দেবদাস মজুমদার : পিরোজপুরের কাউখালীতে রাব্বী মোল্লা নামে এক বখাটে দরিদ্র শারিরীক প্রতিবন্ধী মেধাবি এক কলেজ ছাত্রীকে কাঠের চলা দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। হামলার শিকার কলেজ ছাত্রী রুমা আক্তার গত ১৫দিন ধরে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। বখোটের উত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত ২৭ মার্চ ওই কলেজ ছাত্রী এ হামলার শিকার হন। অতি দরিদ্র ওই কলেজ ছাত্রী উপজেলার আশপর্দি গ্রামের মৃত নৈশ প্রহরী আমীর হোসেন তালুকদারের মেয়ে। মেয়েটি পিতার মৃত্যুর পর টিউশনি করে বরিশাল বিএম করেজে মাস্টার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শেষ বর্ষে লেখাপড়া করে আসছে। আহত রুমা বাগেরহাটের বগা ক্লিনিকে বর্তমানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন।

আহত রুমা জানান, নৈশ প্রহরী পিতার মৃত্যুর পর আমার বিধবা মা হেনোয়ারা বেগম ও ছোট বোন ঐশিকে নিয়ে বড় অভাবের সংসার তাদের। বাবার মৃত্যুর পর আমার দুই বোনের লেখা পড়া বন্ধ হওয়ার পথে তখন নিজে উপজেলা সদরের বাসায় বাসায় টিউশনে করে লেখাপড়া চালাই। বাবা না থাকায় একই গ্রামের রফিক মোল্লার বখাটে ছেলে রাব্বী মোল্লা পথে আসতে যেতে রুমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত শুরু করে। গত ২৭ মার্চ টিউিশনি করে বাড়িতে ফিরছিল। এসময় বখাটে রাব্বী তার পিছু নেয় । বাড়ির কাছাকাছি যেতে ওই বখাটে কু প্রস্তা দিয়ে মেয়েটিরওড়না টেনে নেয়। এসময় রুমা প্রতিবাদ জানালে কাঠের চলা দিয়ে বখাটে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ডান পা ভেঙ্গে দেয়। রুমার আর্ত চিৎকারে মা হেনোয়ারা বেগম এগিয়ে আসলে বখাটে তাকেও মারধর করে। স্থানীয়রা আসলে বখাটে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে কাউখালী হাসপাতালে পরে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চারদিন চিকিৎসা শেষে বাগেরহাটে বগা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় তাকে। অর্থাভাবে এখন চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে কলেজ ছাত্রীর পরিবার। এঘটনার বিচার চেয়ে ঘটনার দিনই কাউখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিত মেয়েটির ভাই সুমন তালুকদার। গত ৩১ মার্চ কাউখালী থানায় মামলাটি নথিভূক্ত হয়। তবে বখাটেকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিকে এ নির্দয় ঘটনা করোনা সংকট কালে ধামাচাপা পড়ে থাকে। এদিকে এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে নিন্দার ঝড় ওঠে।
আজ শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট বগা ক্লিনিকে চিকিৎসাধিন আহত রুমা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি লেখা পড়া করে নিজের পায়ে দাড়াতে চাইছিলাম কিন্তু বখাটে আমার জীবনটারে শ্যাষ কইরা দিছে। আমি বাম পা জন্ম থেকে খুড়িয়ে হাঁটি। এখন সে আমার ডান পা পিটিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। বখাটের পাঠানো এক যুবক হাসপাতালে এসেও হুমকী দিয়া গেছে।
আহত রুমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমার চিকিৎসার পয়সার বড় অভাব। মা ১২ হাজার টাকা ঋন নিয়ে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। চিকিৎসায় ৬০/৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। আমি বাঁচতে চাই আপনারা আমারে বাঁচান। আমি লেখা পড়া করে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই । অভাবী পরিবারে সাহায্য করতে চাই।
আহত কলেজ ছাত্রীর শিক্ষক মোতালেব ফারুকী বলেন, মেয়েটি শারিরীক প্রতিবন্ধী। তবে খুব ভালো ও মেধাবী ছাত্রী।অনেক কষ্ট করে টিউশনি করে সংসার চালায়। বাম পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা মেয়েটির ডান পা টাও ভেঙে দিল বখাটেরা।ঐ বখাটের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি করছি।
কাউখালী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জনান, করেজ ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করার খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ ঘটনায় মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের মামলা নেওয়া হয়েছে। করোনা সংকটে দরিদ্র ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবারে প্রশাসনের পক্ষ হতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্চে। বখাটে পলাতক তাকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা অব্যহত।
কাউখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোছা খালেদা খাতুন রেখা বলেন,করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রশাসনিক ব্যস্ততার ভিতরেও আমরা মেয়েটির পরিবারের খোঁজ রাখছি। অভিযুক্ত বখাটেকে দ্রুত গ্রেফতারে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা আহত ছাত্রী রুমার পরিবারের পাশে আছি।
অসহায় মেধাবি ছাত্রী রুমাকে সহায়তা করতে চাইলে
মোবাইলÑ ০১৯৩৬৯৭৫৪০৩