ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - বরগুনায় টিকটক লাইকি করতে বাঁধা দেয়ায় স্বামীকে খুন

বরগুনায় টিকটক লাইকি করতে বাঁধা দেয়ায় স্বামীকে খুন


অনলাইন ডেস্কঃ টিকটক ও লাইকির ভিডিও করতে বাধা দেওয়ায়
স্কুলশিক্ষক নাসির উদ্দিনকে হত্যা করে স্ত্রী মিতু ও
তার কথিত প্রেমিক রাজু। হত্যার ৯ মাস পর
কথােপকথনের অডিও রেকর্ডিং ঘেঁটে এবং তদন্ত
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
১৩টি অডিও ক্লিপে মিতু ও রাজুর কথােপকথন
শুনে জানা যায়, ইচ্ছামতাে চলতে এবং টিকটক ও
লাইকির ভিডিও তৈরিতে বাধা দেওয়ায় স্বামীকে
মারতে লােকও ভাড়া করেছিলেন মিতু। এজন্য
ধার করেছিলেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সেই
টাকার পাওনাদারদের চাপে মিতু শঙ্কায় ছিলেন,
তারা বাসায় এলে তাে স্বামী নাসির সব জেনে
যাবেন। মূলত এই শঙ্কা থেকেই প্রতিবেশী ও দূর
সম্পর্কের আত্মীয় কথিত প্রেমিক রাজু মিয়াকে
নিয়ে হত্যার চক্রান্ত করেন মিতু। তাদের ফোন
আলাপ রেকর্ডে স্বামীকে নিরাপদে খুন করতে
পরকীয়া প্রেমিক রাজুর সঙ্গে ফোন আলাপে ছাগল।
মানত করার কথা বলতে শােনা যায় নিহত
শিক্ষকের স্ত্রী ফাতেমা মিতুকে। প্রেমিক রাজুকে
মিতু বলেন, দরগায় মানত করছি আল্লাহ কামড়া
যদি সফল হয়, কোনাে সাক্ষী-প্রমাণ কিছু না।
থাকে, তাহলে হের লগে দরগাই যাইয়া এক
সপ্তাহের মধ্যে একটা ছাগল কুরবানি দিমু, আল্লাহ
কবুল করাে।

হত্যার ১০দিন আগে ১২ই মে রাজুকে ফোনে মিতু
জানান, তিনি খুবই সমস্যায় রয়েছেন,
সহযােগিতা প্রয়ােজন। রাজু তিনি সহযােগিতার
আশ্বাস দিলে মিতু তাকে তার স্বামীকে হত্যার
পরিকল্পনার কথা জানান। পরদিন রাজু ফোন
দেন মিতুকে। ১৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের
আলােচনায় তারা হত্যার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেন।
কীভাবে হত্যা করা হবে তা নিয়েও আলােচনা
করেন তারা। প্রথমে রাজু তাবিজ করে হত্যার
পরামর্শ দেয়। কিন্তু মিতু বলেন, এর আগেও
স্বামীকে হত্যার জন্য তাবিজ কবজ করে ব্যর্থ
হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা
সফল করতে একাধিক পরিচিত ব্যক্তির কাছ
থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ধার করে খরচ করে
ফেলেছেন। ঘুমের ওষুধ বা ইনজেকশনের
মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়ােগ করে হত্যা করা যায়
কি না, এসব নিয়ে কথা বলেন তারা। এক পর্যায়ে
উভয়ে সিদ্ধান্ত নেন, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে
তাকে অচেতন করার পর কম্বলচাপা দিয়ে
শ্বাসরােধে হত্যা করা হবে। ১৪ই মে তিনবার কথা
তাদের। রাজু প্রথমে মিতুকে বুঝিয়ে লন,
হত্যা না করে ধারদেনার টাকা পরিশােধ করলে
হবে কিনা? কিন্তু মিতু রাজি হননি। মিতু বলেন,
টাকা শােধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
নাসিরকে হত্যা করতেই হবে, নাসির বেঁচে
থাকলেই সমস্যা।
পরদিন ১৫ই মে ফের কথা হয় তাদের। রাজুকে
মিতু জানান, ২০ তারিখের আগে পাওনাদারদের
টাকা পরিশােধ করতে হবে। এজন্য রাজুকে দ্রুত
আসতে মিতু তাড়া দিতে থাকেন এবং হত্যার
কাজটি করতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা চান।
রাজু তাকে ‘
শিগগিরই’ করতে পারবেন বলে
নিশ্চিত করে।
১৬ মে আবারও তাদের কথা হয় এবং
পাওনাদাররা টাকার জন্য তাড়া দিচ্ছেন কিনা, তা
জানতে চান রাজু। ১৮ মে ১৯ মিনিট ২৫ সেকেন্ড
কথা হয় রাজু ও মিতুর। এ সময় ফের রাজুকে
বাড়িতে আসার জন্য তাড়া দেন মিতু। মিতু
বলেন, রাসেল দফাদার নামের এক ব্যক্তির
পাওনা টাকা পরিশােধ করতেই হবে। পাওনা
টাকার জন্য বাড়িতে এসে জানালে নাসির খুব
ঝামেলা বাধাবে। তাই যা করার ঈদের আগেই
করতে হবে।
তখন রাজু বলেন, তিনি যেখানে কাজ করেন
সেখান থেকে টাকা নিয়ে সময়মতাে’ বাড়ি
আসবেন। তার পরই হত্যা করা হবে নাসিরকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদের আগেই ২৩শে মে
রাতে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নাসিরকে
কম্বল চাপা দিয়ে শ্বাসরােধে হত্যা করেন মিতু ও
রাজু। হত্যার পর দিন মিতুকে ফোন করে রাজু
জানতে চান, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। মিতু
বলেন, সমস্যা নেই, সব ঠিক আছে।
এরপর ১১ জুন মিতুকে ফোন করে তার সঙ্গে
যােগাযােগ না রাখার কারণ জানতে চান রাজু।
জবাবে মিতু জানান, ঝামেলায় আছেন,
যােগাযােগ রাখা সম্ভব নয়। এরপরের ১৭ মিনিট
২৬ সেকেন্ডের এক রেকর্ডিং শুনে জানা যায়,
কথােপকথনে রাজু মিতুর বিরুদ্ধে কথা না রাখার
অভিযােগ আনেন। একপর্যায়ে মিতু বিরক্ত হয়ে
ফোন কেটে দেন।
মিতু ও রাজুর ফাঁস হওয়া এসব অডিও রেকর্ড
পুলিশের হাতে চলে আসলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি
রাতে আটক হন তারা। পরের দিন নাসিরের ভাই
জলিল বাদী হয়ে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা
করলে উভয়কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির
করে পুলিশ। স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারােক্তিমূলক
জবানবন্দিও দিয়েছে মিতু।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...