখি কিনে দিয়েছিল। খাঁচাবন্দী সে পাখি নিয়েই আমার কাটত সারাটা দিন। খাওয়ানো, গায়ে পানি ছিটানো, কথা শেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা সহ নানা ধরনের আয়োজন ছিল তাকে নিয়ে। সব কিছু মিথ্যে করে দিয়ে একদিন খাবার দেয়ার সময় হাতে কামড় দিয়ে খাঁচা থেকে পালিয়ে যায় সাধের টিয়া। কয়েকদিন খুব কেঁদেছিলাম। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে নিজেকে কান্নার হাতে সপে দিয়েছিলাম। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্বু নতুন একটি টিয়া আমদানি করলেন। এবার খাঁচার সাথে তাকে শিকলও পড়ানো হল। তাকে নিয়েও আগেরটার মত উম্মাদনা শুরু হল আমার। কিন্তু দু মাস যেতে না যেতে সেও আমাকে ফাঁকি দিল। আবারও কান্না পর্বে অংশগ্রহণ করতে হল আমাকে। তখন থেকেই পক্ষী প্রেম উধাউ হয়ে গেল আমার কাছ থেকে।
এরপর পশুপ্রেমে পড়লাম। কুকুর ও বিড়ালের ব্যবস্থা করা হল আমার জন্য। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বাসায় “একটি কুকুর, একটি বিড়াল”- প্রকল্প চালু রয়েছে।
বড়বেলায় এসে ভিন্ন একটি অনুভূতি আক্রমন করলো আমাকে। যে আমি খাঁচায় পাখিকে খাবার দিয়ে পরমানন্দ পেতাম, সেই আমিই খাঁচাবন্দী পাখি দেখে খুব কষ্ট পেতে শুরু করলাম। কাঁটাবন দিয়ে যাওয়ার সময় পাখিগুলো দেখে অনেক সময়ই থেমে গেছি। খুব মনযোগী দর্শক হয়ে তাদের ছটফটানি দেখেছি বহুবার।
আজ আমিও কাঁটাবন থেকে একজোড়া টিয়া কিনে এনেছি। খুব আদর যত্ন করে মোটাতাজা করব। তারপর এক স্নিগ্ধ সকালে বাসার ছাদে গিয়ে তাদের খাঁচামুক্ত করব। মুক্ত হয়ে পাখিটা উড়বে সুন্দর একটি সকালে।
এর চেয়ে মধুর দৃশ্য আর কী হতে পারে!