বিশেষ প্রতিনিধি >
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক আবদুস সালাম হত্যাকারীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেগ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল । এ নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ঢাকাস্থ ভান্ডারিয়াবাসী ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিলের উদ্যোগে সকাল দশটা জাতীয় প্রেসক্লাব এর সামনে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম খানকে গত সোমবার পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সালাম উপজেলার উত্তর শিয়ালকাঠি গ্রামের আবদুর রহমানের (মৃত) ছেলে ও তিন সন্তানের জনক। তিনি সম্প্রতি নিজ ভাণ্ডারিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সালাম এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রয়াত বাবার নামে সম্প্রতি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নিয়োগ-সংক্রান্ত কাজে সোমবার দুপুরে পাশের ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়ায় গ্রামে দূরসম্পর্কের ভাগনি স্কুল শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তারের বাড়িতে যান তিনি। বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগী শাহ আলম হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা সালামকে ডেকে গ্রামের আমতলা ঈদগাহ মাঠের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে পেটানো হয়। পরে সালাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বলে তাঁকে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে হামলাকারীরা। সেখানে হামলাকারীরা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া নাম-ঠিকানা লিখে দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নেওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ ভাণ্ডারিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাঁর জানাজার আয়োজন করা হয়। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এ খবর পেয়ে পুলিশ জানাজাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাজাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল চেয়ারম্যান এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন ভান্ডারিয়া সাংগঠনিক জেলার আহবায়ক শহিদুল ইসলাম কবির নিজ ভান্ডারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম হত্যার তিব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দ্রষ্টান্তমূলক শাস্তির জানিয়েছেন ।
এক বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, নিজ ভান্ডারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম স্যারের ছাত্র হিসেবে আমি তাকে চিনি। তিনি ছিলেন অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের সাথেও কখনো কোনো খারাপ ব্যবহার তিনি করেন নি। আদর, সোহাগ, মায়া-মমতা দিয়ে শিক্ষকতা করে আদর্শ নাগরিক তৈরীতে তিনি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। এমন একজন শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে একা পেয়ে যারা কাপুরোষিতভাবে হামলা করে হত্যা করেছে তারা দেশ ও মানবতার দুশমন, খুনি। এই খুনিদেরকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্তা করতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা প্রতিবাদে বিক্ষোভে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।